সেমাইয়ের ওপর থেকে ভ্যাট কর্তন বন্ধ ও বিসিক শিল্প নগরী একটু সহযোগিতা করলে এই শিল্পের আরও প্রসার ঘটবে বলে আশা মালিকদের।
Published : 23 Mar 2025, 01:48 PM
গুণগত মান ভালো ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশে তৈরি হওয়ায় রাজবাড়ির সেমাইয়ের চাহিদা তৈরি হয়েছে অন্য জেলাতেও। তাই ঈদকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন এ জেলার সেমাইয়ের কারিগররা।
কারখানার মালিকরা জানান, রং ও রাসায়নিক মুক্ত হওয়ার পাশাপাশি মাননিয়ন্ত্রণে কঠোর তদারকির কারণে এখানকার সেমাইয়ের সুনাম জেলার গণ্ডি পেরিয়ে কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, মাগুরা, ঝিনাইদহসহ পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোয় ছড়িয়ে পড়ছে।
সেমাইয়ের গুণগত মান ঠিক রাখতে তাদের পাশাপাশি বিসিক কর্মকর্তারাও নিয়মিত তদারকি করছেন বলেও জানান মিল মালিকরা।
রাজবাড়ী বিসিক শিল্প নগরীর সাগর ফুড প্রোডাক্টস সেমাই কারখানার ম্যানেজার মো. হিরা বলেন, “আমাদের কারখানায় যারা শ্রমিক রয়েছে তাদের সবার নির্ধারিত পোশাক আছে। তারা যখন সেমাই তৈরি করে তার আগে সেই পরিষ্কার পোশাক পরা বাধ্যতামূলক। আমরা নিয়মিত দেখভাল করি যেন পোশাক ছাড়া কেউ কাজ করছে নাকি।”
সম্প্রতি বিসিক শিল্প নগরীর কয়েকটি সেমাই কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, ঈদের বাজার ধরতে কর্মমূখর কারখানাগুলোয় সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করছেন শ্রমিকেরা।
প্রথমে বস্তা থেকে আটা মেশিনে ঢেলে মেশানো হচ্ছে। এরপর মেশিনের সাহায্যে সুতোর মতো সেমাই তৈরি করা হচ্ছে। পরে রোদে শুকিয়ে আগুনের তাপে ভেজে প্যাকেটজাত করা হচ্ছে। প্রতিটি পর্যায়ে নিশ্চিত করা হচ্ছে পরিচ্ছন্ন পরিবেশের।
কারিগররা জানান, সারা বছর ব্যস্ততা না থাকলেও ঈদের সময় ঘনিয়ে আসায় দম ফেলার সময় নেই তাদের।
দ্বীন ফুড প্রোডাক্টস কারখানার শ্রমিক দিপা রাণী বলেন, “এখন তো আমরা খুবই ব্যস্ত। সেই সকালে আসি আর যাই রাত ৮টা-৯টায়। মেশিন থেকে সেমাই বের হওয়ার পর তা রোদে শুকাতি দিই। শুকানো হলি তন্দুলে আগুনের হিটে সেমাই ভাজা হয়। এরপর ওই সেমাই মেপে মেপে প্যাকেটে ভরি।”
পাশেই প্যাকেটের কাজ করা সালেহা বেগম বলেন, “এক এক প্যাকেটে দুই শ গ্রাম করে সেমাই মাপে প্যাকেট করতেছি। সারাদিন ধরেই প্যাকেট করি আমরা। এহুন কামের খুবই চাপ। সারা বছর তো এই কাম থাহে না, সে জন্নি সকালেরতে রাত পর্যন্ত কাম করি আমরা।”
এই কারখানায় প্রতিদিন পনেরো-বিশ মণ সেমাই তৈরি করা হয় জানিয়ে আরেক কারিগর আব্দুস ছাত্তার বলেন, “আমাদের সেমাই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নভাবেই তৈরি করা হয়। আমাদের সাহেবের মিল থেকে আটা নিয়ে আসা হয়। সেই আটা দিয়ে খামির বানাই। সেই খামির মেশিনে দিয়ে সেমাই বানাই।”
আব্দুস ছাত্তার আরও বলেন, “আমরা যারা এই কারখানায় কাজ করি সবাই সেমাই তৈরির সময় পরিষ্কার পোশাক পরেই কাজ করি।”
দ্বীন ফুড প্রোডাক্টসের মালিক মেহেরা নিগার পারভীন বলেন, “সেমাইয়ের গুণগত মান ঠিক রাখতে কারখানায় নিয়মিত তদারকি করি। তাই এখানকার সেমাইয়ের চাহিদা অনেক বেশি। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে আশপাশের কয়েকটি জেলার বাজারেও আমরা সেমাই সরবরাহ করে থাকি।”
এ নারী উদ্যোক্তা আরও বলেন, “সেমাই কারখানা ছোট একটা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। সরকার এখানে কোনো সুযোগ দেয় না আমাদের। এখানে ভ্যাট কাটে যেটা আমাদের জন্য কষ্টকর।বিসিক থেকেও তেমন সুবিধা পাই না।”
সরকারিভাবে সেমাইয়ের ওপর থেকে ভ্যাট কর্তন বন্ধ ও বিসিক শিল্প নগরী একটু সহযোগিতা করলে এই শিল্পের প্রসার ঘটবে বলে জানান তিনি।
রাজবাড়ী বিসিক শিল্প নগরীর সহকারী মহাব্যবস্থাপক চয়ন বিশ্বাস বলেন, “শিল্প নগরী এলাকায় তিনটিসহ জেলায় মোট চারটি কারখানায় প্রতিদিন ১ হাজার থেকে দেড় হাজার কেজি সেমাই তৈরি হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত মালিক ও শ্রমিকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে খাদ্যদ্রব্য প্রস্তুত বিধিমালা মেনে যেন তারা সেমাই তৈরি করে। যদি কেউ নোংরা পরিবেশে খাদ্য সামগ্রী তৈরি করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”