“বোট চালকরাও নিজেদের বোটের প্রয়োজনীয় সংস্কার-যেমন রঙ করা, নতুন পর্দা লাগানো, চেয়ার বসানো ও ইঞ্জিন মেরামতসহ যাবতীয় প্রস্তুতি সেরে নিচ্ছে।”
Published : 03 Apr 2024, 09:59 AM
রোজার ঈদের লম্বা ছুটির পরই নৃগোষ্ঠীর বর্ষবরণের বৈসাবি উৎসব। তাই এবার উৎসবের আমেজ লেগেছে হ্রদ-পাহাড়ের জেলা রাঙামাটিতে। ছুটি ঘিরে প্রচুর পর্যটক বেড়াতে আসবেন বলে ধারণা হোটেল-মোটেল রিসোর্ট মালিকদের; পর্যটকদের বরণে তারা প্রস্তুতিও নিয়েছেন।
এরই মধ্যে বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের আগাম বুকিং ‘লক্ষ্যমাত্রা ছুঁয়েছে’। নতুন আসন আর রঙে নতুন রূপ পাচ্ছে হ্রদে চলাচলকারী নৌ-যানগুলোও।
রাঙামাটি পর্যটন করপোরেশনের ব্যবস্থাপক আলোক বিকাশ চাকমা বলেন, “সাধারণত ঈদের ছুটিতে আমাদের বরাবরই আগাম বুকিং খুব ভালো থাকে। এবারের ছুটি বেশ দীর্ঘ। তাই দুই বা তিনদিন নয়, এর চেয়েও বেশি সময় ধরে পর্যটকরা রাঙামাটি মুখর করে রাখবেন।
“আমাদের এরই মধ্যে আগাম বুকিং ছাড়িয়েছে ৬০ শতাংশ। আশা করছি, এই ছুটিতে ব্যবসা ভালো হবে। কারণ এবার ঝুলন্ত সেতুও পানির নিচে নেই। কেউ এসে কষ্ট নিয়ে ফিরবে না।”
এই বছরই যাত্রা শুরু করা হোটেল গ্রান্ডমাস্টারের পরিচালক শাহীন আল মামুন বলছেন, “আমরা যে পরিমাণ সাড়া পাচ্ছি তা বেশ আশাব্যঞ্জক। আমাদের আগাম বুকিং প্রায় ৮০ শতাংশ পেরিয়েছে।
“আশা করছি, এই ঈদের লম্বা ছুটিতে বেশ ভালোই ব্যবসা হবে শহরের সব হোটেল-মোটেল, রিসোর্টে।“
বার্গী লেক ভিউ রিসোর্টের স্বত্বাধিকারি সুমেধ চাকমা বলেন, রিসোর্ট হিসেবে তাদের প্রতিষ্ঠানে যে বৈচিত্র্য ও ঐতিহ্যের সমন্বয় হয়েছে, তাতে সারাবছরই কমবেশি ট্যুরিস্ট রেসপন্স পান।
“তবে স্বাভাবিকভাবেই যেহেতু এই ঈদে একটি দীর্ঘ ছুটি মিলেছে এবং সেসময়ই আবার পাহাড়ের সবচে বড় সামাজিক উৎসব বিজু-বিষু বিহু বৈসুও অনুষ্ঠিত হচ্ছে; তাই বাড়তি পর্যটকের চাপ তো আছেই। আমাদের আগাম বুকিং বেশ ভালোই ।”
বছরের যে কটা সময়ে ব্যবসা ভালো হয়, তার মধ্যে অন্যতম ঈদের ছুটি বলে জানান রাঙামাটি পর্যটন বোটঘাটের ম্যানেজার রমজান আলী। এবার ঈদ-বৈসাবি মিলিয়ে বাইরে থেকে প্রচুর আসবে বলে ধারণা তার।
রমজান বলেন, “বোট চালকরাও নিজেদের বোটের প্রয়োজনীয় সংস্কার-যেমন রঙ করা, নতুন পর্দা লাগানো, চেয়ার বসানো ও ইঞ্জিন মেরামতসহ যাবতীয় প্রস্তুতি সেরে নিচ্ছে।”
সাম্প্রতিক সময়ে রাঙামাটির পর্যটনে বেশ জনপ্রিয় জেলা পুলিশ পরিচালিত ‘পলওয়েল ন্যাচার পার্ক’। প্রতিষ্ঠানটিতে প্রচুর বিনোদনের উপকরণ থাকায় এবং হ্রদের তীরের নান্দনিক কটেজগুলোতে সারাবছর ভিড় লেগেই থাকে।
ঈদের টানা ছুটি আর বৈসাবি উৎসবের কারণে এই ভিড় আরও বাড়বে বলে আশা করছেন প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বে থাকা এসআই মিজান। তিনি বলেন, “ঈদের সময় এমনেই প্রচুর পর্যটক আসেন। এবার ব্যবসা জমবে বলে মনে হচ্ছে।আমরাও সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করব।”
রাঙামাটির একমাত্র ভাসমান রেস্টুরেন্ট দোল’র পরিচালক মুন্না তালুকদার বলেন, “আমরা মূলত হ্রদের বুকে বসে খাবার গ্রহণের অপূর্ব সুযোগটি দিয়ে থাকি। এবার ঈদের টানা ছুটি এবং এরই মধ্যে পাহাড়ের প্রধান উৎসব বৈসাবি পড়ে যাওয়ায় প্রচুর পর্যটক আসবেন বলে ধারণা করছি।”
বিভিন্ন হোটেল-মোটেল ও রিসোর্ট মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাঙামাটি শহরে কমবেশি ৪৫টি হোটেল, ১৭টি রিসোর্ট, ১২টি হাউজবোট আছে। এদের মধ্যে সর্বোচ্চ ধারণ ক্ষমতা আছে পর্যটন কর্পোরেশন এর; যা প্রায় শতাধিক।
এর বাহিরে রাঙাদ্বীপ ও বার্গি লেকভিউ রিসোর্টেরও অন্তত ১০টির বেশি কটেজ আছে; যাতে অর্ধ শতাধিক মানুষ সহজেই রাত্রিযাপন করতে পারেন।
এদিকে পাহাড়ের প্রধান উৎসব বৈসাবিকে ঘিরে ইতোমধ্যেই পার্বত্য এ জেলায় শুরু হয়েছে নানা সাংস্কৃতিক-সামাজিক আয়োজন।বিভিন্ন সংগঠন, প্রতিষ্ঠানের ভিন্ন ভিন্ন আয়োজনে রোজার মাসেও উৎসবমুখর হয়ে উঠেছে নানা জাতিগোষ্ঠির বসবাসে বৈচিত্র্যময় হয়ে উঠা এই জনপদ।
গত কয়েকবছর ধরে বৈসাবি উৎসব রোজার মধ্যে হওয়ায় সামাজিক কারণেই ঠিক যেনো চেনা ছন্দে ছিল না পুরো আয়োজন। এবার ঈদের পর এবং দীর্ঘছুটির মধ্যেই পাহাড়ি জনগোষ্ঠির বর্ষবরণ বেশ উৎসবমুখর পুরো জনপদ।