পর্যটক দলের কাছ থেকে ১ লাখ ৮১ হাজার টাকা এবং ১৫টি মোবাইল ছিনিয়ে নেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন ইউএনও মামুন।
Published : 26 Feb 2024, 08:53 PM
বান্দরবানের থানচি উপজেলার দুর্গম এলাকা ভেলাখুমে যাওয়া একদল পর্যটকের কাছ থেকে মোবাইল-টাকা কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে একদল সশস্ত্র ব্যক্তির বিরুদ্ধে।
রোববার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে ভেলাখুম থেকে ফেরার পথে এ ঘটনা ঘটে।
পরদিন সোমবার দুপুরে থানচি সদরে ফিরে ওই পর্যটক দল উপজেলা প্রশাসন ও সাংবাদিকদের সামনে ঘটনার বর্ণনা দেন।
পর্যটক দলের এক সদস্য সাংবাদিকদের বলেন, তাদের কাছ থেকে মোবাইল ও টাকা কেড়ে নেওয়া সশস্ত্র সদস্যদের সবাই সামরিক পোশাকে ছিল। পোশাকে 'কেএনএফ' লেখা ছিল।
যদিও থানচি উপজেলার ইউএনও মো. মামুন বলছেন, সোমবার সকালে ওই পর্যটক দলটি তার কাছে অভিযোগ জানানোর সময় কেএনএফের কথা বলেনি।
“তারা মুখোশ পরা সশস্ত্র ডাকাত দলের পাল্লায় পড়েছিলেন বলে জানায়।”
স্থানীয় ট্যুর গাইডরা জানান, ২২ জনের একদল পর্যটক শনিবার নাফাখুম হয়ে থুইসাপাড়া বেড়াতে যান। সেখানে রাত কাটিয়ে দলটি রোববার সকালে আমিয়াখুম ও ভেলাখুমের পথে রওনা হন।
ভেলাখুম পরিদর্শনের সময় দুপুরে হঠাৎই একদল সশস্ত্র ব্যক্তি পর্যটকদের কাছ থেকে টাকা ও মোবাইল কেড়ে নেয়। পরে তারা সেখান থেকে ফিরে রাতে নাফাখুমে থাকেন। পরদিন সোমবার থানচিতে ফিরে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ তুলে ধরেন পর্যটকরা।
থানচির গাইডরা জানান, প্রথমে থানচি সদর থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে রেমাক্রী যেতে সময় লাগে দুই ঘণ্টার মত। সেখান থেকে নাফাখুম জলপ্রপাতের দূরত্ব ঘণ্টা দুয়েকের পায়ে হাঁটা ঝিরিপথ।
এরপর নাফাখুম থেকে ঘণ্টা তিনেকের ঝিরিপথ পাড়ি দিয়ে স্থানীয় থুইসাপাড়া বা জিনাপাড়ায় গিয়ে থাকতে হয়। সেখান থেকে দুই ঘণ্টার মতো পথ পায়ে হেঁটে পৌঁছাতে হয় ভেলাখুমে, যার পাশেই আমিয়াখুম ও সাতভাই খুম আছে। থানচি থেকে ভেলাখুমে যাওয়া-আসা মিলিয়ে সাধারণত দুই থেকে তিন দিন সময় লাগে।
ভেলাখুম থেকে ফিরে এসে সোমবার পর্যটক অনিল মোদক সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা ২২ জনের একটি দল থানচির নাফাখুমে বেড়াতে যাই। দলের মধ্যে ছেলে ১৮ জন এবং মেয়ে ৪ জন। নাফাখুম হয়ে থুইসাপাড়া থাকার পর পরের দিন ভেলাখুমের উদ্দেশে রওনা দিই। সেখানে পৌঁছে সশস্ত্র ডাকাত দলের কবলে পড়ি।”
অনিল বলেন “সবাইকে ধরে নিয়ে প্রথমে একসাথে জড়ো করা হয়। ছেলেদের মধ্যে টাকা-পয়সা, মোবাইল, ম্যানিব্যাগ যা ছিল- সব কেড়ে নেওয়া হয়েছে। মেয়েদের থেকে টাকা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু মোবাইল নেওয়া হয়নি।
“যিনি গাইড ছিলেন, তার কাছ থেকেও টাকা কেড়ে নিয়ে মারধর করা হয়েছে। তবে পর্যটক কাউকে আঘাত করা হয়নি। আমাদের ছেড়ে দেওয়ার পর সাঁতরিয়ে এপারে চলে আসি।”
লুটকারীদের সম্পর্কে তিনি বলেন, “মোট ছয়জন সশস্ত্র সদস্য ছিল। পাঁচ জনের গায়ে পাতারঙ পরিহিত পোশাক ছিল। প্রত্যেকের হাতে পিস্তল, বন্দুক ও ছুরি ছিল। তাদের পোশাকে কেএনএফ লেখা ছিল।”
ঘটনার বর্ণনায় একজন বলেন, “মোবাইল-টাকা কেড়ে নেওয়া হলেও কাউকে মারধর করেনি তারা (লুটকারীরা)। ট্যুরে আসতে বলেছে, তবে এসব জায়গায় চিল্লাপাল্লা করতে নিষেধ করেছে।”
ঘটনার আগে পর্যটকদের কেউ কেউ চিৎকার-চেঁচামেচি করেছিল বলেও জানান তিনি।
জানতে চাইলে থানচি থানার ওসি জসিম উদ্দিন বলেন, “পর্যটকরা যেখানে বেড়াতে গিয়েছিল, সেটি ভ্রমণের জন্য প্রশাসনের অনুমোদিত এলাকা না। সেখানে কোনো নির্বাচনি কাজে প্রশাসনের কেউ গেলেও হেলিকপ্টার ছাড়া যাওয়া সম্ভব নয়। এটা স্থানীয় গাইডরাও জানে। অনুমোদিত এলাকা না হওয়ার পরও গাইডরা সেখানে পর্যটকদের নিয়ে কেন গেল, এটির তদন্ত হবে।”
ওসি বলেন, “তবে গাইডরা যে অভিযোগ করেছেন, সেটি আমরাও ভিডিও মাধ্যমে দেখেছি। কিন্তু তারা থানায় আসেননি।”
প্রশাসনের অনুমোদিত এলাকার বাইরে পর্যটকদের না যাওয়ার জন্য সতর্ক করা হবে বলে জানান ওসি জসিম উদ্দিন।
এ বিষয়ে থানচির ইউএনও মো. মামুন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ওই ২২ জনের পর্যটক দলের কাছ থেকে ১ লাখ ৮১ হাজার টাকা এবং ১৫টি মোবাইল ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। ভেলাখুম নামে তারা যে এলাকায় গেছে, সেখানে স্থানীয় লোকজন পর্যন্ত সহজে যায় না। দুর্গম তো বটে, পুরোপুরি মোবাইল নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন এলাকা।
“২২ জনের ওই পর্যটক দল এবং দুজন গাইড অতি উৎসাহিত হয়ে কেন গেল তা তদন্ত করা হবে। ইতোমধ্যে পর্যটকদের নিয়ে যাওয়া দুজন গাইডকে আটক করে থানায় রাখা হয়েছে। তাদের নিবন্ধন বাতিল করা হবে।”
থানচি উপজেলায় মোট ২০০ জন গাইড আছে জানিয়ে ইউএনও মামুন বলেন, “এ সমস্ত গাইডদের নিয়ে শিগগির একটা সভা করা হবে। সবাইকে প্রশাসনের অনুমোদনের এলাকার বাইরে না যাওয়ার জন্য সতর্ক করা হবে।
“নিরাপত্তার বিষয় মাথায় রেখে যতটুকু যাওয়া যায়, যাবে। কিন্তু কোনো দুর্গম এলাকায় না। যারা এ নিয়ম লঙ্ঘন করবে, তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”