Published : 07 Dec 2023, 01:25 PM
স্ত্রী, কন্যা ও নাতি-নাতনিদের দান করায় সম্পদের পরিমাণ কমেছে বলে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে দাখিল করা হলফনামায় উল্লেখ করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
দান করার ফলে গত পাঁচ বছরে নিট সম্পদ থেকে মন্ত্রীর ২৪ কোটি টাকার বেশি সম্পদ কমেছে বলে হলফনামায় উল্লেখ করেন তিনি।
আ হ ম মুস্তফা কামাল কুমিল্লা-১০ (কুমিল্লা সদর দক্ষিণ, লালমাই ও নাঙ্গলকোট উপজেলা) আসনের নৌকার প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য। তিনি একজন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট। তার গ্রামের বাড়ি জেলার লালমাই উপজেলার দুতিয়াপুরে। তিনি এ আসনের টানা তিনবারের সংসদ সদস্য।
২০১৮ সালের হলফনামায় মোট সম্পদমূল্য উল্লেখ করা হয়েছিল ৬২ কোটি ১৭ লাখ ২১ হাজার ১৫৩ টাকা। পাঁচ বছর পরে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত তার মোট সম্পদ দেখানো হয়েছে ৩৮ কোটি ৩ লাখ ৪৬ হাজার ৬২৩ টাকা। সেই হিসেবে তার সম্পদ কমেছে মোট ২৪ কোটি ১৩ লাখ ৭৪ হাজার ৫৩০ টাকার।
এই সময়ের মধ্যে অর্থমন্ত্রী স্ত্রী, দুই কন্যা এবং পাঁচ নাতি-নাতনিকে দান করেছেন ৩১ কোটি টাকার সম্পত্তি। তিনি স্টক এক্সচেঞ্জ তালিকাভুক্ত কোম্পানির উদ্যোক্তা শেয়ারের দুই কোটি চার লাখ পাঁচ হাজার টাকা কন্যা নাফিসা কামালকে দান করেছেন।
এ ছাড়া স্ত্রীকে স্টক এক্সচেঞ্জের তালিকাভুক্ত নয় কোম্পানির শেয়ার বাবদ দান করেছেন ৪০ হাজার টাকা।
তবে গত পাঁচ বছরে সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী হিসেবে সম্মানী বাবদ তিনি পান সাত কোটি ৬৮ লাখ দুই হাজার ৬৪৮ টাকা। জমি বিক্রি থেকে তার মূলধনী লাভ নয় কোটি ৩৫ লাখ ৫৭ হাজার ৩৮৫ টাকা। গত পাঁচ বছরে মন্ত্রী পারিবারিক খরচ ও আয়কর বাবদ ব্যয় করেছেন আট কোটি ১২ লাখ ৮৯ হাজার ৫৬৩ টাকা।
এ ছাড়া বর্তমানে কোনো ঋণ নেই আ হ ম মুস্তফা কামালের।
আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে অংশ নিতে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দেওয়া হলফনামা থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
কুমিল্লা জেলা প্রশাসক ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ওই আসনের রিটার্নিং কর্মকর্তা খন্দকার মু. মুশফিকুর রহমানের দপ্তর থেকে ওই হলফনামার তথ্য পাওয়া গেছে।
এদিকে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের চেয়ে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদে বর্তমানে এগিয়ে রয়েছেন তার স্ত্রী কাশমেরী কামাল। মন্ত্রীর হাতে নগদ টাকার পরিমাণ ২৫ লাখ ৫৪ হাজার ৫০৯ এবং তার স্ত্রীর ১ কোটি ৭২ লাখ ৪৯ হাজার ১ টাকা।
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে অর্থমন্ত্রীর রয়েছে ৮ কোটি ৪৭ লাখ ২৪ হাজার ৬৪৪ টাকা। অন্যদিকে স্ত্রীর রয়েছে ৬২ লাখ ৯৭ হাজার ৬২৭ টাকা। বন্ড, স্টক একচেঞ্জে মন্ত্রীর রয়েছে ৫ কোটি ৪৪ লাখ ২ হাজার ১৫৩ টাকা। এ ক্ষেত্রে স্ত্রীর নামে রয়েছে ১১ কোটি ৪২ লাখ ১৩ টাকা।
হলফনামায় মন্ত্রীর বার্ষিক আয় দেখানো হয়েছে ১ কোটি ২৩ লাখ ৩০ হাজার ৫১৬ টাকা। এর মধ্যে কৃষি খাত থেকে আয় দেখিয়েছেন ৫ লাখ ৭৬ হাজার এবং পুঁজিবাজার ও সঞ্চয়পত্র থেকে ২১ লাখ ৯৮ হাজার ৭৬৯ টাকা। বাকি টাকা ব্যবসা, সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী হিসেবে সম্মানী ভাতাসহ বিভিন্ন আয় থেকে আসে।
২০১৪ সালের হলফনামায় মন্ত্রীর বার্ষিক আয় উল্লেখ করা হয়েছিল ২ কোটি ৬৯ লাখ ৭৭ হাজার ৬৬৪ টাকা।
নৌকার এই প্রার্থীর নামে মানি লন্ডারিং, দুদক, আয়কর, অপারেশন ক্লিনহার্টসহ ফৌজদারি আইনে মোট ৮টি মামলার তথ্য হলফনামায় উল্লেখ থাকলেও এসব মামলা থেকে তিনি বেকসুর খালাস পেয়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন।
প্রার্থীর হলফনামা ঘেঁটে দেখা গেছে, আ হ ম মুস্তফা কামালের নামে পোস্টাল, সেভিংস, সঞ্চয়পত্র ও অন্যান্য খাতে বিনিয়োগ ৬ কোটি ৩১ লাখ ৪৩ হাজার ৬০০ টাকা এবং স্ত্রীর রয়েছে ২৫ কোটি ৫১ লাখ ৮৯ হাজার ৮৬৫ টাকা।
যানবাহনের ক্ষেত্রে মন্ত্রীর নামে রয়েছে ১ কোটি ৬৯ লাখ ২৮ হাজার ৭১৮ টাকার গাড়ি, অপরদিকে মন্ত্রীর স্ত্রীর নামে রয়েছে ২ কোটি ৩২ লাখ টাকার গাড়ি। এক্ষেত্রেও এগিয়ে মন্ত্রীর স্ত্রী।
সব মিলিয়ে মন্ত্রীর নামে অস্থাবর সম্পদ রয়েছে ৪১ কোটি ৯০ লাখ ৫৩ হাজার ৭১৪ টাকার এবং তাঁর স্ত্রীর নামে রয়েছে ৬২ কোটি ২৭ লাখ ১৯ হাজার ৪৭৮ টাকার।
স্থাবর সম্পদেও তার চেয়ে স্ত্রীর সম্পদ প্রায় দ্বিগুণ। মন্ত্রীর নিজ নামে স্থাবর সম্পদ রয়েছে ২ কোটি ৩০ লাখ ১৭ হাজার ৭৯ টাকার। স্ত্রী কাশমেরী কামালের নামে একাধিক প্লট-বাড়িসহ ৫ কোটি ৪২ লাখ ৬৪ হাজার ৪৪৮ টাকার সম্পদ রয়েছে।