বৃহস্পতিবার দুপুর ১টায় ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুটির মৃত্যু হয় বলে আইএসপিআর জানিয়েছে।
Published : 13 Mar 2025, 04:36 PM
মাগুরায় ধর্ষণের শিকার ৮ বছরের শিশুটি মারা গেছে। এ নিয়ে শোকের পাশাপাশি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন মাগুরার বিশিষ্টজনেরা। সাধারণ মানুষ দাবি তুলেছেন আসামিদের প্রকাশ্যে সর্ব্বোচ্চ শাস্তির।
বৃহস্পতিবার দুপুর ১টায় ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুটির মৃত্যু হয় বলে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর- আইএসপিআর জানিয়েছে।
শিশুটির মৃত্যুর সংবাদে জেলায় শোকাতুর-শান্ত পরিবেশ বিরাজ করছে। এখনো শহরে কোনো বিক্ষোভ দেখা যায়নি।
তবে মাগুরা জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শাহেদ হাসান টগর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। মাগুরায় এ ধরনের ঘটনা এটাই প্রথম। কোনোভাবেই এ ধর্ষণ-মৃত্যুর বিষয়টি মেনে নিতে পারছি না।”
তিনি বলেন, “আমরা আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নিয়েছি ধর্ষকদের পক্ষে কোনো আইনি সহায়তা দেওয়া হবে না। দ্রুততম সময়ের মধ্যে ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জন্য আইনজীবী সমিতি সব ধরনের সহায়তা করবে।”
জেলা মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক লাবণী জামান বলেন, “সারাদেশে নারীর প্রতি সহিংসতা বেড়ে চলেছে। যে কারণে মাগুরায় এ ধরনের মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে।
“আমরা মহিলা পরিষদের পক্ষ থেকে শিশুটির ধর্ষকের অবিলম্বে ফাঁসির দাবি জানাচ্ছি। বিচারকাজ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত জেলা মহিলা পরিষদ সবসময় শিশুটির পরিবারের পাশে থাকবে।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক মো. হুসাইন বলেন, ৮ বছরের শিশুকে ধর্ষণ ও মৃত্যুর ঘটনায় তারা চরমভাবে ক্ষুব্ধ।
তিনি অবিলম্বে শিশু ধর্ষণ-মৃত্যুর ঘটনায় জড়িতদের ফাঁসির দাবি করে তিনি বলেন, “এ ঘটনায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে ধর্ষকদের ফাঁসি কার্যকর করা না হলে ছাত্র-যুব সমাজ নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মাগুরায় দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে।”
শিশুটির ধর্ষণ-মৃত্যুর ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে জেলা গণকমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী শম্পা বসু বলেন, “শিশুটির মৃত্যুতে আমরা শোকাহত, একইসঙ্গে আমরা অবিলম্বে ধর্ষকের বিচার দাবিতে আন্দোলনে মাঠে থাকব।”
এ বিষয়ে মাগুরা শহরের রিকশা চালক আব্দুর রহমান ‘ধর্ষকের প্রকাশ্যে ফাঁসি’ দাবি করে।
মাগুরা শহরতলীর নিজনান্দুয়ালী গ্রামে বোনের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে ৬ মার্চ শিশুটি ধর্ষণের শিকার হয় বলে অভিযোগ করে তার পরিবার।
শিশুটির মা গত ৮ মার্চ মাগুরা সদর থানায় চারজনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার মামলা করেন।
মামলার আসামিরা হলেন- শিশুটির ভগ্নিপতি সজীব হোসেন (১৮) ও বোনের শ্বশুর হিটু মিয়া (৪২), সজীবের অপ্রাপ্তবয়স্ক ভাই (১৭) এবং তাদের মা জাবেদা বেগম (৪০)। তাদের চারজনকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মামলার নথিতে বলা হয়, সজীবের সহায়তায় তার বাবা হিটু মিয়া শিশুটিকে ‘ধর্ষণ’ করেন। বিষয়টি জাবেদা ও তার ছোট ছেলেও জানতেন। ঘটনা ধামাচাপা দিতে শিশুটিকে হত্যার চেষ্টা চালান তারা।
নির্যাতনের শিকার শিশুটিকে প্রথমে মাগুরা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় সেখান থেকে নেওয়া হয় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য ৬ মার্চই তাকে ঢাকা মেডিকেলের পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (পিআইসিইউ) ভর্তি করা হয়। পরে শুক্রবার রাতে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়।
ঢাকা মেডিকেলের চিকিৎসকরা শনিবার জানিয়েছিলেন, শিশুটির অবস্থা ‘সংকটাপন্ন’। এরপর তার চিকিৎসায় মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হলেও সন্ধ্যায় তাকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল-সিএমএইচে নেওয়া হয়।
বৃহস্পতিবার সকালে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের এক বার্তায় বলা হয়, “আজ সে আরও দু’বার কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের শিকার হয়েছে। দ্বিতীয়বার প্রায় ৩০ মিনিট সিপিআর দেওয়ার পর হৃৎস্পন্দন ফিরেছে, তবে তার মস্তিষ্ক কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে না।
“কোমা স্কেলে (জিসিএস) মাত্রা ৩, যা গভীর অচেতন অবস্থার ইঙ্গিত দেয়। শিশুটির রক্তচাপ ও অক্সিজেনের মাত্রাও বিপজ্জনকভাবে কম।''
এরপর দুপুরে শিশুটির মৃত্যুর খবর দেয় আইএসপিআর। সেখানে সেনাবাহিনীর তরফে শোক প্রকাশ করা হয়।
এদিকে, শিশুটির মৃত্যুতে তার গ্রামেও শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
ওই গ্রামের বাসিন্দা ও শিশুটির প্রতিবেশী ওহিদুর রহমান বলেন, মর্মান্তিক এ ঘটনায় তারা বাকরুদ্ধ।
তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে বিচার কাজ সম্পন্ন করে ধর্ষকের ফাঁসির দাবি জানান।
মেয়েকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন শিশুটির প্রতিবন্ধী বাবা, তিনি বার বার কান্নায় ভেঙে পড়ছেন। এর মধ্যেই তিনি ‘ধর্ষকের গোটা পরিবারসহ’ সবার ফাঁসির দাবি জানিয়েছেন।
তবে কখন শিশুটির দাফন সম্পন্ন হবে এ বিষয়টি তিনি নিশ্চিত করতে পারেননি।
এ বিষয়ে প্রতিবেশী অহিদুর রহমান জানান, ঢাকা থেকে শিশুটির লাশ সন্ধ্যায় হেলিকপ্টারে মাগুরায় পৌঁছাবে। পরে বাড়িতে
সদর থানার ওসি আয়ুব আলী জানান, ধর্ষণের শিকার শিশুটির মৃত্যুর ঘটনায় আইনগত বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। এদিকে তারা আসামিদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রেখেছেন।
অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে তারা সতর্ক রয়েছেন বলে জানান ওসি।
আরও পড়ুন-
মাগুরার ধর্ষণের শিকার শিশুটিকে বাঁচানো গেল না
মাগুরার শিশুকে ধর্ষণ: ১৮০ দিনে বিচার শেষ করার নির্দেশ
মাগুরার শিশুটিকে দেখলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, বললেন 'সরকার তৎপর'
'সঙ্কটাপন্ন' অবস্থায় মাগুরার সেই শিশুটিকে নেওয়া হল সিএমএইচে
মাগুরায় শিশু 'ধর্ষণের' ঘটনায় তিন দিন পর মামলা, ৪ আসামির সবাই গ্রেপ্তার
মাগুরার 'ধর্ষণের শিকার' শিশুটি লাইফ সাপোর্টে
মাগুরার শিশুটির অবস্থা 'সংকটাপন্ন', চিকিৎসায় মেডিকেল বোর্ড
মাগুরায় 'শিশু ধর্ষণ': থানা ঘেরাও করে জনতার বিক্ষোভ
'ধর্ষণের শিকার' শিশুটিকে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি, ভগ্নিপতি ও বোনের