স্থানীয়রা ৬ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখার পর পুলিশ গিয়ে তাদের মুক্ত করে।
Published : 29 Apr 2024, 11:56 AM
ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ এনে করা বিক্ষোভে ইউপি সদস্য ও স্কুল পরিচালনা কমিটির এক সদস্যের ওপর চড়াও হয়ে ছেলেসহ অবরুদ্ধ হন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।
স্থানীয়রা ৬ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখার পর পুলিশ গিয়ে তাদের মুক্ত করে।
স্থানীয় দাওগাঁও ইউনিয়নের ইউপি সদস্য বিরাজ আলীর দাবি, স্কুল পরিচালনা কমিটির সদস্য ও অন্য শিক্ষকদের বিরুদ্ধে মামলাসহ অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ আছে মুক্তাগাছার কাজী নজরুল ইসলাম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রিয়াজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে।
এসব অভিযোগে রোববার সকালে তার বহিষ্কারের দাবিতে প্রতিষ্ঠানটির সামনের সড়কে বিক্ষোভ সমাবেশের করেন এলাকাবাসী।
বিষয়টি জানতে পেরে রিয়াজ উদ্দিন, তার ছেলে রেজুয়ান আহমেদ বিজয় ৬/৭ জন বহিরাগত নিয়ে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে গিয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য বিরাজ আলী ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য বিল্লাল হোসেনকে কিল-ঘুসি মারেন।
পরে স্থানীয়রা তাদের মারধর করে ছেলে বিজয়কে বিদ্যালয়ের শৌচাগারে অবরুদ্ধ করেন।
অন্যদিকে, প্রধান শিক্ষক তার কক্ষে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেন।
এসময় বিক্ষুব্ধরা বিদ্যালয়ের ভেতরে প্রবেশ করতে চাইলে গেইটে তালা দেওয়া হয়।
পরে বিদ্যালয়ে হামলার আশঙ্কায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়।
বিরাজ আলী বলেন, “দীর্ঘদিন পর আজকে স্কুল খুললে আমরা প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে দেখা করতে যাই। এ সময় স্থানীয়রা তার বহিষ্কারের দাবিতে মানববন্ধন করবে বিষয়টি জানালে প্রধান শিক্ষকের ছেলে বিজয় ও তার সঙ্গে আসা ৬/৭ জন আমাকে এবং ম্যানেজিং কমিটির সদস্য বিল্লাল হোসেনকে কিল ঘুসি মারেন। স্থানীয়রা তাদের ওপর পাল্টা হামলা করেন।
এসময় বিজয় কিছুটা আহত হলেও তাকে বিদ্যালয়ের শৌচাগারের ভেতর অবরুদ্ধ করা হয়।
স্থানীয় আবু সাঈদ বলেন, “২৮ মার্চ প্রধান শিক্ষকের নির্দেশনা মোতাবেক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির নির্বাচনে নির্বাচিত অভিভাবক সদস্যরা তাদের পছন্দ মত সভাপতি নির্বাচিত করতে চাইলে বাঁধা হয়ে দাঁড়ান রিয়াজ উদ্দিন।”
তিনি বলেন, “বিষয়টি কেন্দ্র করে প্রধান শিক্ষক বেশ কয়েকজনের নামে মামলাও করেছেন। এর আগে তার বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের গাছ কেটে বিক্রিসহ নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে। তিনি এলাকার মানুষকে কোনো মূল্যায়ন না করে সবসময় প্রভাব কাটিয়ে চলছেন। প্রধান শিক্ষককে বহিষ্কারের পাশাপাশি বিচার না করা হলে আমরা আন্দোলন অব্যাহত রাখব।”
বিদ্যালয়টির সহকারী শিক্ষক নাজমুল কবীর সেলিম বলেন, “গত ১৫ বছর ধরে এই প্রতিষ্ঠানের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা আজিজুল হক ইদু। তার সময়ে প্রতিষ্ঠানটির খারাপ ছাড়া ভালো কিছু হয়নি। এবারও প্রধান শিক্ষক ইদুকেই সভাপতি করার জন্য আমাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করছেন, তাতে আমরা রাজি না হওয়ায় আমিসহ বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে প্রধান শিক্ষক তাকে মারধরের অভিযোগ এনে মামলা করেছেন।”
মুক্তাগাছা থানার ওসি ফারুক আহমেদ বলেন, “বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি ও প্রধান শিক্ষকের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব চলছে; এরই অংশ হিসেবে আজকে বিদ্যালয়ে উত্তপ্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়। স্থানীয়রা প্রধান শিক্ষক, তার ছেলেসহ তিনজনকে অবরোধ করে রাখলে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে প্রধান শিক্ষকসহ তিনজনকে নিরাপদে মুক্ত করা হয়।”
এদিকে, তাকে বাঁচতে গিয়ে ছেলে মারধরের শিকার হয়েছেন জানিয়ে প্রধান শিক্ষক রিয়াজ উদ্দিন বলেন, “আহত ছেলেকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেছি।”
রিয়াজ উদ্দিন আরও বলেন, “তিল তিল করে প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেছি। সেই প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করার জন্য সন্ত্রাসীরা এক হয়েছে; তাদের দল বড়, তাই আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে তারা এসব করছে। অবরুদ্ধ অবস্থায় পুলিশ আমাদের উদ্ধার করেছে।”
এ ঘটনায় আইনি পদক্ষেপ নেবেন কী না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “ছেলেটা সুস্থ হওয়ার পর চিন্তা-ভাবনা করব, কী করা যায়।”