মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার উছাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা কামরুল মিয়ার বাড়ি ডুবেছে বন্যায়। কবে বাড়ি ফিরতে পারবেন, সেই দুশ্চিন্তার ভাঁজ ঈদের দিনও তার কপালে।
Published : 10 Jul 2022, 11:08 AM
পরিবারের ১১ সদস্য নিয়ে আরও অনেক বানভাসীর সঙ্গে আশ্রয়কেন্দ্রেই এবারের ঈদ কাটছে কামরুলের। আক্ষেপের সুরে বললেন, “কবে যে বাড়ি ফিরতে পারব? ঈদের দিনে এভাবে ভাসমান থাকব কখনও ভাবি নাই।”
বন্যায় যখন সব ডুবে যাচ্ছিল, তখন পরিবারের ৮ সদস্যকে নিয়ে একই উপজেলার ছকাপন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছিলেন লকুজ মিয়া। সব হারানো এ পরিবারে ঈদ এবার আনন্দ জাগাতে পরেনি। তাদের চোখে এখন শুধুই বাড়ি ফেরার আকুতি।
গত ১৮ জুন থেকে মৌলভীবাজারের বিভিন্ন উপজেলার মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছেন। ধীর গতিতে পানি কমায় কিছু মানুষ বাড়িঘরে ফিরলেও এখনও প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষ বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন।
এর মধ্যে বড়লেখা উপজেলার মানুষ রয়েছেন দীর্ঘ ভোগান্তিতে; বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাজার-হাট পানিতে তলিয়ে থাকায় আশ্রয়কেন্দ্র ছাড়তে পারছেন না অনেকে। প্রায় একই অবস্থা কুলাউড়া ও জুড়ি উপজেলায়। ঈদের দিনও তারা দুর্গত।
মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার অর্ণব কুমার মালাকার জানান, কুলাউড়া, বড়লেখা ও জুড়ি উপজেলার ৯৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে এখনও লোকজন রয়েছে; তবে আগের তুলনায় এখন কিছুটা কম। এইসব আশ্রয়কেন্দ্রে এবার ঈদ কাটবে অন্তত ৪০ হাজার মানুষের।
মুদাচ্ছির বলেন, তার উপজেলায় বন্যা দীর্ঘস্থায়ী রূপ নিয়েছে; এখনও ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষ পানিবন্দি। আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে বাড়ি যেতে পারছেন না অন্তত ২০ হাজার মানুষ। কারও কারও বাড়ি ভেঙে গেছে; তারা মেরামত করে তারপর ফিরবেন।
এদিকে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রত্যেক আশ্রয়কেন্দ্রেই কোরবানি দেওয়া হচ্ছে। যে সব এলাকায় পানি কমেছে, সে সব এলাকায় বাড়িঘর ও রাস্তাঘাটের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণের কাজও শুরু করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
একই আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা পশ্চিম শঙ্করপুর গ্রামের আলীম উদ্দিন বলেন, “গত ২০/২২ দিন ধরে পরিবার পরিজন নিয়ে এখানে আছি। বাড়িতে বন্যার পানিতে অনেক জিনিস নষ্ট হয়ে গেছে। এবার নিজে কোরবানি দিতে পারলাম না। বাড়িতে থাকলে আত্মীয় স্বজনকে দাওয়াত দিতাম। বাড়িতে থেকে ঈদ করার আনন্দই অন্যরকম।”
কুলাউড়া উপজেলার কাদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাফর আহমদ গিলমান জানান, তার ইউনিয়নের ২৯টি গ্রামের মধ্যে ২৪টিতে বন্যার পানি ওঠে। এসব এলাকার বানবাসী মানুষদের ৭টি আশ্রয় কেন্দ্র খুলে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সবগুলো আশ্রয় কেন্দ্রে এখনও মানুষ রয়েছেন।
তিনি বলেন, ঈদ উপলক্ষে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোরবানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। একই সঙ্গে উপজেলা প্রশাসন, ইউনিয়ন পরিষদ ও বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে ইতোমধ্যে সকল পরিবারে খাদ্যসহায়তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। বানভাসীদের সঙ্গে তিনিও আশ্রয় কেন্দ্রেই ঈদ উদযাপন করছেন।
মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান জানান, জেলার প্রায় ১১৮টি আশ্রয় কেন্দ্রে মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। এখনও ৯৮টি আশ্রয় কেন্দ্রে লোকজন আছে। প্রতিটি আশ্রয় কেন্দ্রেই কোরবানির ব্যবস্থা করা হয়েছে।