শুক্রবার শুরু হওয়া ১৫০ বছরের পুরোনো এই মেলা চলবে আগামী রোববার পর্যন্ত।
Published : 26 Apr 2025, 06:07 PM
টাঙ্গাইলে শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী ‘জামাই মেলা’। প্রায় ১৫০ বছর ধরের পুরোনো এই মেলার প্রধান আকর্ষণ জামাই। মেলা উপলক্ষে আশপাশের অন্তত ৪০ গ্রামের জামাইরা শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে আসেন।
শুক্রবার সদর উপজেলার রসুলপুর বাছিরননেছা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এ মেলার উদ্বোধন করা হয়; যা চলবে রোববার পর্যন্ত। মেলাকে কেন্দ্র করে এলাকাজুড়ে চলছে উৎসবের আমেজ। মেলায় এসে খুশি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষও।
এদিকে মেলায় অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন টাঙ্গাইল সদর ফাঁড়ির ওসি আবু ছাইদ।
সনাতন পঞ্জিকা অনুসারে প্রায় ১৫০ বছর ধরে প্রতিবছরের বৈশাখ মাসের ১১ তারিখ মেলা শুরু হয়ে ১৩ তারিখ পর্যন্ত চলে। প্রথম দিন রসুলপুর মেলা, বাকি দুই দিন ‘জামাই মেলা’ বলে পরিচিত।
তবে মেলার প্রধান আকর্ষণ হলো জামাই। এই মেলাটি এলাকার মানুষের কাছে ঈদ বা পূজাপার্বণের মতোই উৎসব। মেলাটি বৈশাখী মেলা হিসেবে ব্রিটিশ আমলে শুরু হলেও পরে এটি ‘জামাই মেলা’ হিসেবে পরিচিতি পায়।
বৈশাখের ভ্যাপসা গরম অপেক্ষা করে রসুলপুর ও এর আশেপাশের বিবাহিত নারীরা তাদের স্বামীকে নিয়ে বাবার বাড়ি চলে আসেন। আর জামাইকে বরণ করে নিতে শ্বশুর-শাশুড়িরা বেশ আগে থেকেই নানা প্রস্তুতি গ্রহণ করেন।
মেলার দিন শাশুড়ি মেয়ের জামাইয়ের হাতে কিছু টাকা তুলে দেন। সেই টাকা দিয়ে জামাই বাজার করে এনে শ্বশুরবাড়ির লোকদের খাওয়ান। তিন দিনে রসুলপুর, গালা ইউনিয়নের আশপাশ গ্রামের লক্ষাধিক মানুষের সমাগম ঘটে এই মেলায়।
মেলায় বিভিন্ন ধরনের মুখরোচক খাবারের দোকানসহ নারীদের প্রসাধনী এমনকি খাট-পালং সবই পাওয়া যায়। এ ছাড়া শিশুদের জন্য পাওয়া যায় বিভিন্ন খেলনাসামগ্রী।
এবার মেলায় বিশেষ আকর্ষণ পঞ্চগড় থেকে আসা বিল্পবের ‘মৃত্যুকুপে’ মোটরসাইকেল চালানো। মেলার দক্ষিণ পাশে বসা এই খেলা দেখতে ভিড় করছেন নারী, শিশুসহ সব বয়সি মানুষ।
রসুলপুর গ্রামের হৃদয় বলেন, “আমরা যখন ছোট ছিলাম, তখনও দাদার কাছে এই মেলার কথা শুনেছি। এটি টাঙ্গাইল জেলার মধ্যে সবচেয়ে এতিহ্যবাহী বড় মেলা।”
নাগরপুর থেকে আসা মিরাজুল বলেন, “জামাই মেলার নাম শুনেই এসেছি। আসার পর দেখতেছি শুধু জামাই নয়, জামাই ছাড়াও নারী-পুরুষ থেকে বিভিন্ন বয়সের সবাই মেলায় আসছেন। আমিত এসে অবাক! যা হোক ভালো, উৎসবে সবারই আসার অধিকার রয়েছে।”
‘আসেন আসেন, আপনি খুশি, আমি হাসি, সেই মিষ্টির নাম হাসি-খুশি’ বলে বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি বিক্রি করছেন কালিহাতীর হারেজ মিয়া। তিনি বলেন, এসব বড় বড় মেলায় তাদের এই বাহারি রঙের মিষ্টি ক্রেতাদের দেখানোর সুযোগ হয়। তাতে বিক্রিবাট্টাও ভালো হয়।
গালা দক্ষিণ পাড়া গ্রামের বাবলু বলেন, “প্রতিবছরই শ্বশুরবাড়ি থেকে মেলায় আসার দাওয়াত পাই। এই মেলা আমাদের জামাইদের কাছে খুব আকর্ষণীয়। মেলাকে কেন্দ্র করে অনেক আত্মীয়ের সঙ্গে দেখা হয়, তাদের সঙ্গে ভাব বিনিময় হয়। সব মিলিয়ে মেলার তিন দিন আনন্দে মেতে উঠি।”
মেলায় ঘুরতে আসা এনজিও কর্মকর্তা খন্দকার সোহেল বলেন, “প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী মেলা শুনে প্রথমবারের মতো ঘুরতে এসেছি। তবে মেলায় কিছুটা অব্যবস্থাপনা পরিলক্ষিত হচ্ছে। আশা করি, মেলা কর্তৃপক্ষ বিষয়গুলো নজরে আনবেন।
“বিশেষ করে যদি সম্ভব হয়, মেলাটি আরও বড় জায়গায় আয়োজন করলে অনেক সুন্দরভাবে দর্শনার্থীরা উপভোগ করতে পারবেন।”
মেলায় নাটোর থেকে আসা কাঁচাগোল্লা ব্যবসায়ী সালাম বলেন, “বাড়তি লাভের আশায় কয়েক বছর ধরে এই মেলায় কাঁচা গোল্লা নিয়ে আসি। অন্য মেলার চেয়ে এ মেলা অনেক নিরাপদ এবং বেচাকেনাও ভালো হয়।”
গালা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেলা কমিটির আহ্বায়ক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, প্রতিবছরের ন্যায় এবারও উৎসবমুখর পরিবেশে মেলা শুরু হয়েছে। মেলায় অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে স্বেচ্ছাসেবকসহ পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন রয়েছে।