“জনগণকে সম্পৃক্ত করতে না পারলে পরিকল্পনা যতই সুন্দর হোক, সেটা আমরা বাস্তবায়ন করতে পারব না,” বলেন মন্ত্রী।
Published : 12 May 2024, 06:42 PM
জলবায়ু পরিবর্তনের কর্মপরিকল্পনার সঙ্গে তরুণ সমাজ ও নারীদের সম্পৃক্ততার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী।
তিনি বলেছেন, “এক্ষেত্রে আমরা যদি জনগণকে সম্পৃক্ত করতে না পারি, আমাদের পরিকল্পনা যতই সুন্দর হোক, সেটা কিন্তু আমরা বাস্তবায়ন করতে পারব না। বিশেষ করে নারী ও যুব সমাজকে এ কাজে সম্পৃক্ত করতে হবে।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ‘ক্লাইমেট অ্যাকশন প্ল্যান’ এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে একথা বলেন মন্ত্রী।
২০৫০ সালের মধ্যে ‘নেট জিরো’ (গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন শূন্যের কোঠায় রাখা) অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা সামনে রেখে প্রথমবারের মত ‘ক্লাইমেট অ্যাকশন প্ল্যান’ প্রণয়ন করেছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন।
এ পরিকল্পনার লক্ষ্য হল- ঢাকা শহরকে জলবায়ু সহনশীল শহরে রূপান্তর করার মাধ্যমে স্বাস্থ্য, অর্থনীতি এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত করা। প্যারিস চুক্তির সঙ্গে সম্পৃক্ততা রেখে টেকসই, জলবায়ু স্থিতিস্থাপক উন্নয়ন, ‘নেট জিরো’ নির্গমনের দিকে যাওয়ার চেষ্টা, সুশাসন ব্যবস্থা, উন্নত পরিষেবা সরবরাহ এবং সামাজিক ন্যায্যতা নিশ্চিত করা।
পরিবেশমন্ত্রী বলেন, “এই ক্লাইমেট অ্যাকশন প্ল্যান আমাদের জাতীয় যে কর্মপরিকল্পনা আছে, তার সঙ্গে সামঞ্জস্য আছে। আমাদের মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব হচ্ছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে স্ট্যান্ডার্ড আছে, সেগুলো ঠিক করা। সরকার বা একটা মন্ত্রণালয়ের পক্ষে সেটা এককভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব না। আমাদের দুই মেয়র আছেন, তাদের সঙ্গে জনগণ সম্পৃক্ত হলে একটা বড় পরিবর্তন আনা সম্ভব।”
শহরে দাপদাহ কমাতে বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “তাপদাহ কমাতে আমরা ঢাকায় একটা স্যাটেলাইট ইমেজ তৈরি করছি, কোন জায়গায় গাছ লাগানো যায়, সেটাকে শনাক্ত করছি। ঢাকাকে যদি বাসযোগ্য রাখতে হয়, তাহলে সেখানে ন্যূনতম সবুজ এলাকা আমাদের রাখতে হবে। আমরা চাচ্ছি, আমাদের মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নগর বনায়ন পরিকল্পনাটা আমরা শুরু করতে পারি।”
বাংলাদেশ ০.৪৬ শতাংশ কার্বন নিঃসরণ করছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “আজকে যদি বাংলাদেশের মত স্বল্প উন্নত দেশ জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী থাকত, তাহলে উন্নত বিশ্ব আমাদেরকে একটার পর একটা স্যাংশন দিত, নিষেধাজ্ঞা দিত। সবখানে তাদের নিয়ন্ত্রণ আছে। এটা হচ্ছে বাস্তবতা। এটার মধ্যেই আমাদের কাজ করতে হবে।
“বর্তমান অর্থবছরে প্রায় ৩৭ হাজার কোটি টাকা আমরা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বরাদ্দ দিয়েছি। কোন দেশ এটা করে? কিন্তু সেটা আমাদের জন্য যথেষ্ঠ না। আমরা ভিক্টিম, এই হিসেবে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকব না।”
অনুষ্ঠানে ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, “বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে কম কার্বন নিঃসরণ করে, অথচ সেই দেশই জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। গৃহহীনরা ঢাকায় চলে আসছে, ঢাকা শহরে চাপ বেড়ে যাচ্ছে । এই ক্ষতিটা হচ্ছে উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর জন্য। ক্লাইমেট ফান্ডের জন্য তাদেরকে এগিয়ে আসতে হবে।”
ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় দু্ই সিটি করপোরেশন এক হয়ে কাজ করবে। দ্রুত নগরায়ন, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা এবং জলবায়ুজনিত চ্যালেঞ্জ পরিবেশ ও জীবনমানের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে। এই সমস্যাগুলো সংস্কারের জন্য ঢাকা দক্ষিণ এবং উত্তর সিটি যৌথভাবে কাজ করবে। শুধু কথা নয়, বরং আমরা কাজ বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।”
বিশ্বের বৃহৎ ৪০ নগরের সংগঠন ‘সি৪০ সিটিস’ এর সভাপতি ও লন্ডন সিটির মেয়র সাদিক খান অনুষ্ঠানে ভিডিওবার্তায় বক্তব্য দেন। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল, ‘সি৪০ সিটিস’ নির্বাহী পরিচালক মার্ক ওয়াটস ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র জায়েদা খাতুন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।