বোয়ালমারীর ইউএনও ও শিক্ষা কর্মকর্তাকে আদালতের শোকজ

“শোকজের চিঠি পেয়েছি। এ ব্যাপারে লিখিত জবাব আদালতকে দেব।”

ফরিদপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 April 2023, 03:03 PM
Updated : 29 April 2023, 03:03 PM

‘বেআইনি, স্বেচ্ছাচারী এবং ন্যায়নীতি ও প্রচলিত আইনের পরিপন্থি’ কাজের অভিযোগে ফরিদপুরের বোয়ালমারীর ইউএনও এবং মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে আদালত।

১৬ এপ্রিল বোয়ালমারী জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ বীনা দাস শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। তবে ২৪ এপ্রিল আদালতের এ আদেশ হাতে পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা।

নোটিশ পাওয়ার ১০ দিনের মধ্যে ওই দুই কর্মকর্তাকে জবাব দেওয়ার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে আদালত।

এর আগে ১২ এপ্রিল রূপাপাত ইউনিয়নের বামনচন্দ্র উচ্চবিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি কামরুজ্জামান কাইয়ুম মোল্লা বাদী হয়ে চারজনকে বিবাদী করে ওই মামলা করেন। ওই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এ আদেশ দেয়।

মামলার বিবাদীরা হলেন- উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোশারেফ হোসেন, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও অগ্রণী ব্যাংকের বোয়ালমারী শাখার ব্যবস্থাপক।

মামলার এজাহারে বলা হয়, সভাপতি কামরুজ্জামান কাইয়ুম মোল্লাসহ ১২ জন ওই বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির দায়িত্বে আছেন। এর মধ্যে ব্যবস্থাপনা কমিটির সঙ্গে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহজাহান শেখের মতবিরোধ দেখা দেয়।

এ ছাড়া প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ঠিকমত হিসাব না দেওয়া, সভা না ডাকা, শিক্ষকদের মধ্যে গ্রুপিং ও রাজনৈতিক বিভাজনসহ বিধিবহির্ভূত কাজ করার অভিযোগ ওঠে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রধান শিক্ষককে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে জ্যেষ্ঠ শিক্ষক আবু সাইদকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হয় বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।

পরে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবু সাইদ বিদ্যালয়ের ২০ জন এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন-ভাতার চার লাখ ৮ হাজার ২২ টাকা বেতন শিট প্রস্তুত করে অগ্রণী ব্যাংকে জমা দেন। কিন্তু ব্যাংক অজানা কারণে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা প্রদান করেনি।

ব্যবস্থাপক পরবর্তীতে বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের স্বাক্ষর ছাড়াই শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনের বিল ছেড়ে দেন। এ ব্যাপারে ব্যাংক থেকে জানানো হয়, ইউএনওর চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষক-কর্মচারীদের মাসিক বেতনের টাকা দেওয়া হয়েছে।

ইউএনওর ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির আট সদস্য পদত্যাগ করায় বর্তমানে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের উদ্যোগে একটি অ্যাডহক কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। সে কারণে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ২০২১ সালের ১৭.১০ ধারা অনুযায়ী অ্যাডহক কমিটির অবর্তমানে নিম্ন স্বাক্ষরকারী (ইউএনও) বেতন বিলে স্বাক্ষর করে ব্যাংকে পাঠানো এবং পরে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রেরণ করা হলো।

মামলার এজাহারে আরও বলা হয়, বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির আটজন সদস্য পদত্যাগ করেছেন, এই কথা সত্য নয়। বর্তমান কমিটি বাতিল হয়নি কিংবা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ভেঙেও দেয়নি। এ ছাড়া কোনো অ্যাডহক কমিটিও গঠন করা হয়নি। ইউএনও বেতন বিলে যে স্বাক্ষর করেছেন তা এখতিয়ার বহির্ভুত ও বেআইনি।

বাদীপক্ষের আইনজীবী মানিক মজুমদার বলেন, “১৬ এপ্রিল এ মামলার শুনানি হয়। শুনানি শেষে আদালত ১ ও ২ নম্বর বিবাদী ইউএনও ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে নোটিশ পাওয়ার ১০ দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর জন্য আদেশ দিয়েছে।”

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, “২৪ এপ্রিল আদালতের নির্দেশনা পেয়েছি। ১০ কর্মদিবসের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে। ওই সময়ের মধ্যে লিখিত জবাব দেব।”

জানতে চাইলে ইউএনও মোশারেফ হোসাইন বলেন, “আদালতের শোকজের চিঠি পেয়েছি। এ ব্যাপারে আমার লিখিত জবাব আমি আদালতকে দেব।”