পুলিশ বলছে, মিয়ানমার অভ্যন্তরে সংঘাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে কৌশলে পালিয়ে এসে চিকিৎসার জন্য মিথ্যার আশ্রয় নিতে পারেন ওই রোহিঙ্গা যুবক।
Published : 14 Jun 2024, 11:24 PM
কক্সবাজার সদর হাসপাতালে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় চিকিৎসাধীন এক রোহিঙ্গাকে নিয়ে ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে।
ওই রোহিঙ্গার দাবি, সেন্ট মার্টিন থেকে ট্রলারে করে টেকনাফে আসার পথে মিয়ানমারের জলসীমা থেকে ছোড়া গুলিতে তিনি আহত হয়েছেন।
তবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসন বলছে, টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। ওই রোহিঙ্গা যুবকের দাবি করা ঘটনার দিন সেন্ট মার্টিন থেকে কোনো ট্রলার নাফ নদী হয়ে টেকনাফ আসেনি।
মিয়ানমারের সংঘাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে কৌশলে পালিয়ে এসে চিকিৎসার জন্য তিনি মিথ্যার আশ্রয় নিচ্ছেন বলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও কর্মকর্তাদের সন্দেহ।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ওই রোহিঙ্গা যুবকের নাম আলী জোহার, বয়স ৩০।
তার ভাষ্য, উখিয়া উপজেলার কুতুপালং ৩ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা তিনি। বাবার নাম হামিদ হোসেন। তার পরিবার ২০১৭ সালের ২৫ অগাস্ট মিয়ানমার থেকে পালিয়ে উখিয়ায় এসে আশ্রয় নেয়।
শুক্রবার রাতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আলী জোহার সাংবাদিকদের বলেন, সেন্ট মার্টিনে আটকে থাকা লোকজনকে বৃহস্পতিবার চারটি ট্রলারে করে টেকনাফে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু সবাই সেই ট্রলারগুলোতে উঠতে পারেননি।
পরে ওইদিন বিকালে ৩০ জন একজোট হয়ে একটি কাঠের ট্রলার ভাড়া করে রওনা দেন। কথা ছিল শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিম পাশ দিয়ে তীরে ওঠার। কিন্তু ট্রলারের মাঝি সেটা না মেনে তাদেরকে নিয়ে যান শাহপরীর দ্বীপের পূর্ব পাশের ঘাটের দিকে।
রোহিঙ্গা যুবক বলেন, এক পর্যায়ে তাদের বহনকারী ট্রলারটি নাফ নদীর শাহপরীর দ্বীপের পূর্বে পৌঁছালে মিয়ানমার অংশ থেকে আকস্মিকভাবে দুটি ট্রলার বেরিয়ে সীমানার কাছাকাছি এসে তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। একটি গুলি এসে তার ডান পায়ে লাগে ।
আলী জোহারের দাবি, নাফ নদীর ৫ কিলোমিটার দূরত্ব থেকে তাদেরকে লক্ষ্য করে গুলি করা হয়েছে। আর গুলি লাগার পর তিনি অজ্ঞান হয়ে যান। তারপর আর কিছু বলতে পারেন না।
“জ্ঞান ফিরে দেখি আমি উখিয়ার এমএসএফ হাসপাতালে। পরে আজ দুপুরে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করেছে।”
এক মাস আগে ক্যাম্প থেকে কাজের জন্য সেন্ট মার্টিনে যান বলে দাবি করেন আলী জোহার।
তবে তাকে কখনো সেন্ট মার্টিনে দেখা যায়নি বলে স্থানীয় একজন জনপ্রতিনিধি জানিয়েছেন।
সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ও স্পিডবোট মালিক সমবায় সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম বলেন, “বৃহস্পতিবার চারটি ট্রলার ছাড়া আর কোনো ট্রলার টেকনাফ যায়নি। নাফ নদীতে গোলাগুলি হচ্ছে, তাই কোনো ট্রলার নাফ নদী হয়ে টেকনাফ যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। আলী জোহার হয়ত মিথ্যাচার করছেন।”
টেকনাফ থানার ওসি মুহাম্মদ ওসমান গণি বলেন, “বৃহস্পতিবার বোট মালিক সমিতির সভাপতি রশিদ আহমেদের মালিকানাধীন চারটি ট্রলারে করে প্রায় ৩০০ মানুষ বঙ্গোপসাগর হয়ে টেকনাফ পৌঁছায়। এর বাইরে আর কোনো ট্রলার নাফ নদী কিংবা বঙ্গোপসাগর হয়ে টেকনাফ আসেনি।”
তিনি বলেন, “সব মাধ্যম থেকে খোঁজ-খবর নেওয়া হয়েছে। এখন গুলিবিদ্ধ রোহিঙ্গা যুবক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তিনি হয়ত মিয়ানমারের অভ্যন্তরে গুলিবিদ্ধি হয়ে কৌশলে বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছেন। এখন চিকিৎসার জন্য মিথ্যাচার করছেন।”
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইয়ামিন হোসেন বলেন, “সেন্ট মার্টিন থেকে বঙ্গোপসাগর হয়ে চারটি ট্রলার ছাড়া আর কোনো ট্রলার টেকনাফ আসেনি। গুলিবিদ্ধ ওই রোহিঙ্গা সেন্ট মার্টিন থেকে ট্রলার যোগে টেকনাফ আসার পথে গুলিবিদ্ধি হয়েছে এই ধরনের কোনো তথ্য নেই।”