প্রধান বিচারপতি বলেন, কোনো বিচারক দুর্নীতি করলে তাকে বিচার বিভাগে রাখা হবে না।
Published : 12 Apr 2023, 08:58 PM
বিচার করতে গিয়ে কেউ দুর্নীতি করলে সঙ্গে সঙ্গে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে দেশের প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, তারা ডাকাতের চেয়েও খারাপ।
বুধবার দুপুরে ঝিনাইদহে জেলার আইনজীবীদের সঙ্গে মতবিমিয়কালে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধান বিচারপতি বলেন, “কোনো বিচারক দুর্নীতি করলে তাকে বিচার বিভাগে রাখা হবে না। যে জজ বিচার বিক্রি করবে তার বিরুদ্ধে সাথে সাথে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
“ডাকাতরা ডাকাতি কালে সোনা-গয়না, টাকা-পয়সা নিয়ে যায়। আর যে বিচারক টাকা নিয়ে একজনের সম্পত্তি অন্যকে দেন তিনি ডাকাতের চেয়েও খারাপ।”
দুর্নীতিকে ক্যান্সারের সঙ্গে তুলনা করে প্রধান বিচারপতি বলেন, আঙুলে ক্যান্সার হলে কেটে বাদ দিতে হয়। তেমনি দুর্নীতবাজদেরও বাদ দিতে হবে।
প্রধান রিচারপতি বলেন, দুর্নীতির জন্য এ দেশ স্বাধীন হয়নি। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বিদেশে বাংলাদেশের মর্যাদা বেড়েছে, প্রশংসিত হচ্ছে। তাই বিচার বিভাগকেও এগিয়ে যেতে হবে।
দেশে যে পরিমাণ মামলা দায়ের হচ্ছে, তার চেয়ে বেশি মামলা নিষ্পত্তি হচ্ছে বলে তিনি জানান।
পরিশ্রম ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে আলোকিত জীবন গড়তে কনিষ্ঠ আইনজীবীদের এবং তাদের পথ চলায় সহযোগিতা দিতে জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের প্রতি আহবান জানান।
আইনজীবী সমিতির মিলনায়তনে এ মতবিনিময় সভায় জেলা জজ মো. নাজিমুদৌলা, আইনজীবী সমিতির সভাপতি রবিউল ইসলাম, সরকারি কৌঁসুলি বিকাশ কুমার ঘোষ, পিপি ইসমাইল হোসেন, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আজিজুর রহমান, এস এম মশিউর রহমানসহ কয়েকজন আইনজীবী বক্তব্য রাখেন।
এর আগে আদালতে আগত বিচার প্রার্থীদের বিশ্রামের জন্য জজ আদালত প্রাঙ্গণে ‘ন্যায়কুঞ্জ’র ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধান বিচারপতি।
বিচারপ্রার্থীদের কষ্ট লাঘবে প্রতি জেলায় আদালত প্রাঙ্গণে ন্যায়কুঞ্জ স্থাপন করা হবে বলে তিনি জানান।
বিচারপ্রার্থীরা রাষ্ট্রের মালিক, তাদের জন্য ন্যায়কুঞ্জ
বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বুধবার দুপুরে মাগুরা জেলা জজ আদালত চত্বরে বিচারপ্রার্থীদের বিশ্রামাগার ন্যায়কুঞ্জের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেছেন।
ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি বলেন, আপনারা জানেন এ দেশের প্রায় ৪ কোটি মানুষ বিভিন্ন ‘লিটিগেশনের’ সাথে জড়িত। তাদেরকে নিত্যদিন আদালত প্রাঙ্গণে আসা লাগে।
“তারা এ রাষ্ট্রের মালিক। তাদেরকে আমাদের বিচারিক সেবা দেওয়ার দায়িত্ব। যদিও রাষ্ট্রের মালিক তারাই, তারা যখন আদালতে আসেন স্থান সংকুলান হয় না, তারা কোথায় বসবে। ইতস্তত ঘুরতে থাকে। বিশেষ করে যখন মহিলা আসে দূরদূরান্ত থেকে সাক্ষ্য দিতে অথবা তাদের পরিজনদের, যারা আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকে, তাদের সাথে দেখা করার জন্য।”
তারা যাতে এখানে এসে অস্বস্তিবোধ না করে সেটা সুরাহা করার জন্য তাদের বসার জায়গা অর্থাৎ বিশ্রামাগার করার সিন্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানান প্রধান বিচারপতি।
“সে অনুসারে আমরা এটার নাম দিই ন্যায়কুঞ্জ। এখানে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ জন লোকের বসার ব্যবস্থা থাকবে। দুটি টয়লেট থাকবে – একটি পুরুষদের জন্য, একটি মহিলাদের জন্য।
“এ ছাড়া একটি ফাস্ট ফুডের দোকান থাকবে; এতে করে যারা এ রাষ্ট্রের মালিক এখানে এসে স্বস্তিতে কিছু সময় কাটাতে পারে বা বসতে পারে। আমাদের বিচারের জন্য এ আদালত এবং বিচারিক সেবা দেওয়ার জন্য বিচারকবৃন্দ। এই ধারণা থেকে এই ন্যায়কুঞ্জ করা।”
তিনি জানান, দেশের প্রতিটি জেলার জজ আদালতে ন্যায়কুঞ্জ প্রতিষ্ঠার জন্য সরকার প্রায় ৩৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। এ থেকে প্রতিটি জেলায় ৫০ লাখ টাকা খরচ করা যাবে। এতে অতি সাধারণ মানুষ, যারা আদালতে আসবে, তাদের উপকারে আসবে।
প্রধান বিচারপতি পরে আদালত চত্বরে একটি লিচু গাছ রোপন করেন। তিনি বিচারক ও আইনজীবীদের সঙ্গে মতবিনিময়ও করেন।
এ সময় মাগুরার জেলা ও দায়রা জজ অমিত কুমার দে, জেলা প্রশাসক আবু নাসের বেগ, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যালের বিচারক হাসান জাহিদ, মাগুরা পুলিশ সুপার মশিউদ্দৌলা রেজা, পাবলিক প্রসিকিউটর কাজী এস্কেন্দার আজম বাবলু, জিপি মাহাবুব মোর্শেদ বাবলা, মাগুরা প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক শামীম খান, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি শফিকুল ইসলাম বাবলু, সাধারণ সম্পাদক সাজিদুর রহমান সংগ্রামসহ বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।