“এরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সাতক্ষীরার কৃতিসন্তান জুবায়ের চৌধুরী রীমুকে নির্মমভাবে হত্যা করে।”
Published : 01 Aug 2024, 10:49 PM
জামায়াতে ইসলামী ও তার ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির নিষিদ্ধের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে সাতক্ষীরায় সর্বস্তরের মানুষ মিছিল করেছে।
বৃহস্পতিবার বিকালে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সামনে থেকে অনুষ্ঠিত মিছিলে ছাত্র-যুব-নারী-শিল্পী-সাংবাদিক-আইনজীবী-রাজনীতিবিদ সর্বস্তরের মানুষ অংশ নেন। তারা ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণাকে অভিনন্দন জানান।
একাত্তরে ‘মানবতাবিরোধী অপরাধে লিপ্ত’ জামায়াতে ইসলামী এবং তাদের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরকে সাম্প্রতিক কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ চালানোর অভিযোগে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার।
২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইন অনুযায়ী জামায়াত এবং এর সকল অঙ্গ সংগঠনকে ‘সন্ত্রাসী সত্তা’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করে বৃহস্পতিবার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করা জামায়াতকে ১৯৭২ সালে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মের অপব্যবহারের’ কারণে। পরে জিয়াউর রহমানের আমলে তারা রাজনীতি করার অধিকার ফিরে পায়।
দলটিকে নিষিদ্ধ করার দাবি ছিল তখন থেকেই। চার দশক পর সেই দাবি পূরণ হল, যদিও যুদ্ধাপরাধের জন্য জামায়াতের বিচারের দাবি এখনও অপূর্ণ রয়ে গেছে।
বিকালে এই নিষিদ্ধের খবর প্রকাশিত হলে, একজন-দুজন করে শত শত মানুষ প্রেসক্লাবে চলে আসেন। এরপর সবার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে মিছিল শহর প্রদক্ষিণ করলে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সাধারণ মানুষ হাত নেড়ে মিছিলকারীদের অভিনন্দন জানান।
মিছিল শেষে সমাবেশে মানবাধিকারকর্মী মাধব দত্ত বলেন, “১৯৭১ সালে জামায়াত-শিবির এদেশের নিরস্ত্র বাঙালি নারী-পুরুষকে হত্যা করে। ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান করে। তারা এখনও বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে।
“দেশ স্বাধীন হলেও বিভিন্ন সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দখলে নিয়ে শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে সন্ত্রাস চালিয়েছে। ছাত্রশিক্ষকদের হত্যা করেছে। এই স্বাধীনতাবিরোধী মৌলবাদী অপশক্তিকে নিষিদ্ধ করে সরকার সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।”
সাংবাদিক নেতা শরীফুল্লাহ কায়সার সুমন বলেন, “জামায়াত-শিবির শুধু একাত্তরে পাকিস্তানি হানাদারদের খুনের সঙ্গী ছিলো না; স্বাধীনতার পরেও সাতক্ষীরাসহ সারাদেশে স্বাধীনতার স্বপক্ষের মানুষদের হত্যা ও বাড়িঘর, দোকানপাট লুণ্ঠনে সম্পৃক্ত ছিলো। তারা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সাতক্ষীরার কৃতিসন্তান জুবায়ের চৌধুরী রীমুকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে।”
সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, “শুধু ২০১৩ সালে সাতক্ষীরায় ১৬ জন মানুষকে নির্মমভাবে জীবন দিতে হয় জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসীদের হাতে। আজ সরকার যে যুগান্তকারী ঘোষণা দিয়েছে সাতক্ষীরার সাধারণ মানুষ স্বস্তি প্রকাশ করছে।”
কণ্ঠশিল্পী শামীমা পারভীন রত্না বলেন, “জামায়াত-শিবিরের হাতে এদেশের মানুষের রক্ত। এটি পৃথিবীর ইতিহাসে একটি ঘৃণ্য বর্বর সংগঠন। তারা স্বাধীনতার স্বপক্ষের রাজনীতিক-শিল্পী-সাংস্কৃতিককর্মী বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছে স্বাধীনতার আগে ও পরে। তাই সরকারের সিদ্ধান্তে আমরা সন্তোষ প্রকাশ করছি।”
মিছিলে সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য লায়লা পারভীন সেঁজুতি, আওয়ামী লীগ নেতা আ হ ম তারেক, শাহাদত হোসেন, জাসদ নেতা ওবায়েদুস সুলতান বাবলু, সিপিবি নেতা আবুল হোসেন, বাসদ নেতা নিত্যানন্দ সরকার, বাংলাদেশ জাসদ নেতা ইদ্রিস আলী, গণফোরাম নেতা আলী নূর খান, মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জোসনা দত্ত অংশ নেন।
মিছিলটি বৃষ্টির মধ্যেই সাতক্ষীরা শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে কেষ্ট ময়রার ব্রিজের কাছে গিয়ে শেষ হয়।