এ ঘটনায় ভুল স্বীকার করে যেকোনো শাস্তি মেনে নিতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন শিক্ষাকরা।
Published : 15 Feb 2024, 10:16 PM
ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার একটি বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ভুলে প্রবেশপত্র না পেয়ে এসএসসিতে বসা হলো না ১৪ পরীক্ষার্থীর। এ ঘটনায় শিক্ষকরা ভুল স্বীকার করে যেকোনো শাস্তি মেনে নিতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন।
উপজেলার পাগলা থানা এলাকার পল্লী সেবক বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে গফরগাঁও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জানান।
তিনি বলেন, এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে অন্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ওই ২২ পরীক্ষার্থী ফরম পূরণ করেন। তবে সেটি সঠিকভাবে পূরণ করা হয়নি।
বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার আগের দিন বুধবার বিদ্যালয়ে গিয়ে ওই পরীক্ষার্থীরা জানতে পারেন তাদের প্রবেশপত্র আসেনি।
পরে পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের চাপে প্রবেশপত্র আসবে বলে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের আশ্বস্ত করেন। তবে, শেষ পর্যন্ত আটজনের প্রবেশপত্র এলেও বাকি ১৪ জন পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি।
এ ঘটনায় বুধবার ওই ১৪ পরীক্ষার্থী গফরগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।
অভিযোগ থেকে জানা গেছে, ওই ২২ শিক্ষার্থী যথাসময়ে তাদের রেজিস্ট্রেশন ফি ও পরে এসএসসির ফরম পূরণের টাকা পরিশোধ করেন। সে সময় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ফরমপূরণ হয়েছে বলে তাদের অবগত করেন। বুধবার বিদ্যালয়ে গিয়ে পরীক্ষার্থীরা জানতে পারে তাদের রেজিস্ট্রেশনেই হয়নি। ফলে তাদের প্রবেশপত্র আসেনি।
যেখানে রেজিস্ট্রেশন হয়নি সেখানে ফরম পূরণের জন্য কর্তৃপক্ষ কীভাবে টাকা নিলেন এমন প্রশ্ন সবার।
ক্ষোভ প্রকাশ করে পরীক্ষার্থী মেঘলা পারভীন বলেন, “ফি দিয়েছি, তাহলে কেন আমাদের রেজিস্ট্রেশন হয়নি। আর রেজিস্ট্রেশন না হলে আমাদের কাছ থেকে ফরম পূরণের টাকা নিল কেন।”
“প্রধান শিক্ষকসহ অন্যরা আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। আমাদের জীবন থেকে একটি বছর হারিয়ে যাবে তা মেনে নিতে পারছি না।”
পরীক্ষার্থী জিহাদ আল আবিদের বাবা আব্দুল জলিল বলেন, “মঙ্গলবার বিকালে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানান, আপনার ছেলের ফরম পূরণ হয়নি। কারণ হিসেবে তারা রেজিস্ট্রেশন না হওয়াকে উল্লেখ করেছেন।”
নিজেদের ভুল স্বীকার করে ওই বিদ্যালয়ের আইসিটি শিক্ষক রেজাউল হক বলেন, “আমাদের ভুলের কারণে ১৪ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি। অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের বোঝানোর চেষ্টা করছি। যেহেতু ভুল করেছি, যেকোনো শাস্তি মেনে নেব।”
প্রধান শিক্ষক আব্দুল হান্নান বলেন, “আইসিটি শিক্ষক রেজাউল খুবই দক্ষ। কিন্তু রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে এমন ভুল কীভাবে হল বুঝতে পারছি না। রেজিস্ট্রেশন না হওয়ায় ওই ১৪ শিক্ষার্থীর আর পরীক্ষা দিতে পারবে না। বাকি আটজনের ছবি ও গ্রুপের ভুল ছিল, তা সমাধান হয়ে গেছে।”
তবে রেজিস্ট্রেশন না হওয়ার পরেও ফরম পূরণের জন্য কেন টাকা নেওয়া হয়েছে? এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি প্রধান শিক্ষক।
রেজিস্ট্রেশন না হওয়ার পরও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ফরম পূরণের জন্য কেন টাকা নিয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম।
ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু তাহের বলেন, ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পরীক্ষার একদিন আগে বোর্ডে যোগাযোগ করেছিলেন। কিন্তু শিক্ষার্থীদের নিবন্ধন না থাকায় প্রবেশপত্র দেওয়া সম্ভব হয়নি।
এ ঘটনার সম্পূর্ণ দায় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের; দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।