Published : 29 Jul 2024, 11:38 AM
কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে ঢাকায় গুলিতে নিহত হন সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম রাজবাড়ীর আব্দুল গণি। অকস্মাৎ স্বামীকে হারিয়ে সংসার চালাতে ছেলের জন্য চাকরি চাইলেন দিশেহারা লাকী আক্তার।
নিহত আব্দুল গণি (৪৫) রাজবাড়ী সদর উপজেলার আলীপুর ইউনিয়নের রহিমপুর গ্রামের মজিদ শেখের ছেলে। তিনি প্লাম্বার পদে চাকরি করতেন ঢাকার গুলশানের সিক্স সিজনস হোটেলে।
কয়েক মাস আগে খানখানাপুর ইউনিয়নের নতুন বাজার এলাকায় ঘর তোলেন আব্দুল গণি। তার স্ত্রী ও চার বছর বয়সী মেয়ে সেখানেই থাকেন। আর ছেলে আলামিনকে নিয়ে গণি ঢাকায় থাকতেন বলে জানান ওই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম ইকবাল হোসেন।
নিহতের পরিবারের বরাত দিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান ইকবাল বলেন, গত ১৯ জুলাই সকালে গুলশান এলাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে সংঘর্ষের সময় মাথায় গুলি লেগে মারা যান গণি।
২১ জুলাই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার লাশ পান স্বজনরা। ওইদিন রাতেই লাশ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে দাফন করা হয়।
গণির বাবা মজিদ শেখ বলেন, গত ১৯ জুলাই সকালে ছেলের সঙ্গে তার ফোনে কথা হয়। পরে সাড়ে ১০টার দিকে একজন ফোন করে জানতে চান এই নম্বর কার।
“আমি বলি, আমার ছেলের। তখন অপর প্রান্তের ব্যক্তি বলেন, ‘আপনার ছেলের গুলি লেগেছে; হাসপাতালে আছে। ঢাকায় কেউ থাকলে পাঠিয়ে দেন’।
“এরপর আমি আমার ছোট ছেলেকে ফোন করে হাসপাতালে যেতে বলি। আমার ছেলে হাসপাতালে গিয়ে জানতে পারে, গণি আর নেই।”
নিহতের স্ত্রী লাকী আক্তার জানান, গত ১৫ বছর ধরে তার স্বামী ঢাকায় থাকেন। আগে তিনিও ঢাকায় ছিলেন। চার বছর আগে মেয়ে হওয়ার পর গ্রামে চলে যান।
তিনি বলেন, “গত শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে বাসা থেকে বের হয়ে কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন আমার স্বামী। শাহজাদপুরের বাঁশতলায় আন্দোলনের মধ্যে পড়ে তিনি গুলিবিদ্ধ হন।
“১০টার দিকে আমার শ্বশুর ফোন করে জানান, গণির মাথায় গুলি লেগেছে। তাকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে গেছে। আমি আমার ছেলেকে জানালে, হাসপাতালে গিয়ে দেখে, তার বাবার লাশ পড়ে আছে।”
লাকী বলেন, “আমার স্বামী কোনো রাজনীতি করত না। সে অফিসের কাজে বাইরে বের হয়। কারা তাকে মারল? কেন মারল? স্বামী হত্যার বিচার কার কাছে চাইব?
“এখন আমার ছেলে-মেয়েকে মানুষ করব কীভাবে? ঘর করার জন্য লোন তোলা আছে, সেই লোনের কিস্তিই কীভাবে দেব? সংসার বাঁচানোর জন্য হলেও আমার ছেলের একটা চাকরি চাই।”
তার ছেলে আলামিন শেখ বলেন, এসএসসি পাসের বাবার সঙ্গে তিনি ঢাকায় চলে যান। সেখানে শেফের কাজ শেখেন।
“আব্বুর সাথে এক বাসাতেই থাকতাম। সেদিন সকাল ১০টার দিকে মা ফোন দিয়ে বলেন, তোর আব্বুর মাথায় গুলি লেগেছে, খবর নে। সাথে সাথে বাসা থেকে বের হয়ে হাসপাতালে গিয়ে দেখি, আব্বুর মরদেহ পড়ে আছে।
“আমি এখনও বেকার। বাড়িতে মা আর ছোট বোন। এখন আমরা কীভাবে চলব?”
খানখানাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন বলেন, “পরিবারে একমাত্র উপার্জনকারী ছিলেন আব্দুল গণি। তার মৃত্যুতে স্ত্রী-সন্তানরা অসহায় হয়ে পড়েছে। আব্দুল গণির সংসার চালানোর ব্যবস্থা করে দিতে সংশ্লিষ্টদের কাছে দাবি জানাই।”