বাঁশ ব্যবসার ক্ষেত্রে আপাতত কোনো ত্রুটি বা জটিলতা দেখছি না, বলেন চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা।
Published : 04 Feb 2025, 12:07 AM
এক সময় রাঙামাটির কাপ্তাইয়ে কর্ণফুলী পেপার মিলসে পাহাড়ে উৎপাদিত বাঁশ দিয়েই কাগজ তৈরি হত। সেই কাগজ ছড়িয়ে যেত দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
সময়ের পরিক্রমায় কর্ণফুলী মিলের কাগজের চাহিদা আগের মত নেই। তবে পাহাড়ে বাঁশের কারবার এখনো চলছে। মিলমুখি ব্যবসা না থাকলেও এ অঞ্চলের বাঁশের চাহিদা রয়েছে দেশজুড়ে।
পাহাড়ের বন-জঙ্গলে উৎপাদিত বাঁশ স্থানীয় ব্যবসায়ীদের হাত দিয়ে বাজারজাত হচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
তবে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বলছেন, বনবিভাগ আগের চেয়ে বাঁশে শুল্কহার বাড়িয়েছে প্রায় দ্বিগুণ।
বাঁশের কারবারে খরচ বাড়ায় স্থানীয় বাগান মালিকদের কাছ থেকে অনেকটা কম দামেই বাঁশ কিনতে হচ্ছে তাদের।
বাঁশ ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় উৎপাদিত বাঁশের চাহিদা থাকলেও ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না খুচরা ব্যবসায়ীরা।
২০২৪-২৫ অর্থবছর থেকে শুল্কহার, পরিবহন খরচ বাড়ার কারণে বেড়েছে সংশ্লিষ্ট খাতের খরচ। এতে বাঁশ ব্যবসায় লাভ কমে আসছে বলে জানিয়েছেন তারা।
রাঙামাটি সদর উপজেলার কুতুকছড়ি বাজারে গিয়ে দেখা যায়, শ্রমিকরা খালের পানিতে বাঁশের চালা নামাচ্ছেন। কেউ কেউ সেই বাঁশ বেঁধে প্রক্রিয়াজাত করছেন।
আবার কেউ কেউ বাজারজাতকরণের উদ্দেশ্যে কাঁধে করে বাঁশ এনে ট্রাকে তুলছেন।
এসব বাঁশ আসে পার্বত্য জেলা রাঙামাটির কাউখালী, কাপ্তাই, নানিয়ারচর উপজেলা এবং জেলা সদরের বিভিন্ন এলাকা থেকে।
পাহাড়ে উৎপাদিত এসব বাঁশের চাহিদা স্থানীয়ভাবে হ্রস পেলেও ঢাকার সাভার, ফরিদপুর, কুমিল্লার দাউদকান্দি, ভৈরব, নোয়াখালী, টেকনাফ, শেরপুরসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলে যাচ্ছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের সংরক্ষিত বনাঞ্চলে প্রাকৃতিকভাবে বাজালি, ছোটিয়া, মুলি, টেংরা মুলি, ওরাহ, মিতিঙ্গা, ডলু, নলি, বাড়িওয়ালা, ছাতারবাটা ও কালিছড়ি জাতের বাঁশ উৎপাদন হচ্ছে।
পাহাড়ের বিভিন্ন বাগান থেকে বাঁশ কেনেন রাঙামাটির কুতুকছড়ি এলাকার ব্যবসায়ী আব্দুল হক।
তিনি বলেন, “দেশের বিভিন্ন এলাকায় রাঙামাটির বাঁশের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। কিন্তু আমরা চাহিদা অনুযায়ী বাঁশ দিতে পারছি না। আগে যে আকৃতির বাঁশে দুই টাকা করে শুল্কহার দিতাম, এখন সেটাতে চার টাকা দিতে হচ্ছে। আবার কিছু বাঁশে সাত টাকার বদলে ১৪ টাকা করে শুল্ক নিচ্ছে বনবিভাগ।”
তার ভাষ্য, “আমাদের খরচ বেড়ে গেছে। কিন্তু পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে আমরা আগের চেয়ে বেশি দাম নিতে পারছি না।”
তার অভিযোগ, “৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর পথে পথে চাঁদাবাজি কমলেও এখন বেড়েছে। আগে এক ট্রাক বাঁশ শেরপুর যেতে বনবিভাগের শুল্ক, টোল ও পরিবহণসহ এক লাখ টাকার মত খরচ হত। এখন সেটা ২০ হাজার টাকার মত বেড়েছে।
“আমরা তাই স্থানীয়দের কাছ থেকে বাঁশ ক্রয় কিছুটা কমিয়ে দিয়েছি। আবার বাজার অনুযায়ী ন্যায্য দাম না পাওয়ায় প্রান্তিক চাষিরাও বাঁশ ছেড়ে অন্য বাগান গড়ে তুলছেন।”
শুল্কহার বাড়ানোর প্রশ্নে পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তর বনবিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলছেন, “দেশের জন্য রাজস্ব বাড়াতে বাঁশে শুলক্ কিছুটা বাড়ানো হয়েছে।”
রাঙামাটি বনবিভাগের তথ্য মতে, সদর, জুরাছড়ি, বিলাইছড়ি ও বরকল, মাচালং, বাঘাইহাট, শিজক পাবলাখালী গেইম সেঞ্চুয়ারি, ছোট মেরুং, বড় মেরুং, কবাখালী, তারাবুনিয়া, ঘাগড়া, কাঁশখালী, ঘিলাছড়ি, মুবাছড়ি, কলমপতি, উল্টাছড়ি, লংগদু, ইয়ারিংছড়ি, মাইনিমুখ, সাপছড়ি, মানিকছড়ি, হেমন্ত মোন, বসন্ত মোন, কাইন্দ্যা, ফুলগাজী, বাপেরছড়া, কুতুবদিয়া, ভার্য্যতলী, বারদপোলা, সাক্রাছড়ি, বহালতলী, ঘিলাছড়ি, ছোট মহাপুরমপুর, হাজাছড়ি, বুড়িঘাট, তৈ চাকমা, ক্যাঙ্গালছড়ি, লেমুছড়ি, চৌংড়াছড়ি, থলিপাড়া, নুনছড়ি, বানরকাটা, ছোট ধুরুং, জারুলছড়ি, দুল্যাতলী, ময়ূরখীল, দেবালছড়ি, গোইনছড়ি, রাঙাপানি, রাজবিলা, রাইখালী, রাজস্থলী, ধনুছড়ি, খাগড়াছড়ি সদর, পানছড়ি, মাটিরাঙ্গা, গুইমারা, রামগড়, মানিকছড়ি এলাকায় বাঁশ উৎপাদন, আহরণ করা হয়।
রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, “সারা দেশেই পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় উৎপাদিত বিভিন্ন জাতের বাঁশের চাহিদা রয়েছে। এখন তো কক্সবাজারের টেকনাফ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রচুর বাঁশ যায় রাঙামাটি থেকে।”
বাঁশ ব্যবসার ক্ষেত্রে ‘আপাতত’ কোনো ত্রুটি বা জটিলতা দেখছেন না তিনি।
“তবে শুল্কহার যেটা বাড়ানোর কথা বলা হচ্ছে, সেটা অনেক আগের। সেজন্য এটা কিছুটা বাড়ানো হয়েছে, দেশের জন্যও তো কিছু রাজস্ব দরকার”, বলেন এই বন কর্মকর্তা।