“ঝড়ের স্থায়িত্ব ছিল ১০ থেকে ১৫ মিনিট। এই অল্প সময়ের মধ্যে ঝড়ে গ্রামের অনেক ঘরবাড়ি, গাছগাছালি ও উঠতি ফসলের ক্ষতি হয়েছে।”
Published : 27 Apr 2025, 02:28 PM
রংপুরে কালবৈশাখী ঝড়ে উড়ে গেছে কয়েকশ ঘরবাড়ি ও গাছপালা। ঝড়ো হাওয়া ও শিলাবৃষ্টিতে ঘরবাড়ির পাশাপাশি ফসলেরও ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
শনিবার রাত পৌনে ১১টার দিকে নগরী, গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া, পীরগাছা ও তারাগঞ্চ উপজেলাসহ বিভিন্ন জায়গায় ঝড়ের তাণ্ডব চলে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ঝড়ো বাতাসে আম, লিচু, ভুট্টা, ধান ও পাটসহ বিভিন্ন উঠতি ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ের স্থায়িত্ব কয়েক মিনিট হলেও কোথাও কোথাও বাতাসের বেগে ঘরবাড়ি ও গাছপালার ক্ষতির পাশাপাশি বিভিন্ন স্থাপনা উড়ে গেছে।
গঙ্গাচড়া উপজেলার বড়বিল ইউনিয়নের মন্থনা, বাগপুর, মনিরাম, কোলকোন্দ ইউনিয়নের গোডাউনের হাট, পীরের হাট, কুটিরপাড়, আলমবিদিতর ইউনিয়নের বড়াইবাড়ি, মণ্ডলেরহাট, শয়রাবাড়ি, নোহালি ইউনিয়নের নোহালিহাট, আনোরমারি ও লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী মজিদ মিয়া জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “রাত সাড়ে ১০টার দিকে হঠাৎ কালবৈশাখী ঝড় শুরু হয়। এতে গাছপালা উপড়ে পড়ে এবং বাড়িঘর ভেঙে যায়। কারো কারো ঘরের চাল উড়ে যায়। ধসে পড়ে বাড়ির দেয়াল। ঝড়ে তামাক, ধান, লিচু, আম ও কলাগাছের ক্ষতি হয়েছে।”
পীরগাছা উপজেলার তাম্বুলপুর, ছাওলা, অন্নদানগর, কান্দিসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের বেশ কিছু গ্রামে গাছপালা উপড়ে পড়ে বাড়িঘর ভেঙে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। অনেক সড়কে গাছ ভেঙে পড়ায় যান চলাচল ব্যাহত হয়। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের পাশাপাশি স্থানীয় লোকজন গাছ সরিয়ে নেয়।
তারাগঞ্জ উপজেলার ইকরচালি ইউনিয়নের রমিজ মিয়া বলেন, কালবৈশাখীর তাণ্ডবে তার বাড়ির গাছ উপরে পড়েছে। দুটি পাকাঘর ভেঙে গেছে। পাশাপাশি তামাকসহ ফসলের ক্ষতি হয়েছে।
একই ইউনিয়নের আব্দুল হাদি বলেন, “ইকরচালি বাজার-সংলগ্ন একটি বটের গাছ পড়ে তিনটি পাকা ঘর ভেঙে গেছে। বাজারের অনেক দোকানের ক্ষতি হয়েছে। কোথাও কোথাও গাছপালা উপড়ে পড়ে রাস্তাঘাট বন্ধ হয়ে গেছে।”
স্থানীয় আকের মিয়া বলছিলেন, “তারাগঞ্জ উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে অন্তত দুই শতাধিক ঘরবাড়ির ক্ষতি হয়েছে। এই কালবৈশাখীর কারণে রংপুর-সৈয়দপুর মহাসড়কের বিভিন্ন জায়গায় গাছপালা উপড়ে পড়ে যান চলাচল বন্ধ ছিল। রাতে তারাগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থল থেকে গাছ সরিয়ে গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক করে। ফসলের ক্ষতির পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে।”
ইকরচালি বাজার এলাকার বিজয় মণ্ডল বলেন, “ঝড়ের স্থায়িত্ব ছিল ১০ থেকে ১৫ মিনিট। কিন্তু এই অল্প সময়ের মধ্যে ঝড়ে গ্রামের অনেক ঘরবাড়ি, গাছগাছালি ও উঠতি ফসলের ক্ষতি হয়েছে। কিছু কিছু জায়গায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।”
তারাগঞ্জ, গঙ্গাচড়া ও কাউনিয়ার বিভিন্ন এলাকায় ঝড়ে আহত শিশুসহ বেশ কয়েকজনকে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে রবলে খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ঝড়ের কারণে অনেকের মাথা গোঁজার ঠাঁই ভেঙে পড়েছে। গ্রামগঞ্জে পল্লী বিদ্যুতের পাশাপাশি শহরের বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগের তার ছিঁড়ে গেছে।
কাউনিয়া উপজেলার হারাগাছ পৌর এলাকার সংবাদ কমী ডালিম মিয়া বলেন, রাতে যখন ঘুমানোর প্রস্তুতি চলছিল, তখন হঠাৎ ঝড়বৃষ্টি শুরু হয়। ঝড়ে বাতাসের খুব বেগ ছিল। আমার দুটি ঘরের টিনের চাল উড়ে গেছে। অনেক গাছগাছালি ভেঙে পড়েছে। আশপাশের ঘরবাড়িসহ গ্রামের অনেকের বাড়িঘর ভেঙে তছনছ হয়ে গেছে।
গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী বলেন, রাতে কালবৈশাখী ঝড় থেমে যাওয়ার পর বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে দেখেছি। অনেক বাড়িঘর ভেঙে গেছে। দুর্ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি। তবে তালিকা করে যতটুকু সম্ভব সহযোগিতা করা হবে।
এদিকে টানা কয়েকদিন ধরে দাবদাহের কারণে হাঁপিয়ে ওঠা রংপুর নগরীতে ফিরেছে প্রশান্তি। সামান্য বৃষ্টিতে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছেন নগরবাসী।
নগরীর ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের শিমুল বাগ এলাকার কোহিনুর আকতার কেয়া বলেন, “গত কয়েকদিন অনেক গরম ছিল এলাকায়। হঠাৎ কালবৈশাখী ঝড় হলো, কিন্তু স্থায়িত্ব খুব কম ছিল। তারপরও বৃষ্টি হওয়ায় শান্তি লাগছে।”
একই ওয়ার্ডের বাসিন্দা আবুল কুদ্দুস বলেন, “কালবৈশাখী ঝড়ে শহরের অনেক জায়গায় গাছপালা উপড়ে পড়েছে। কোথাও কোথাও ঘরের টিনের চাল উড়ে গেছে। পুরো শহর লোডশেডিংয়ের কবলে পড়েছে।”
রংপুর আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এই সময়ে বৃষ্টিপাত হয়েছে ২০ মিলিমিটার। বাতাসের গতিবেগ ছিল ৮ নটিক্যাল মাইল। বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
তবে ঝড়ে কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে সেই তথ্য দিতে পারেননি তিনি।
রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল বলেন, কালবৈশাখীর ঝড়ে ক্ষয়ক্ষতি খতিয়ে দেখতে স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশাপাশি সরকারি কর্মকর্তারা কাজ শুরু করেছেন। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ পরে বলা যাবে।