সাংবাদিক রণেশ মৈত্রের শেষকৃত্য সম্পন্ন

পাবনা শহরের মহাশ্মশানে যথাযথ ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতায় ভাষা সংগ্রামী এই বীর মুক্তিযোদ্ধার শেষকৃত্য হয়।

পাবনা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Sept 2022, 11:45 AM
Updated : 30 Sept 2022, 11:45 AM

খ্যাতিমান লেখক ও সাংবাদিক রণেশ মৈত্রের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে।

শুক্রবার বিকালে পাবনা মহাশ্মশানে যথাযথ ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতায় ভাষা সংগ্রামী এই বীর মুক্তিযোদ্ধার শেষকৃত্য হয়।

২৬ সেপ্টেম্বর ভোর ৩টা ৪৭ মিনিটে ঢাকায় পপুলার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তার মৃত্যু হয়।

এরপর থেকে তার মরদেহ ঢাকায় হিমঘরে রাখা ছিল। শুক্রবার অ্যাম্বুলেন্সে তার মরদেহ পাবনা রওনা হয়; দুপুর সোয়া ১টার দিকে রণেশ মৈত্রের পাবনা শহরের বেলতলার বাসভবনে এসে পৌঁছায়। সেখানে পারিবারিক কাজকর্ম শেষে দুপুর ২টায় মরদেহ নেওয়া হয় পাবনা শহরের বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বকুল স্বাধীনতা চত্বরে। সেখানে ঘণ্টাব্যাপী রাখা হয়। 

পরে তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদার গার্ড অব অনার প্রদান করা হয় পাবনা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাইয়ানা ইসলাম ও পাবনা সদর থানার ওসি আমিনুল ইসলাম জুয়েলের নেতৃত্বে। 

ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, পাবনা সদর আসনের সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্স, জেলা পরিষদ প্রশাসক রেজাউল রহিম লাল, জেলা প্রশাসক বিশ্বাস রাসেল হোসেন, পুলিশ সুপার আকবর আলী মুন্সীসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষ তাকে শ্রদ্ধঞ্জলি জানান। 

এছাড়া অন্নদা গোবিন্দ পাবলিক লাইব্রেরি, জেলা আওয়ামী লীগ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠন তার প্রতি শ্রদ্ধা জানায়। 

বিকাল ৩টায় তাকে আনা হয় তার প্রিয় পাবনা প্রেসক্লাব গলিতে। সেখানে এক মিনিট নীরবতা পালন ও ফুলের শ্রদ্ধাঞ্জলি জানানো হয়।

এ সময় সংক্ষিপ্ত স্মৃতিচারণ করেন পাবনা প্রেসক্লাব সভাপতি এবিএম ফজলুর রহমান, সম্পাদক সৈকত আফরোজ আসাদ, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আব্দুল মতীন খান, প্রেসক্লাবের সাবেক সম্পাদক আঁখিনুর ইসলাম রেমন ও রণেশ মৈত্রের ছেলে প্রবীর মৈত্র। 

সাড়ে ৩টায় তাকে নেওয়া হয় পাবনা জয়কালী বাড়ি মন্দির প্রাঙ্গণে। ধর্মীয় আচার ও রীতি অনুযায়ী তাকে নেওয়া হয় পাবনা মহাশ্মশানে।

রণেশ মৈত্রর জন্ম ১৯৩৩ সালের ৪ অক্টোবর, রাজশাহী জেলার নহাটা গ্রামে। তার পৈত্রিক বাড়ি পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার ভুলবাড়িয়ায়। বাবা রমেশ চন্দ্র ছিলেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক।

১৯৫০ সালে পাবনা জিসিআই স্কুল থেকে এসএসসি পাস করে পাবনা এডওয়ার্ড কলেজে ভর্তি হন রণেশ মৈত্র। ১৯৫৫ সালে সেখান থেকে এইচএসসি এবং ১৯৫৯ সালে স্নাতক শেষ করেন।

বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধসহ দেশের বিভিন্ন আন্দোলনে রণেশ মৈত্র ছিলেন অগ্রণীদের কাতারে। ষাটের দশকের শেষের দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গেও ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জেল খেটেছেন তিনি।

মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে পাবনায় সংগ্রাম কমিটি গঠিত হলে সেই কমিটির সদস্য ছিলেন রণেশ মৈত্র।

১৯৫১ সালে সিলেট থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক নওবেলাল পত্রিকায় সাংবাদিকতার মাধ্যমে রণেশ মৈত্রর সাংবাদিকতা শুরু। এরপর কলকাতা থেকে প্রকাশিত দৈনিক সত্যযুগে তিন বছর কাজ করে ১৯৫৫ সালে যোগ দেন দৈনিক সংবাদে।

এরপর ১৯৬১ সালে ডেইলি মর্নিং নিউজ এবং ৬৭ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত টানা ২৫ বছর দৈনিক অবজারভারের হয়েও কাজ করেন তিনি। এছাড়া দি নিউ নেশনের মফস্বল সম্পাদক এবং ডেইলি স্টারের পাবনা প্রতিনিধি ছিলেন তিনি।

সাংবাদিকতায় অবদানের জন্য ২০১৮ সালে তাকে একুশে পদকে ভূষিত করে সরকার।

রাজনৈতিক আন্দোলনের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক আন্দোলন জোরদারে রণেশ মৈত্র পাবনায় বাংলাদেশ অবজারভারের পাবনা প্রতিনিধি আব্দুল মতিন, প্রয়াত কামাল লোহানীসহ সমমনাদের নিয়ে গড়ে তোলেন ‘শিখা সংঘ’ নামে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন। সেখানে একটি পাঠাগারও গড়েন। ওই সংগঠন থেকে তিনি ‘শিখা’ নামে পত্রিকা বের করতেন। 

‘রুদ্র চৈতন্যে বিপন্ন বাংলাদেশ’, তার জীবনীমূলক বই ‘নিঃসঙ্গ পথিক’, ‘আঁধার ঘোচানো বঙ্গবন্ধু’ রণেশ মৈত্রের লেখা গ্রন্থগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য।

আইনজীবী হিসেবেও পাবনা শহরে তার পরিচিত রয়েছে।

আরও পড়ুন:

Also Read: চলে গেলেন রণেশ মৈত্র