ইতালির পথে ট্রলারডুবি: ফরিদপুরের ৪ যুবক নিখোঁজের খবর

চামেলী বেগম বলেন, ৯ মার্চ সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ছেলের সঙ্গে তার সবশেষ কথা হয়।

শেখ মফিজুর রহমান শিপনফরিদপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 March 2023, 01:55 PM
Updated : 15 March 2023, 01:55 PM

দালালকে টাকা দিয়ে অবৈধভাবে লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগরে ট্রলারডুবিতে ফরিদপুরের চার যুবক নিখোঁজ হয়েছেন বলে পরিবার জানিয়েছে।

এ ঘটনায় ফরিদপুরের দুই যুবককে জীবিত উদ্ধার করা গেলেও চার যুবকের পরিবারের সদস্যরা চরম উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্য দিয়ে সময় পার করছেন। তারা আট থেকে ১০ লাখ টাকা খরচ করে দালাল চক্রের মাধ্যমে অবৈধভাবে ইতালি যাওয়ার উদ্দেশে দেশ ছেড়েছিলেন।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, রোববার লিবিয়া থেকে ৩০ ব্যক্তিকে নিয়ে ইতালি অভিমুখে যাত্রা করা নৌকাটি বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে পড়ে উল্টে যায়। এদের মধ্যে ১৭ জনকে সোমবার পর্যন্ত উদ্ধার করা হয়; যাদের সবাই অভিবাসনপ্রত্যাশী বাংলাদেশি নাগরিক। তাদের সিসিলির শহর পোজালোতে রাখা হয়েছে।

এদের মধ্যে নগরকান্দার ডাঙ্গী ইউনিয়নের বিলগোবিন্দপুর গ্রামের নান্নু সরদারের ছেলে হৃদয় সরদার (২৫) এবং আহমেদ ফরাজীর ছেলে রাসেল ফরাজী (২০) নামে দুজন রয়েছেন।

তবে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার ডাঙ্গী ইউনিয়নের কৃষ্ণনগর গ্রামের মোস্তফা মাতুব্বরের ছেলে আল আমিন মাতুব্বর (২০), সোবাহান মোল্লার ছেলে মাহফুজ মোল্লা (২২), এসকেন মোল্লার ছেলে নাজমুল মোল্লা (২৩) এবং সেকেন ব্যাপারীর ছেলে আকরামুল ব্যাপারী (২৭) নিখোঁজ রয়েছেন বলে পরিবার জানিয়েছে।

নিখোঁজ আল আমীনের মা চামেলি বেগম (৩৮) বলেন, দুই মাস আগে তার ছেলে বিদেশ রওনা হয়। এরপর বিভিন্ন দেশ হয়ে গত বৃহস্পতিবার তাদের সাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি নেওয়ার জন্য ট্রলারে ওঠানো হয়।

তিনি জানান, দালাল চক্রের এক সদস্য কৃষ্ণনগর গ্রামের বাসিন্দা মুরাদ ফকির (৩৬) সোমবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে সাগরে ট্রলারডুবির পর আল আমীনের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি জানান।

চামেলী বেগম বলেন, ৯ মার্চ সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ছেলের সঙ্গে তার সবশেষ কথা হয়।

ওই দিন ভোর সাড়ে ৪টার দিকে মুরাদ ফকির ইমোতে চামেলী বেগমকে জানান, তাদের ইতালির যাওয়ার জন্য স্পিডবোটে উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

নিখোঁজ যুবকদের পরিবারের সদস্যরা জানান, ৫ জানুয়ারি ইতালির যাওয়ার জন্য ঢাকা যান তারা। এরপর ৮ জানুয়ারি দুবাই যান। দুবাইয়ে চার দিন থাকার পর মিসর হয়ে ১২ জানুয়ারি নাগাদ তারা লিবিয়া পৌঁছান। এরপর বৃহস্পতিবার তাদের ট্রলারে উঠিয়ে দেওয়া হয়।

স্থানীয়রা জানান, মুরাদ ফকির লিবিয়া থাকেন। কিছুদিন আগে তিনি দেশে এসেছিলেন। ১৫ দিন আগে আবার লিবিয়া চলে যান। তার সঙ্গে স্থানীয় কয়েকজন সহযোগী হিসেবে কাজ করেন।

ডাঙ্গী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান কাজী আবুল কালাম জানান, মুরাদ একজন ‘মানব পাচারকারী’। তিনি এ পর্যন্ত অন্তত ২০০ তরুণকে পাঠিয়েছেন। তিনি লোক পাঠিয়ে কয়েক কোটি টাকা আয় করেছেন। তার অবস্থা রাতারাতি ফুলেফেঁপে উঠেছে। গ্রামে বড় বিল্ডিং করেছেন। এলাকায় সকলে তাকে ‘বিদেশে পাঠাইনা মুরাদ’ নামে চেনে।

নগরকান্দা থানার ওসি মিরাজ হোসেন বলেন, এসব বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, ভূমধ্যসাগরে ট্রলারডুবির ঘটনায় ১৭ বাংলাদেশিকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। লিবিয়া থেকে অবৈধ পথে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে তারা ইতালি যাচ্ছিলেন। সোমবার ইতালি কর্তৃপক্ষ তাদের উদ্ধার করে উপকূলে নিয়েছে।

উদ্ধার হওয়া ১৭ অভিবাসনপ্রত্যাশীর সবাই বাংলাদেশি নাগরিক। তাদের ইতালির সিসিলির শহর পোজালোতে রাখা হয়েছে।

ইতালির কোস্ট গার্ড জানিয়েছে, লিবিয়া থেকে ৩০ ব্যক্তিকে নিয়ে ইতালি অভিমুখে যাত্রা করা নৌকাটি গত রোববার বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে পড়ে এবং উল্টে যায়।