“বিপজ্জনক এই পরিস্থিতিতে কোনো পর্যটক যাতে সাগরে নামতে না পারে, এই ব্যাপারে ট্যুরিস্ট পুলিশের নজরদারি অব্যাহত রয়েছে।”
Published : 26 May 2024, 02:15 PM
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে সাগর উত্তাল রয়েছে; ফলে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের প্রতিটি পয়েন্টে সতর্কতামূলক লাল পতাকা টাঙানো হয়েছে।
এদিকে জোয়ারের সঙ্গে বাড়তে শুরু করেছে সাগরে ঢেউয়ের তীব্রতা। বিশাল বিশাল ঢেউ আছড়ে পড়ছে তীরে। প্রচণ্ড বেগে বাতাস বইছে। আকাশও মেঘাচ্ছন্ন। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে।
রোববার সকাল থেকে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সৈকতে পর্যটকদের আনাগোনাও বাড়তে শুরু করেছে। তবে, পর্যটকরা যাতে গোসল করতে নামে সেজন্য নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। পাশাপাশি পর্যটকদের বিচে না নামতেও নিরুৎসাহিত করছে সি সেইফ লাইফ গার্ডের কর্মীরা।
সি সেইফ লাইফ গার্ডের সহকারী সুপার ভাইজার জয়নাল আবেদীন ভুট্টু বলেন, এখন ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সাগর উত্তল রয়েছে। স্বাভাবিক সময়ের চাইতে ঢেউয়ের উচ্চতা ৩/৪ ফুটোর বেশি। যে কারণে তীরের অনেক দূর পর্যন্ত তীব্র ঢেউ আছড়ে পড়ছে। এই পরিস্থিতিতে সাগরে গোসলে নামা খুবই বিপজ্জনক।
“যারা সাগরে ঘুরতে এসেছেন; তাদেরকে সাগরে না নামতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। তারপরও অনেকেই নিষেধ অমান্য করে সাগরে নামছেন; তাদেরকে অনুরোধ করে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ”
ট্যুরিস্ট পুলিশের কক্সবাজার অঞ্চলের অতিরিক্ত উপ মহাপরিদর্শক আপেল মাহমুদ বলেন, “এখন ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেতেরমধ্যেও কক্সবাজারে বেড়াতে আসা অনেক পর্যটক সৈকতে ভিড় করছেন।
“বিপজ্জনক এই পরিস্থিতিতে কোনো পর্যটক যাতে সাগরে নামতে না পারে, এই ব্যাপারে ট্যুরিস্ট পুলিশের নজরদারি অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া মাইকিং করে পর্যটকদের সাগরে না নামতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।”
তারপরও অনেক পর্যটক লাইফ গার্ড ও বিচ কর্মীদের নির্দেশনা না মেনে সাগরে নেমে গোসল করছেন।
পর্যটকরা বলছেন, ঝুঁকির মধ্যেও যতটুকু নিরাপদ থাকা যায় সেই চেষ্টার মাধ্যমে সাগরের সৌন্দর্য উপভোগ করছেন।
বগুড়া থেকে আসা জাফর আলম নামে এক পর্যটক জানান, গত এক মাস আগে তার বিয়ে হয়েছে। তিনিবউকে নিয়ে তিন দিন আগে কক্সবাজারে ঘুরতে আসেন। এখন ঘূর্ণিঝড়ের এই মুহূর্তে তারা সাগরে ঘুরতে এসেছেন। সাগরের পরিস্থিতি বিপজ্জনক হওয়ায় গোসলে নামতে পারেননি।
বিচ কর্মী এবং লাইফ গার্ড কর্মীরা পর্যটকদের সাগরে নামতে নিরুৎসাহিত করছে । এখন হতাশ মনে হোটেলে ফিরে যাচ্ছেন বলে জানান তিনি।
এদিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কে কয়েকটি স্থানে দমকা হাওয়ায় গাছ পড়ে যাওয়ায় যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
আবহাওয়ার বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমাল রোববার সকাল ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৪০০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৬০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ৩৩০ কিলোমিটার এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ২৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ছিল ৯০ কিলোমিটার; যা দমকা বা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছিল।
আরও পড়ুন:
রেমাল পরিণত প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে,মহাবিপদ সংকেত
অন্যদিকে ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় জেলার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা শনিবার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সভায় জানানো হয়, জেলার উপকূলীয় সাতটি উপজেলায় সিপিপি স্বেচ্ছাসেবক কর্মীরা প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। ঘূর্ণিঝড় রেমাল মোকাবিলায় জেলার ৬৩৮ টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ ছাড়া ৮ হাজার ৬০০ জন স্বেচ্ছাসেবক এবং ২ হাজার ২০০ জন সিপিপি কর্মীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে জরুরি কাজে অংশগ্রহণের জন্য।
দুর্যোগকালীন মানুষকে সহায়তার প্রস্তুতি সম্পর্কে জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, জেলা প্রশাসনের কাছে জরুরি সহায়তা প্রদানের জন্য ৪৮৬ মেট্রিক টন চাল, ২ লাখ ৭৫ হাজার নগদ টাকা, ২৩ বান্ডিল ঢেউটিন, টিনের সঙ্গে গৃহনির্মাণের মজুরির জন্য ৬৯ হাজার নগদ টাকা মজুদ রয়েছে।