তিনদিনের ছুটিতে রাঙামাটির পর্যটন খাত যে ব্যবসা করেছে তা আশাব্যঞ্জক বলে ব্যবসায়ীদের ভাষ্য।
Published : 27 Dec 2022, 05:51 PM
সাপ্তাহিক ও বড়দিন মিলিয়ে তিনদিনের ছুটিতে বিপুল জনসমাগমে ভালো আয় করেছেন রাঙামাটির পর্যটন ব্যবসায়ীরা।
পর্যটনের প্রতিটি স্পটে লোক সমাগম ছিল আশানুরূপ। পর্যটক আগমনে হোটেল-মোটেল প্রায় পুরিপূর্ণ ছিল। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পর্যটকরা থাকার স্থান না পেয়ে গাড়িতে অবস্থান করেছেন।
পর্যটন স্পট থেকে আয়, যাতায়াতে গাড়ি ও জলযান ভাড়া এবং হোটেল-মোটেল ভাড়া – সব মিলিয়ে ভালো আয় হয়েছে।
কোভিড দুর্ভোগে সারা পৃথিবীর মতো সংকটে পড়ে পাহাড়ের পর্যটনও। ধীরলয়ে স্বাভাবিক হতে শুরু করা এই খাতে পরিবর্তনকে তাই ইতিবাচকভাবেই দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। এ ধারা অব্যাহত থাকলে সুদিনের প্রত্যাশা করছেন পর্যটন ব্যবসায় সংশ্লিষ্টরা।
রাঙামাটি পর্যটন করপোরেশনের ব্যবস্থাপক সৃজন বিকাশ বড়ুয়া বলেন, “এবার ছুটিতে যে পরিমাণ পর্যটক আসার কথা সে পরিমাণ না হলেও তিনদিনে ভালো ব্যবসা হয়েছে। আমাদের হোটেলের ৮৮টি রুমের মধ্যে শুক্রবার ও শনিবার প্রায় ৯০ ভাগ রুমে পর্যটক ছিল।
“শেষদিন রোববার ৭০ ভাগ রুমে পর্যটক ছিল। এছাড়া তিনদিনে ঝুলন্ত সেতুতে প্রায় সাত হাজার পর্যটক প্রবেশ করেছে।”
পর্যটন বোট ঘাটের ইজারাদার রমজান আলী বলেন, “তিনদিনে আশানুরূপ পর্যটক এসেছে। ছুটির এই তিনদিনে ৫০-৬০টা করে বোট কাপ্তাই হ্রদে ভ্রমণ করেছে। সে হিসাবে তিনদিনে কম-বেশি তিন-চার লাখ টাকা আয় হয়েছে।
“তবে পর্যটকরা শুধু পর্যটন ঘাট থেকে ভ্রমণ করেন না, রিজার্ভ বাজার জেটিঘাট থেকেও অনেক পর্যটক বোট নিয়ে কাপ্তাই হ্রদ ঘুরে বেড়ান। সে হিসাবে বোট ভাড়ায় আরও কয়েক লাখ টাকা যোগ হবে।”
এদিকে জেলা পুলিশ পরিচালিত পলওয়েল পার্কেও প্রচুর দর্শনার্থী সমাগম হয়েছিল বলে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। প্রতিদিনই পার্কে চার থেকে পাঁচ হাজার পর্যটক প্রবেশ করেছেন। সে হিসাবে তিন দিনে প্রায় ১৫ হাজার পর্যটক পার্কে প্রবেশ করেন।
পল্ওয়েলের ইনচার্জ মিজানুর রহমান বলেন, “এ বছরের পর্যটক অন্য সময়ের চেয়ে খুবই ভালো। এ ধারা অব্যাহত থাকলে আমরা আশাবাদী, ব্যবসা ভালো হবে।”
৩০ টাকা হারে প্রায় চার থেকে পাঁচ লাখ টাকার টিকিট বিক্রি হয়েছে। আবার পার্কের কটেজ, হল রুম ভাড়া ও খাবারদাবারসহ সব মিলে ১৫-২০ লাখ টাকার ব্যবসা হয়েছে।
রাঙামাটি হোটেল মালিক সমিতির সভাপতি মঈনুদ্দীন সেলিম বলেন, রাঙামাটি শহরে প্রায় ৫৫টি হোটেলের প্রায় দুই হাজার রুমে পাঁচ হাজারের বেশি পর্যটক থাকতে পারে। তবে শুক্রবার ও শনিবার বেশি পর্যটক থাকায় অনেক হোটেলে রুমও দিতে পারেনি।
“অনেক রুমে পর্যটক গাদাগাদি করে ছিল, সে হিসাবে একদিনেই হোটেলে ৭-৮ হাজারের মত লোক হবে বলে মনে হচ্ছে।”
তিনি বলেন, “তিন দিনে শুধু হোটেলগুলোতেই প্রায় কোটি টাকার ব্যবসা হয়েছে। শীতের মৌসুমে এইভাবে পর্যটক এলে ব্যবসায়ীদের ব্যবসা ভালো হবে।”
এদিকে রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি ইউনিয়নের সাজেক ভ্যালিতেও পর্যটকের ঢল নামে। শুক্রবার অনেকেই রুম না পেয়ে হোটেলে বারান্দা, কিংবা গাড়িতেও অবস্থান নেয়।
সাজেক কটেজ-রিসোর্ট মালিক সমিতির সভাপতি রাহুল চাকমা জন বলেন, “ছুটি তিন দিন থাকলে আমাদের এখানে পাঁচদিন ভালো ব্যবসা হয়েছে। কটেজ ভাড়া ও রেস্টুরেন্ট খাবার বাবদ পর্যটকরা এই কয়দিনে প্রায় দুই কোটি টাকা খরচ করেছে। জিপের আসা-যাওয়া যোগ করলে সেটা আরও বেশি হবে।
বেসরকারি খাতের অন্যতম পর্যটক উদ্যোক্তা রাইন্যাটুগুন ইকো রিসোর্ট-এর সত্বাধিকারী ললিত সি চাকমা বলেন, “এই ছুটির তিনদিনে রাঙামাটির পর্যটন খাত যে ব্যবসা করেছে তা আশাব্যঞ্জক। দুঃসময় কাটিয়ে আলোতে ফেরার ইঙ্গিত মিলছে।
“এই ধারা অব্যাহত থাকলে এবং বেড়াতে আসা পর্যটকদের জন্য স্বস্তিকর সুব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারলে পাহাড়ের পর্যটনে ভালো দিন আসবেই।”