বরিশালে বিএনপি কর্মীর মার্কেটের ভাড়া নিচ্ছেন আওয়ামী লীগ নেতারা

“বাজার কমিটি মার্কেটের কোনো পক্ষকে ভাড়া নিতে নিষেধ করেছে। বিষয়টির সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত একজনকে ভাড়া নেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।”

বরিশাল প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 March 2023, 01:47 PM
Updated : 12 March 2023, 01:47 PM

বরিশালের গৌরনদীতে বিএনপি কর্মীর মার্কেটের ভাড়া উত্তোলন করছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। 

হুমকির মুখে মার্কেটের দুই ব্যবসায়ী ফেব্রুয়ারি মাসের ভাড়া আওয়ামী লীগ নেতাদের হাতে তুলে দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি কর্মী আক্কেল আলী। 

তিনি গৌরনদী খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের বাকাই বাজারের (ঘোষের হাট) ‘সর্দার প্লাজা’ নামে তিনতলা মার্কেটের মালিক। 

আক্কেল আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সোনালী ব্যাংক থেকে ৪৫ লাখ টাকা সিসি ঋণ নিয়ে ছয়তলা ভিতের উপর তিনতলা মার্কেট নির্মাণ করেছেন। মার্কেটে সোনালী ও ইসলামী ব্যাংকের শাখা এবং ইসলামী ব্যাংকের এটিএম বুথসহ ৪০টি দোকান আছে। প্রতিমাসে মার্কেট থেকে ৭০ হাজার টাকা ভাড়া আসে। এ ভাড়া থেকে তিনি ঋণের কিস্তি পরিশোধ করেন। এ ছাড়াও সংসারের ব্যয় নির্বাহ করেন। 

তিনি বলেন, “১১ ফেব্রুয়ারি বিএনপির ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রা কর্মসূচি ছিলো। আগের দিন সন্ধ্যায় মাগুড়া দাখিলিয়া মাদ্রাসায় বিএনপির নেতাকর্মীরা প্রস্তুতি সভা করেন। এ খবর পেয়ে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা ফরহাদ মুন্সীর নেতৃত্বে দুই প্রাইভেটকার ও ১৫-২০টি মোটরসাইকেলে করে রামদা, হকিস্টিক, লোহার পাইপ ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে তাদের ওপর হামলা করে। তখন বিএনপি নেতাকর্মীরা পালিয়ে যায়। পরে আওয়ামী ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা বাকাই বাজারে মিছিল করে।

“মিছিল শেষে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ফরহাদ মুন্সী এসে ঘোষণা দেন সর্দার মার্কেট বিএনপি কর্মী আক্কেল আলীর। এ মার্কেট আজ থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে। এভাবে চার-পাঁচদিন বন্ধ থাকার পর গৌরনদী পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র হারিচুর রহমান হারিচ বাকাই বাজারে এসে মার্কেটের দোকানিদের নিয়ে সভা করেন। এ সময় তিনি শর্ত দেন দোকান ভাড়া তার কাছে দিতে হবে। যারা রাজি আছেন তারা সাদা কাগজে স্বাক্ষর দেন। ব্যবসায়ীরা বাধ্য হয়ে সাদা কাগজে স্বাক্ষর দিয়ে দোকান খুলেন।” 

আক্কেল আলী বলেন, প্রতি মাসের ১০ তারিখ দোকান ভাড়া নেওয়া হয়। সেই অনুযায়ী, খাঞ্জাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মতলেব মাতুব্বর এসে ভাড়া চান। সেদিন কয়েকজন ভাড়া দিয়েছেন। রোববার বেলা ১১টার দিকে মতলেব মাতুব্বর এসে আবার হুমকি দিয়েছেন, যারা ভাড়া দেননি। তাদের যদি কিছু হয়, তার দায়-দায়িত্ব তিনি নেবেন না। 

আক্কেল জানান, এরপর দুপুরে ব্যবসায়ীরা দোকান বন্ধ করে চলে গেছেন। 

ব্যবসায়ী বাবুল পালোয়ান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি দুই বছর আগে আক্কেল আলীর কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু করেছি। গত দুই বছর আক্কেল আলীকে ভাড়া পরিশোধ করছি। 

“আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে ঝামেলা শুরু হলে আমার দোকান বন্ধ করে দেয়। তখন সাদা কাগজে স্বাক্ষর দিয়ে দোকান খুলছি। দোকান খুলে দেওয়ার সময় আওয়ামী লীগ নেতা মতলেব তালুকদারকে ভাড়া দিতে নির্দেশ ছিল। আওয়ামী লীগ নেতা ফেব্রুয়ারি মাসের ভাড়া নিতে এলে এতদিন ভাড়া দেইনি, কিন্তু শনিবার আবার দোকান বন্ধের হুমকি দেওয়ায় তাকে ভাড়া পরিশোধ করেছি।” 

উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা ফরহাদ মুন্সী এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “বাজারের সভাপতি মতলেব মাতুব্বরের সঙ্গে জমি নিয়ে ঝামেলা রয়েছে। তাই বাজার কমিটি মার্কেটের কোনো পক্ষকে ভাড়া নিতে নিষেধ করেছে। বিষয়টির সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত একজনকে ভাড়া নেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।” 

এ বিষয়ে খাঞ্জাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মতলেব মাতুব্বরের মোবাইল ফোনে কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে অন্য একটি সংবাদ মাধ্যমের কাছে তিনি বলেছেন, দোকানদাররা স্বেচ্ছায় তাকে ভাড়া দিচ্ছেন। 

গৌরনদী পৌর মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হারিচুর রহমান হারিচের মোবাইল নম্বরে ফোন করে এবং খুদে বার্তা পাঠিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি।