ঘটনার দিন লাইজু কুমিল্লা সেনানিবাসে তনুদের বাসায় ছিলেন; এর আগেও তাকে একাধিকবার জিজ্ঞাসাবাদ করেছে বিভিন্ন সংস্থা।
Published : 25 Jul 2023, 12:12 AM
কুমিল্লার কলেজছাত্রী সোহাগী জাহান তনু হত্যা মামলার এক সাক্ষীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকেছে তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন।
আগামী ৩ অগাস্ট সকাল ১০টায় এই মামলার সাক্ষী ও তনুর চাচাত বোন লাইজু জাহানকে কুমিল্লা নগরীর হাউজিং এস্টেট পিবিআই জেলা কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হয়েছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই ঢাকার দক্ষিণ কল্যাণপুরের পরিদর্শক মো. মজিবুর রহমান এক চিঠির মাধ্যমে লাইজুকে তলব করেছেন বলে সোমবার রাতে জানান তনুর বাবা ইয়ার হোসেন ।
ঘটনার দিন লাইজু কুমিল্লা সেনানিবাসে তনুদের বাসায় ছিলেন। এর আগেও তাকে একাধিকবার নানা সংস্থা ডেকে বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।
তনুর বাবা বলেন, ২০২০ সালের নভেম্বরে এ মামলার দায়িত্ব নেয় পিবিআই। এর দীর্ঘ আড়াই বছর পর ফের পিবিআইয়ের কোনো তৎপরতা শুরু হল।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা মামলাটি নিয়ে তৎপর রয়েছি। মামলার তদন্তের স্বার্থেই লাইজু জাহানকে ডাকা হয়েছে। এজন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। এই মামলার অন্য সাক্ষীদেরও পর্যায়ক্রমে ডাকা হবে। তদন্তকাজ এগিয়ে নেওয়ার জন্য আমরা ডেকেছি। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্তকাজ শেষ করতে পারব।”
মামলার বাদী ও তনুর বাবা ইয়ার হোসেন বলেন, “লাইজু এখন সুনামগঞ্জের ছাতকে থাকেন। তাকে এর আগেও অনেকবার ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদেই ঘুরপাক খাচ্ছে মামলার তদন্ত। মেয়ের খুনিরা এখনো অধরা। ভাবতেই বুকটা ফেটে যায়।”
দীর্ঘ সময় পর পিবিআইয়ের তৎপরতা চোখে পড়ায় আশাবাদী তনুর মা আনোয়ারা বেগম।
তিনি বলেন, “দেখি, কী হয়। অবস্থা দেখে মনে হয় মৃত্যুর আগে মেয়ের খুনিদের চেহারা দেখা হবে না।”
২০১৬ সালের ২০ মার্চ রাতে কুমিল্লার ময়নামতি সেনানিবাসের পাওয়ার হাউসের অদূরের ঝোপজঙ্গল থেকে তনুর লাশ উদ্ধার করা হয়। হত্যার ঘটনায় ২১ মার্চ বিকালে তনুর বাবা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহকারী ইয়ার হোসেন বাদী হয়ে কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন।
এর মধ্যে পাঁচবার এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বদল হয়েছেন। এখন পর্যন্ত কোনো কিনারা করতে পারেনি বর্তমান তদন্ত সংস্থা পিবিআইও।
প্রথমে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয় কোতোয়ালি মডেল থানার উপপরিদর্শক মো. সাইফুল ইসলামকে। দ্বিতীয়বার ২০১৬ সালের ২৫ মার্চ মামলার তদন্তভার দেওয়া হয় কুমিল্লা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ কে এম মনজুর আলমকে। তৃতীয়বার ২০১৬ সালের ১ এপ্রিল থেকে ২৩ অগাস্ট পর্যন্ত সিআইডির কুমিল্লার পুলিশ পরিদর্শক গাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীম বিষয়টি তদন্ত করেন।
এরপর ২০১৬ সালের ২৪ অগাস্ট তদন্ত কর্মকর্তা বদল করে সিআইডির নোয়াখালী ও ফেনী অঞ্চলের তৎকালীন সহকারী পুলিশ সুপার (বর্তমানে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার) জালাল উদ্দিন আহম্মদকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। জালাল উদ্দিন আহম্মদ চার বছরের বেশি সময় এই মামলার দায়িত্বে ছিলেন।
সবশেষ ২০২০ সালের ২১ অক্টোবর মামলাটি সিআইডি থেকে পিবিআই ঢাকার সদর দপ্তরে স্থানান্তর করা হয়।
তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক মজিবুর রহমান তিনবার কুমিল্লা সেনানিবাসে গিয়ে তনুর বাবা, মা এবং ভাই আনোয়ার হোসেন রুবেলকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এছাড়া ঘটনাস্থলও পরিদর্শন করেছেন তিনি।
আরও পড়ুন:
তনু হত্যার সাত বছর: বিচারের আশা ‘ছেড়েই’ দিয়েছে পরিবার
তনু হত্যা: ৬ বছরেও খুনি শনাক্ত না হওয়ায় ক্ষোভ স্বজনদের
তনু হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন