যুদ্ধের মধ্যে রাখাইনে তেল, ওষুধ ও খাদ্যপণ্যের সংকট দেখা দেওয়ায় একটি চক্র পাচারে সক্রিয় হয়ে উঠেছে।
Published : 13 Feb 2024, 04:56 PM
কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলায় ভোজ্য তেল, ওষুধ ও খাদ্যপণ্যসহ একটি গাড়ি জব্দ করা হয়েছে; যেগুলো মিয়ানমারে পাচারের উদ্দেশ্যে মজুদ করা হয়েছিল বলে দাবি করছে র্যাব।
র্যাব সদর দপ্তরের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন মঙ্গলবার দুপুরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, আগের রাতে টেকনাফ সদর ইউনিয়নের হাতিয়ারঘোনা এলাকা থেকে এসব নিত্যপণ্য উদ্ধার করা হয়।
এ সময় পাচারকাজে জড়িত থাকার অভিযোগে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হলেন- হাতিয়ারঘোনা এলাকার আবুল বশরের ছেলে আব্দুল মান্নান (২৪) এবং একই এলাকার হাছন আলীর ছেলে আলী হোসেন (৪৫)। তাদের বিরুদ্ধে টেকনাফ থানায় মামলা হয়েছে।
কমান্ডার আল মঈন বলেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে আরকান আর্মির চলমান সংঘাতের জেরে দেশটির রাখাইন রাজ্যের বেশ কিছু এলাকা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এতে ওই রাজ্যে জ্বালানি ও ভোজ্য তেল, ওষুধ ও খাদ্যপণ্যসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। সংকটজনক এ পরিস্থিতিতে অসাধু ব্যবসায়ী ও সংঘবদ্ধ একটি চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে।
“সোমবার রাতে হাতিয়ারঘোনা এলাকায় আবুল বশরের বাড়িতে সংঘবদ্ধ পাচারকারি চক্রের কয়েকজন সদস্য বেশকিছু পণ্য প্রতিবেশী দেশে পাচারের জন্য মজুদ করেছে খবরে র্যাবের একটি দল অভিযান চালায়। এ সময় টের পেয়ে ৪-৫ জন দৌঁড়ে পালানোর চেষ্টা করলে ধাওয়া দিয়ে দুইজনকে আটক করা হয়।”
পরে বশরের মুরগির খামারে মজুদ করা ৪ হাজার ৪৭০ লিটার সয়াবিন তেল, ৫০০ কেজি ময়দা ও ১ লাখ ৩৬ হাজার ৫৫০টি বিভিন্ন ধরনের ওষুধ পাওয়া যায় বলে জানান র্যাবের এ কর্মকর্তা।
গ্রেপ্তারদের বরাতে তিনি বলেন, তারা সীমান্তের বিভিন্ন চ্যানেল দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারে তেল, ওষুধ ও খাদ্যপণ্য পাচার করে আসছিল। এসব নিত্যপণ্যের বিনিময়ে তারা বাংলাদেশে মাদকের বড় বড় চালান নিয়ে আসতো।
এ পরিস্থিতিতে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারানোর পাশাপাশি দেশের বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হয়েছে জানিয়ে আল মঈন বলেন, “রাখাইন রাজ্যের সংকটজনক পরিস্থিতিতে র্যাব সীমান্তের বিভিন্ন এলাকায় নজরদারি বৃদ্ধি করেছে।”
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবরের শেষ দিক থেকে মিয়ানমারের তিনটি জাতিগত বিদ্রোহী বাহিনী একজোট হয়ে জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে সমন্বিত আক্রমণ শুরু করে। বাহিনীগুলো হল- তা’আং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি-টিএনএলএ, আরাকান আর্মি-এএ এবং মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স আর্মি-এমএনডিএএ।
তারা শান, রাখাইন, চীন ও কেয়াহ রাজ্যে লড়াই চালাচ্ছে। বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ও সেনাপোস্ট দখল করে ইতোমধ্যে তারা সাফল্য দেখিয়েছে।
আরাকান আর্মি (এএ) এই জোটের অন্যতম অংশ। মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য রাখাইনের সংখ্যালঘু নৃগোষ্ঠীর একটি সশস্ত্র বাহিনী এটি। তারা রাখাইনের বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে লড়াই করছে।
রাখাইনে সেনা ও বিদ্রোহীদের মধ্যে লড়াইয়ের প্রভাব পড়ছে সীমান্তের এপারের জনগোষ্ঠীর মধ্যেও।
নদী পথে বাণিজ্য প্রায় স্থবির
সীমান্তে সংঘাতময় পরিস্থিতিতে প্রায় আড়াই মাস ধরে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে নদী পথে বাণিজ্য প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে।
মিয়ানমার থেকে মাছ, আদা, পেঁয়াজ, সুপারি, কাঠ, বরই, আচার, শুটকিসহ নানা পণ্য আমদানি হয়ে থাকে। বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হয় আলু, গেঞ্জি, প্লাস্টিক ও অ্যালুমিনিয়াম জিনিসপত্র, গাজী ট্যাংক, পটেটো চিপস ইত্যাদি।
টেকনাফ স্থলবন্দর পরিচালনাকারী ইউনাইটেড ল্যান্ড পোর্ট লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) জসীম চৌধুরী রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মিয়ানমারের যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে। পণ্য আনা-নেওয়া করা যাচ্ছে না। এখানকার ব্যবসা-বাণিজ্য মূলত নাফ নদী দিয়ে ছোট ছোট কাঠের নৌকায় পরিচালিত হয়।
আড়াই মাসে ২৫ থেকে ৩০টি নৌকা এসেছে। অথচ আগে প্রতি মাসে দেড়শ থেকে ২০০ নৌকা চলাচল করত। এখন তো যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে অনেকদিন ধরেই বন্ধ।
২০২২ সালের অগাস্টের শেষ ও সেপ্টেম্বরের শুরুতে মিয়ানমারের যুদ্ধবিমান ও ফাইটিং হেলিকপ্টার থেকে বাংলাদেশের সীমানার ভেতর গোলাবর্ষণের ঘটনা ঘটেছিল। অনেক মানুষ আতঙ্কে সীমান্ত ছেড়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছিল। তখন দেশটির রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে এর প্রতিবাদ, নিন্দা ও উদ্বেগের কথা জানিয়েছিল ঢাকা।
আরও পড়ুন:
মিয়ানমারে যুদ্ধ: স্থল সীমান্তের পাশাপাশি নৌপথেও নিরাপত্তা জোরদার