“দিনমজুরিতে চলে সংসার। কোথায় নুতন করে বাড়ি করব দিশা পাচ্ছি না।”
Published : 07 Jul 2024, 01:35 PM
রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার গত এক সপ্তাহ ধরে তিস্তা নদীর পানি বাড়ছে। এর ফলে দেখা দিয়েছে নদী ভাঙন।
তিস্তা নদীর ভাঙনে এ উপজেলার প্রায় পাঁচটি ইউনিয়নের দেড় শতাধিক পরিবার হুমকির মুখে পড়েছে। এছাড়া ভাঙছে রাস্তাঘাট ও বসতবাড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনা।
যেসব এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে সেগুলো হলো- গঙ্গাচড়া উপজেলার মর্ণেয়া ইউনিয়নের নিম্নাচঞ্চল ও চরের আলফাজটারী, আনছারেরটারী, নরশিং মধ্যপাড়া, হাসানটারী, আলমারবাজার, গজঘণ্টা ইউনিয়নের নিলারপাড়া, আলালচর, ছালাপাকচর, গাওছোয়া, লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের শংকরদহ, পশ্চিম ও পূর্ব ইচলী, বাগেরহাট, কেল্লারপাড়, কোলকোন্দ ইউনিয়নের বিনবিনা, চিলাখালচর, মটুকপুরচর এবং নোহালী ইউনিয়নের মিনারবাজার, নোহালীচর ও বৈরাতী।
ভাঙনে বিলীন হচ্ছে বসতবাড়ি, গাছপালা, জমির ফসল। ভেঙে পড়েছে বিদ্যুতের খুঁটি। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় পুকুর, জলাশয় ও মৎস্য খামারের মাছ ভেসে গেছে। নষ্ট হয়েছে চাষ করা বিভিন্ন ফসল।
গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদ তামান্না বলেন, “তিস্তায় পানি বাড়ার সঙ্গে ভাঙনে দিশাহারা হয়ে পড়েছে দেড় শতাধিক পরিবার। সব কিছু হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে তারা।
“এরই মধ্যে ঘরবাড়ি ছেড়েছেন প্রায় ৫০ পরিবার। পরিবারগুলো আশ্রয় নিয়েছে উঁচু স্থানে। অনেকে রাস্তায় গবাদি পশু ও পরিবার নিয়ে বাস করছেন।”
শনিবার বিকালে মর্ণেয়া চরের আলফাজটারী গিয়ে দেখা যায়, শাফিকুল, আজিজুল, ওয়াহাব, ছামাদ, মোরসেদুল, আবেদ আলী, আব্দুল হাকিম, হামিদ, হালিম, রহিম, জব্বার, মতিন, মতিয়ার, জলিল, মজমুল, আব্দুল করিম, মশিয়ার, ছালাম, আব্দুর রহমান, পছা, শরিফুল, ছেরাব উদ্দিন, মোশফেকুল, মনির, সিরাজুল, জছির, জলিল, হামিদুলসহ ৫০টি পরিবারের বাড়িঘর-ভিটামাটি তিস্তার ভাঙনে বিলীন হয়েছে।
ভাঙনে নিঃস্ব শাফিকুল বাড়ির পাশে বসে তিস্তার দিকে তাকিয়ে নীরবে কাঁদছিলেন। তিনি বলেন, “কোনো রকমে ঘরের টিন খুলে নিতে পারছি। তারপরও অনেক জিনিসপত্র ভেসে গেছে।
“হাতে নেই তেমন টাকা, দিনমজুরিতে চলে সংসার। কোথায় নতুন করে বাড়ি করব দিশা পাচ্ছি না।”
আবেদ আলী বলেন, তার একমাত্র বাড়ির জায়গাটুকু তিস্তায় চলে গেছে। এখন কী করবেন ভেবে উপায় পাচ্ছেন না। তা ছাড়া স্ত্রী রাবেয়া সন্তান জন্ম দিয়েছেন ২৪ দিন হল। তাকে ভালোমতো থাকতে দিতে পারছেন না, ঠিকমতো খেতেও দিতে পারছেন না।
কোনো সরকারি সহায়তাও পাননি বলে জানিয়েছেন আবেদ।
এজারুল ও আলমগীর জানান, তাদের এলাকার ৫০ বাড়িসহ আনছারটারীর শতাধিক বাড়ি ভাঙনের হুমকির মুখে পড়েছে।
আনছারটারীর ছয়ফাল ও গফুর ভাঙন থেকে বাঁচতে নিজেদের উদ্যোগে বাঁশের পাইলিং দিচ্ছেন বলে জানালেন।
মর্ণেয়া চরের ৬০ বছর বয়সী আব্দুর রহমান বলেন, “আমাদের এলাকার অনেক বাড়ি, আবাদি জমি, গাছপালা, বিদ্যুতের খুঁটি সব ভেঙে গেলেও কেউ দেখতে আসে নাই।
“ভেঙে পড়া খুঁটি বিদ্যুতের লোকদের বললেও সরিয়ে নিচ্ছে না।”
তিনি বাড়ি ভাঙা পরিবারগুলোর জন্য সরকারিভাবে আর্থিক সহযোগিতার দাবি জানান।
মর্ণেয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান বলেন, তার ইউনিয়নে তিস্তায় ৫০ পরিবারের বেশি বাড়ি ভেঙে গেছে। কিছু পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে, বাকিদেরও দেওয়া হবে। তালিকা করা হচ্ছে।
গঙ্গাচড়া উপজেলায় নুতন করে যাদের বাড়ি ভেঙেছে তাদের সহায়তা দেওয়া হবে বলে গঙ্গাচড়ার ইউএনও নাহিদ তামান্না জানান। ইউপি চেয়ারম্যানকে তালিকা করতে বলা হয়েছে, বলেন তিনি।
এদিকে নদী ভাঙনে ভেঙে পড়া বিদ্যুতের খুঁটি সরে নেওয়ার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে রংপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২-এর জেনারেল ম্যানেজার মো. খোরশেদ আলম জানান।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রবিউল ইসলাম বলেন, “লো-ল্যান্ড এলাকায় ভাঙন রোধে সরকারি কোনো বরাদ্দ নেই। কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”