ওসি বলেন, “সকাল সাড়ে ১১টার দিকে আশপাশে গাড়ির সারি থাকলেও থেমে থেমে চলছে। বিকালের মধ্যে হয়ত এ এবস্থা আর থাকবে না।”
Published : 09 Apr 2024, 04:46 PM
শিল্প-কারখানা ছুটির পর গাজীপুরের সড়ক-মহাসড়কে তৈরি হওয়া চাপের কারণে সারারাত ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে ঈদে ঘরমুখো মানুষকে। ভোরে ঘণ্টা দুয়েক সেই চাপ তুলনামূলক কিছুটা কম ছিল। তবে সকাল থেকে তা আবার বাড়তে শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন যাত্রী ও পরিবহন চালকরা।
গাজীপুর মহানগর ও হাইওয়ে পুলিশ জানায়, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের কোনাবাড়ি কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে শ্রীপুর উপজেলার মাওনা, জৈনাবাজার ও গাজীপুর মহাগরের চান্দনা-চৌরাস্তা স্টেশন রোড, চেরেগালী, বোর্ডবাজার, সাইনবোর্ড এলাকায় সোমবার দুপুর থেকে গভীর রাত ৪টা পর্যন্ত যানবাহনের প্রচণ্ড চাপ ছিল।
এরপর তা কমে যায়। মঙ্গলবার সকাল থেকে ১০টা পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে গাড়ির চাপ বেড়ে যায়। উত্তরবঙ্গগামী যানবাহনের চাপ ১১টা থেকে এ অংশে অনেকটাই স্বভাবিক হতে থাকে।
নাওজোর হাইওয়ে পুলিশের ওসি মো. শাহাদত হোসেন জানান, “ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় সোমবার দুপুর থেকে রাতভর যানবাহনের ধীরগতি থাকলেও মঙ্গলবার সকালে কিছুটা কমতে শুরু করে।
“সকাল সাড়ে ১১টার দিকে আশপাশে গাড়ির সারি থাকলেও থেমে থেমে চলছে। বিকালের মধ্যে হয়ত এ এবস্থা আর থাকবে না।”
গাজীপুর আদালতের আইনজীবী সহকারী আব্দুল মতিন বলেন, “মঙ্গলবার সকালে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে গাজীপুরের ভোগড়া এলাকা থেকে এক ঘণ্টায় গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের ফুলপুরের ছনকান্দা এলাকায় পৌঁছে যাই। রাস্তায় কোনো যানজটে পড়তে হয়নি।”
তবে পথে পথে কিছু গাড়ি যাত্রী উঠাতে গিয়ে দামাদামি করছে, এতে পেছনে অন্য গাড়ি আটকে যাচ্ছে এবং সেখানে গাড়ির গতি কিছুটা কমছে বলে জানান আব্দুল মতিন।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে চলাচলকারী সৌখিন পরিবহনের চালক আবুল হোসেন বলেন, “সোমবার দুপুরে কারখানা ছুটির পর ঘরমুখো পোশাক শ্রমিকরা রাস্তায় নেমে পড়লে সড়ক-মহাসড়কে জনজট ও যানজট সৃষ্টি হয়। তা চলে মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত। কিন্ত মঙ্গলবার সকাল ১০টার পরে তা কমে অনেকটাই স্বভাবিক হয়ে যায়।”
গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার মো. আলমগীর হোসেন বলেন, “ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিভিন্ন স্পটে সোমবার দুপুরের পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত গাড়ির প্রচণ্ড চাপ ছিল। কিন্তু কোনো যানজট ছিল না।
“মঙ্গলবার সকালে চান্দনা-চৌরাস্তা ফ্লাইওভারের নিচে ঢাকামুখী গাড়ি মাঝে মধ্যেই কিছুটা জটলা তৈরি হলেও তা দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। ফ্লাইওভারের উপর দিয়ে ময়মনসিংহগামী গাড়ি চলাচলে কোনো সমস্যা নেই।”
যানজটের নিয়ন্ত্রণে কৌশল
উপ-কমিশনার আলমগীর হোসেন বলেন, “এবার আমাদের মূল ফোকাস ছিল রাস্তায় জ্যাম রাখা যাবে না। বিশেষ করে ময়মনসিংহমুখী আউটগোয়িং জ্যাম রাখা যাবে না। যানজটপ্রবণ গাজীপুর মহানগরের চান্দনা-চৌরাস্তা এলাকায় ফ্লাইওভারের উপর দিয়ে ময়মনসিংহগামী তথা উত্তরবঙ্গগামী যানবাহনগুলো যে কোনো মূল্যে সচল রাখার চেষ্টা করেছি।
“যাত্রীবাহী যানবাহনগুলোকে জনবহুল এলাকা টানা পাস করিয়ে দেওয়ায় ঢাকা-ময়মনসিংহ পথে যানজট সৃষ্টি হয়নি। তবে মাঝে মধ্যে গাড়ির টেইল সৃষ্টি হলেও তা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। সোমবার দুপুরের পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত গাড়ির যে চাপ ছিল তা অতিক্রম করতে যাত্রীদের ভোগান্তি হয়নি।”
তিনি আরও বলেন, অপরদিকে ফ্লাইওভারের নিচ দিয়ে ঢাকামুখী কিছু গাড়ি চলতে গিয়ে এই এলাকায় কিছু চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। গাড়িগুলো ঢাকামুখী হলেও ঢাকাগামী নয়। এসব গাড়ির অধিকাংশই খালি এবং চৌরাস্তা মোড় ঘুরে ঢাকা ও টাঙ্গাইলের দিকে যাওয়ার জন্য যাত্রী তুলে। এতে এখানে কিছুটা জটলা সৃষ্টি হচ্ছে। তবে যানজট হয় না। এ ছাড়া ধীরগতির পণ্যবাহী ট্রাক-কাভার্ডভ্যানও এ এলাকা অতিক্রম করতে গিয়ে কিছুটা টেইল সৃষ্টি হচ্ছে।
পণ্যবাহী ছাড়াও মহাসড়কে খালি ট্রাক চলতে দেখা গেছে, এমনকি এসব খালি ট্রাকে ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের বহন করতে দেখা গেছে।
এ সময় ট্রাক, কভার্ডভ্যান চলাচল নিষিদ্ধ থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ জানায়, ঈদের সময় যে পরিমাণ যাত্রী সেই তুলনায় যানবাহন নেই। আবার এ পথে অনেকে সস্তায়ও যেতে চায়। এসব গাড়িগুলোকে রাস্তার মাঝখানে সরাতে গিয়ে আবার যানজট দেখা দেয়। এ কারণে এসব গাড়ির চলাচল পুলিশ ‘ওভারলুক’ করে যায়। দ্রুততার সঙ্গে গাড়িগুলোকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের কমিশনার মো. মাহবুব আলম জানান, “মঙ্গলবার দুপুরের আগ পর্যন্ত গাজীপুর মহানগরের পুরো এলাকায় মহাসড়কগুলোতে ট্রাফিক পরিস্থিতি অনেকটাই স্বভাবিক রয়েছে। তবে চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় যানবাহনের চাপ কিছুটা বেশি। আশা করি, বিকালের মধ্যে এ পরিস্থিতিও অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে যাবে।”