Published : 17 Jun 2023, 01:12 AM
কোরবানির ঈদের আগে দেশের কয়েকটি জেলায় গরুর লাম্পি স্কিন রোগ ছড়িয়ে পড়ায় ভয়ের মধ্যে পড়েছেন খামারিরা। কিছু জায়গায় গরু মারা যাওয়ার খবরও জানিয়েছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।
দুই থেকে আড়াই মাসে এই রোগে সিলেটে ২০০-২৫০, বরগুনায় ২০-২৫, নেত্রকোণায় ৭-৮টি গরু মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এর বাইরে ময়মনসিংহ, যশোর ও শেরপুরেও গরু আক্রান্ত হচ্ছে।
আমদানি করা পশুর মাধ্যমে প্রায় এক দশক আগে প্রথম দেশে রোগটি শনাক্ত করা হয়; তবে গত পাঁচ বছর ধরে এর প্রাদুর্ভাব বেড়েছে বলে জানান প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
তারা বলছেন, লাম্পি স্কিন রোগ বা এলএসডি ভাইরাসে আক্রান্ত গরু দিয়ে কোনো অবস্থাতেই কোরবানি দেওয়া চলবে না।
এ রোগে আক্রান্ত পশুর মধ্যে ২০ শতাংশ মারা যায়; বাকি ৮০ শতাংশ ভালো হয়ে গেলেও রোগটির নির্দিষ্ট কোনো ভ্যাকসিন বা চিকিৎসা নেই।
মূলত গরু ও খামারকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য খামারিদের পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। তবে এ রোগে মানুষের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা নেই।
যদিও খামারিদের অভিযোগ, তারা এ ব্যাপারে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পর্যাপ্ত সহযোগিতা পাচ্ছেন না।
খামারিরা জানাচ্ছেন, গরুর শরীর প্রথমে গরম হয়ে জ্বর উঠে যায়। তারপর শরীরের কয়েক জায়গায় ছোট ছোট গুটি উঠতে শুরু করে; যা একপর্যায়ে ধীরে ধীরে সারা শরীরেই ছড়িয়ে পড়ে। মাথা, ঘাড় ও পায়ে বেশি দেখা দেয়। এ সময় গরুর মুখ দিয়ে লালা পড়া শুরু হয় এবং গরুর খাবারে অনীহা দেখা দেয়, এতে গরু দুর্বল হয়ে পড়ে।
স্থানীয়ভাবেই অনেক খামারি গরুর চিকিৎসা করান; কিছু ক্ষেত্রে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়েও নিয়ে যান। কিন্তু কিছু গরু মারা যাচ্ছে। এ ছাড়া অনেক গরু অসুস্থ থাকায়, বাকি পশুদের নিয়ে চিন্তায় আছেন খামারিরা।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সবশেষ হিসাবে, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে মোট গরুর সংখ্যা ছিল দুই কোটি ৪৭ লাখ।
‘চাক্কা চাক্কা লইয়া ফুইট্যা গেছে’
নেত্রকোণা জেলায় অনেক গরু লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হয়েছে বলে খামারিরা জানিয়েছেন।
জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, জেলায় গরু রয়েছে প্রায় ছয় লাখ। এর মধ্যে গত দুই মাসে প্রায় সাত শতাংশ গরু আক্রান্ত হয়েছে লাম্পি স্কিন রোগে। এই হিসাবে প্রায় ৪২ হাজার গরু আক্রান্ত হয়েছে।
সংক্রমণ রোধে প্রাণিসম্পদ বিভাগ থেকে ১২ হাজার ৭০০ গরুর ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। প্রচারপত্র বিতরণ করা হয়েছে পাঁচ হাজার আর গত সাত মাসে উঠান বৈঠক করা হয়েছে ৬৩২টি।
তবে কোনো গরু মারা যাওয়ার তথ্য নেই প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে।
সদর উপজেলার গিডুরপাড়া গ্রামের প্রান্তিক চাষি মোহাম্মদ শামছুদ্দিনের গোয়ালে থাকা চারটি গরুর মধ্যে দুটিরই ঘা হয়। তিনি তার গরুগুলোকে বাঁচাতে নানা চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
শামছুদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হঠাৎ কইরা আমার চারডা গরুর মধ্যে দুইডার মধ্যে লাম্পি অইয়া চাক্কা চাক্কা লইয়া ফুইট্যা গেছে। ফুইট্যা গিয়া রক্ত আইতাছে।
“এইটির মধ্যে লেপতানি গুডা (ন্যাপথলিন) নারকেলি তেল দিয়া ভিজায়া ভিজায়া রাখতাছি। যাতে মাছ-টাছি না বয়। পোঁক না ফালায়। ১০-১২ হাজার টেহা খরচ করছি এইডির পাছে। এ ছাড়া তো নগদ আরও আনতাছি। এই টেহা খালি ডাক্তাররেই দিছি।
গ্রামে ৭-৮টি গরু লাম্পি রোগে মারা গেছে জানিয়ে শামছুদ্দিন বলেন, “আমরারে যদি সরকারি ডাক্তারে সহযোগিতা করত তাইলে তো একটু উপকার পাইলাময়। সরকারি কোনো উপকার পাইতাছি না। ডাক্তার আসতাছে না।”
একই গ্রামের খামারি মজিবুর রহমান জানান, তার নয়টি গরুর মধ্যে চারটিই আক্রান্ত। এর মধ্যে কয়েকটি ঈদের জন্যও প্রস্তুত করেছিলেন। কিন্তু এখন বেকায়দার পড়েছেন।
মজিবুর রহমান বলেন, “তিনটা গরু রাখছিলাম যে, ঈদে বিক্রি করব। রেনাফেনা (ঋণ) পরিষ্কার করব। গিরস্থি করব। এখন আমি কোনোটাই পারতাছি না। প্রাণিসম্পদ অফিস থেইক্যা কোনো সাহায্য-সহযোগিতাই পাইতাছি না। গ্রামের চিকিৎসক দিয়া চিকিৎসা করাইছি। কোনো লাভ নাই।
“এখন তো মনে হইতাছে, আমরার গরু বেচতাম পারতাম না। খুবই সমস্যায় পইড়া আছি। কী করবাম নাম করবমা পথই খুঁইজ্যা পাইতাছি না।”
কৃষক জহিরুল ইসলাম বলেন, “শুরুতে শুধু একটা গুটলি অইছে। পরে ক্রমে ক্রমে বাড়ছেই। ৪-৫ দিন লাগাত হালকা কিছু খাইছে। ঠ্যাংডি (পা) এত মোটা অইয়া ফুলছে। পরে গরুটা মাটিতে পইর্যা গেছেগা। ৩-৪ দিন পইড়্যা থাকার পরে নেত্রকোণা বড় ডাক্তারের কাছে লইয়া গেছি। পরে ইনজেকশান দিছে।
“দুইদিন একটু ভালা গেছে। মাথাটা তুইল্যা ভাসাইছে। খাওয়া-খাদ্যও একটু খাইছে। এইবায় তিনদিন ওষুধ চলার মধ্যেই আস্তে আস্তে নিস্তেজ অইয়া পড়ে। পরে আর কিছু খাইছে না। সারাশরীর ফুইট্যা গেছেগা। গন্ধে ভইরা গেছেগা। এইবায় ২০ দিনের মতো থাইক্যা মারাই গেছে। পাশের বাড়িতে দুইটা মারা গেছে।
আক্রান্তের এক মাসের মধ্যে গরু মারা যাচ্ছে এবং প্রচুর দুর্গন্ধ হচ্ছে বলে জানান জহিরুল।
চারটি গরুর মধ্যে দুটি গরু আক্রান্ত হয়েছে জানিয়ে শিল্পী আক্তার বলেন, “ডাক্তার যদি গ্রামে পাঠাইতো। চাইরোদিক দিয়া গরু মরতাছে। আমার দুইটা গরু আক্রান্ত অইছে। অহন আমরার কিবায় চলন কিছু বুঝতাছি না। আটটা গরু যে মরছে হেইডি দেইখ্যাতো আমরার ভয় হামাইছে।
“যেই যেইডা কইতাছে হেইডাই আনায়া দিতাছি। ডাক্তর আনাইতাছি। ঋণ কইর্যা ট্যাহা-পয়সা দিতাছি। আমরা তো কইছিলাম গরু বেইচ্যা ঋণদফা দিয়াম। অহন তো আমরার এই অবস্থা। কিবায় কী করাম।”
কৃষক নুরুজ্জামান বলেন, “গরু হাসপাতালে লইয়া গেলাম। হাসপাতালের ডাক্তার লেইখ্যা দিছে, ওষুধ খাওয়াইলাম, ভ্যাকসিন দিলাম, কোনো কাম অইলো না। গরুর ঘা অইয়া গেছে। কোরবানির ঈদে গরু বেচলাময়। ঋণফিন দিলাময়। কোনো কিছুই করতাম পারতাম না।
সিলেট জেলায় সাম্প্রতিক সময়ে লাম্পি স্কিন রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। তবে কানাইঘাট উপজেলায় এ রোগে আক্রান্ত গরুর সংখ্যা বেশি। উপজেলার লক্ষ্মীপ্রসাদ পশ্চিম, লক্ষ্মীপ্রসাদ পূর্ব, দিঘীরপাড় পূর্ব, সাতবাঁক, পৌরসভা এলাকায় একাধিক গরুর মালিক ও খামারিরা এ তথ্য জানিয়েছেন।
তারা বলছেন, প্রায় আড়াই মাস আগ থেকে গরুর শরীরে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ে। অনেক ক্ষেত্রে গরুর চামড়ায় লালচে গর্ত দেখা দেয় এবং চামড়া খসে পড়ে। চিকিৎসা করলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গরু সুস্থ হতে কয়েক মাস সময় লাগে।
সিলেট জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মু. আলমগীর কবির জানান, জেলার কোম্পানীগঞ্জ, কানাইঘাট, গোয়াইনঘাট উপজেলার ছোট আকারের বা বাছুর গরুগুলো।
“আমরা এখনও পরোপুরি তালিকা করিনি। তবে তিন উপজেলায় ২০০ থেকে ২৫০টি গরু মারা গেছে। কোরবানিতে এর কোনো প্রভাব পড়বে না।”
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোহাম্মদ লুৎফুর রহমান বলেন, এখন সেখানে আক্রান্ত গরু নেই। তবে মার্চ-এপ্রিলে এ রোগে আক্রান্ত দুই হাজার গরুকে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করা হয়েছে। গরু মারা গেছে কিনা সেটা তার জানা নেই।
তবে ৮-১০টি গরু মারা যাওয়ার তথ্য জানিয়েছেন গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা জামাল খান। তিনি জানান, উপজেলায় ৫ থেকে ৭ হাজার গরু লাম্পিতে আক্রান্ত হয়েছিল। বর্তমানে আক্রান্তের সংখ্যা আগের থেকে কমে গেছে।
গত কয়েক মাসে এই রোগে বরগুনা জেলাতেও ২০ থেকে ২৫টি গরু মারা গেছে বলে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
জেলায় মোট গরুর সংখ্যা তিন লাশ ১০ হাজার ১৭৭টি আর খামারি আছেন দুই ২২৫ জন। এর মধ্যে কোরবানির পশুর সংখ্যা প্রায় ৩৫ হাজার। জেলায় চাহিদা রয়েছে প্রায় সাড়ে ৩৩ হাজারের।
সদর উপজেলার সোনাখালী গ্রামের নাসির উদ্দিন জানান, লাম্পি রোগে আক্রান্ত হয়ে তার দুটি গরুর মধ্যে একটি মারা গেছে। আরেকটি এখনও অসুস্থ। খুব ক্ষতির মুখে পড়েছেন বলে জানান তিনি।
একই গ্রামের প্রান্তিক চাষি ফারুক হোসেনও জানান, তার একটি গরু আক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু চিকিৎসা দিয়েও সুস্থ করতে পারছেন না।
বরগুনা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, “সাধারণত তিন মাস থেকে এক বছর বয়সের গরু বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। ২০ ভাগ গরু মারা যাচ্ছে। আর ৮০ ভাগ সুস্থ হয়ে উঠছে। তবে একটু সময় লাগছে।”
সুনামগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জান জানান, জেলায় পাঁচ লাখের মত গরু আছে। এর মধ্যে মাঝেমধ্যে উপজেলা পর্যায়ে দুই-একটি গরু লাম্পি স্কিন ডিজিজে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়।
রোগের লক্ষণ
• আক্রান্ত গরু প্রথমে জ্বরে আক্রান্ত হয় এবং খাবার রুচি কমে যায়।
• জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে মুখ ও নাক দিয়ে লালা বের হয়। পা ফুলে যায়। সামনের দু’পায়ের মাঝখানে পানি জমে যায়।
• শরীরের বিভিন্ন জায়গা চামড়া পিণ্ড আকৃতি ধারণ করে, লোম উঠে যায় এবং ক্ষত সৃষ্ট হয়। ধারাবাহিকভাবে এই ক্ষত শরীরের অন্যান্য জায়গা ছড়িয়ে পড়ে।
• ক্ষত মুখ, পা ও অন্যান্য জায়গা ছড়িয়ে পড়তে পারে।
• ক্ষত স্থান থেকে রক্তপাত হতে পারে। শরীরে কোথায় ফুলে যায় যা ফেটে টুকরা মাংসের মতো বের হয়ে ক্ষত হয়, পুঁজ বের হয়।
• পাকস্থলী অথবা মুখের ভেতরে সৃষ্ট ক্ষতের কারণে গরু পানি পানে অনীহা প্রকাশ করে এবং খাদ্য গ্রহণ কমে যায়।
প্রতিকারে করণীয়
• যে কোনো রোগের চিকিৎসার চেয়ে প্রতিকার সব সময় অধিক গুরুত্বপূর্ণ এবং অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক বলে মনে করেন প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা।
• আক্রান্ত গরুকে নিয়মিত এলএসডি ভ্যাকসিন দেওয়া। তবে এই ভ্যাকসিন সহজলভ্য নয়।
• খামারের ভেতরের এবং আশপাশের পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা যেন মশা-মাছির উপদ্রব নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
• আক্রান্ত খামারে যাতায়াত বন্ধ করা এবং আক্রান্ত খামার থেকে আনা কোনো সামগ্রী ব্যবহার না করা।
• আক্রান্ত গরুকে শেড থেকে আলাদা স্থানে মশারি দিয়ে ঢেকে রাখা যেন মশামাছি কামড়াতে না পারে। কারণ আক্রান্ত গরুকে কামড়ানো মশামাছি সুস্থ গরুকে কামড়ালে এই রোগের সংক্রমণ হতে পারে।
• আক্রান্ত গভীর দুধ বাছুরকে খেতে না দিয়ে ফেলে দিয়ে মাটি চাপা দেওয়া।
• আক্রান্ত গরুর পরিচর্যা শেষে একই পোশাকে সুষ্ঠু গরুর মধ্যে প্রবেশ না করা।
• আক্রান্ত গরুর খাবার বা ব্যবহার্য কোনো জিনিস সুস্থ গরুর কাছে না আনা।
• ক্ষতস্থান টিনচার আয়োডিন মিশ্রণ দিয়ে পরিষ্কার রাখা।
‘কোরবানি থেকে সাবধান’
লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত গরু দিয়ে কোনো অবস্থাতেই কোরবানি দেওয়া যাবে না বলে সতর্ক করে দিয়েছেন প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা।
বরগুনা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, “কোরবানির জন্য অবশ্যই সুস্থ ও সবল গরুর লাগবে। লাম্পি স্কিন রোগাক্রান্ত গরু দিয়ে কোরবানি চলবে না। এতে মানবশরীরে মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি হবে।
তিনি বলেন, “এরই মধ্যে আমরা স্থানীয় সব জনপ্রতিনিধি ও কোরবানির পশুর হাটের ইজারাদারকে জানিয়েছি, হাটে কেউ যেন লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত গরু আনতে না পারে। আমরা নিজেরাও এ ব্যাপারে টিম করেছি। তারা গরুর হাটে যাচ্ছে। ঈদের বাজারও তারা পর্যবেক্ষণ করবে।”
বাজারে ভ্যাকসিন সংকট
লাম্পি রোগের নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা না থাকলেও গরুকে মূলত জলবসন্তের টিকাই দেওয়া হয়।
কিন্তু এই মুহূর্তে বাজারে ভ্যাকসিনের সংকট চলছে বলে জানান বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইমরান হোসেন।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সরকার এই মুহূর্তে সীমান্ত চেক দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। ভারত থেকে কিছু গরু ঢুকছে। ওইসব গরুর মাধ্যমে এই রোগটা ছড়াচ্ছে।
“দ্বিতীয়ত কিছু বেসরকারি কোম্পানি লাম্পি রোগের ভ্যাকসিন আমদানি করে থাকে। গত ছয় মাস ধরে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের এসব ভ্যাকসিন আমদানির এনওসির কাগজ আটকা আছে। সে কারণে এই মুহূর্তে বাজারে ভ্যাকসিনও পর্যাপ্ত নেই“, যোগ করেন ইমরান।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের নিজস্ব ভ্যাকসিনের পাশাপাশি আমদানি করা ভ্যাকসিনও আছে উল্লেখ করে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক মোহাম্মদ রেয়াজুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের নিজস্ব ভ্যাকসিনের মাধ্যমে এই রোগ প্রায় শূন্যের কোটায় চলে এসেছিল। তখন ভ্যাকসিন আমদানির প্রয়োজন হয়নি। এখন আবার প্রয়োজন হচ্ছে, আমদানিরও সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।”
সঠিক চিকিৎসা বা টিকা নেই
গতবারও গরুটির প্রাদুর্ভাব ছিল, এ বছর তার তুলনায় কম জানিয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক মোহাম্মদ রেয়াজুল হক জানান, “এই রোগের চিকিৎসা হচ্ছে শুধু পেইনকিলার খেতে হবে। অতিরিক্ত কোনো ওষুধ দেওয়া যাবে না। আরও কিছু পরিচর্যা আছে যেগুলো আমাদের অফিসাররা প্রান্তিক পর্যায়ে পরামর্শ আকারে দিচ্ছেন।”
নেত্রকোণা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোহাম্মদ ওয়াহেদুল আলম জানান, “সারাদেশেই লাম্পি স্কিন ডিজিজে গরু আক্রান্ত হচ্ছে। আশা করছি, বৃষ্টি হলে মশা-মাছি কিছুটা কমবে। এতে আক্রান্তের হার কিছুটা কমে আসবে।
“এটা ভাইরাল ডিজিজ। এইটার আসলে কোনো চিকিৎসা হবে না। প্রতিরোধ করতে হবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, মশা-মাছির আক্রমণ থেকে রক্ষায় গোয়ালঘর পরিষ্কার রাখতে হবে। পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে।”
প্রাণিচিকিৎসক আরও বলেন, “যখন ইনফেকশান হয়ে যায় তখন সেকেন্ডারি চিকিৎসার জন্যে অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যান্টিহিসটামিন চিকিৎসা দেওয়া হয়। কিন্তু নির্দিষ্ট করে লাম্পি স্কিনের জন্যে কোনো চিকিৎসা দেওয়া হয় না।”
কানাইঘাট উপজেলা প্রাণিসম্পদ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নবনীতা সরকার বলেন, লাম্পি স্কিন রোগের সঠিক কোনো চিকিৎসার ওষুধ বা টিকা নেই। উপজেলা পর্যায়ে এই রোগের ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। এ ছাড়া আক্রান্ত গরুর চিকিৎসায় তারা প্যারাসিটামল ও ওরাল ওষুধ দিয়ে থাকেন।
অসুস্থ গরু সুস্থ হতে অন্তত ৩ থেকে ৪ মাস সময় লাগে জানিয়ে নবনীতা মালিকদের ধৈর্য্য ধরার পাশাপাশি গরুর সঠিক সেবা করার আহ্বান জানান।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন নেত্রকোণা প্রতিনিধি লাভলু পাল চৌধুরী, সিলেট প্রতিনিধি বাপ্পা মৈত্র, বরগুনা প্রতিনিধি মনির হোসেন কামাল, সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি শামস শামীম এবং জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক ফয়সাল আতিক।]