হিলি থেকে ঢাকা-উত্তরবঙ্গ মহাসড়কসহ হিলি-দিনাজপুর, হিলি-জয়পুরহাট, হিলি-গোবিন্দগঞ্জ সড়কগুলো সংকীর্ণ ও ভাঙাচোরা।
এসব রাস্তা দিয়ে আমদানি-রপ্তানির মালামাল বহনকারী ট্রাক চলাচল করে ঝুঁকি নিয়ে এবং ধীর গতিতে। দুটি গাড়ি পাশ কাটাতে হয় খুব সাবধানে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে একটিকে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।
এই সড়কগুলোর উন্নয়ন না করলে ঢাকা-উত্তরবঙ্গ চারলেন হওয়ার পর তার সুবিধা ভোগ করতে পারবে না হিলি দিয়ে আমদানি-রপ্তানিকারকরা।
তাই এই বন্দর ব্যবহারকারীরা হিলি থেকে ঢাকা-উত্তরবঙ্গ মহাসড়কের যোগাযোগসহ অন্য সড়কগুলোর উন্নয়ন দাবি করছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, হিলি স্থলবন্দর জিরো পয়েন্ট থেকে জয়পুরহাট জেলা সীমান্ত পর্যন্ত দুই কিলোমিটার, হিলি জিরো পয়েন্ট থেকে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার, হিলি জিরো পয়েন্ট থেকে দিনাজপুরের বিরামপুর ১৩ কিলোমিটার সড়ক খুবই বেহাল। এতটা ভাঙাচোরা ও সরু যে হিলিতে ট্রাকযোগে মালামাল বহন করা খুবই দুস্কর। হিলি স্থলবন্দরে পিচঢালা পথ চোখেই পড়েনি।
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর স্থলবন্দরের যোগাযোগে স্বাধীনতার ৫০ বছরে কোনো উন্নয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
কথা হয়েছে ভারতীয় গাড়ি চালক চন্দন মালী, শশাঙ্ক মহন্ত, উত্তম পালের সঙ্গে।
তাদের ভাষ্য, অনেক দূর থেকে এখানে আসতে তাদের কষ্ট লাগে না। অথচ জিরো পয়েন্ট থেকে বন্দর পর্যন্ত এই সামান্য পথ আসতে ভাঙাচোরা সড়কের কারণে কষ্ট হয়।
বগুড়ার জসিম উদ্দিন এবং সিরাজগঞ্জের সামছুল বলেন, গোবিন্দগঞ্জ বা বিরামপুর যেখান দিয়েই এখানে আসেন না কেন সরু, ভাঙা সড়কে ঝুঁকি নিয়ে আসতে হয়। সড়কগুলো ঝুঁকিপূর্ণ।
হিলি স্থলবন্দর শুল্ক স্টেশনের উপ-কমিশনার মো. কামরুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, প্রতি বছরই হিলি স্থলবন্দর দিয়ে কোটি কোটি টাকার আমদানি-রপ্তানি হয়। গত অর্থবছরে হিলি স্থলবন্দর থেকে রাজস্ব আয় হয়েছে সরকারের ৩ শ কোটি ৯৯ লাখ টাকা।
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই স্থলবন্দরের সড়ক যোগাযোগ সত্যিই নাজুক, বলেন তিনি।
হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানি গ্রুপের সভাপতি হারুন-অর-রশীদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, প্রতিদিন ভারত থেকে আমদানি-রপ্তানি করা পণ্য বোঝাই ২ শতাধিক ট্রাক পানামা পোর্টে মাল খালাস করছে। সেই ট্রাকগুলো খানাখন্দ পার হয়ে আসছে। পানামা পোর্ট থেকে সেই পণ্য অন্য ট্রাকে চলে যাচ্ছে দেশের নানা প্রান্তে।
এ ছাড়া বন্দরের অবকাঠামো আরও আধুনিক করা প্রয়োজন এবং স্থলবন্দরে জায়গা সংকটও রয়েছে বলে তিনি জানান।
আমদানিকারক ও বগুড়া রাজাবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পরিমল প্রসাদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, হিলি স্থলবন্দর এলাকার সব সড়কই ভাঙাচোরা, বৃষ্টি হলেই পানি জমে যায়। হিলির সাথে অন্য জেলার সড়ক যোগাযোগও ভালো না। ভাঙাচোরা ঝুঁকিপূর্ণ সড়ক দিয়ে তাই আমদানি করা মালামাল দ্রুত পরিবহনে খুবই অসুবিধায় পড়তে হয়।
“যে পরিমাণ মাল আমদানি হয় সেই তুলনায় পোর্টে জায়গা কম; তাই গাড়ির জট লেগে যায়। যে মালামাল আধঘণ্টায় ডেলিভারি হওয়ার কথা তা করতে দুই তিন ঘণ্টা সময় লেগে যায়।”
হিলি স্থলবন্দর ও সড়কের এই অবস্থার কারণে অনেকেই এই পথে আমদানি করার আগ্রহ হারাচ্ছে বলে তিনি মনে করেন।
সরকার কোটি কোটি টাকা রাজস্ব পেলেও বন্দরকে আধুনিক করতে তেমন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি বলে এই ব্যবসায়ী নেতার অভিযোগ।
পরিমল প্রসাদ বলেন, হিলির বাংলাদেশ অংশে ট্রাক টার্মিনালও নেই; অথচ হিলি ভারত অংশে বিশাল ট্রাক টার্মিনাল রয়েছে। আমদানি-রপ্তানির জন্য হিলির ভারত অংশে প্রশস্ত সড়কও রয়েছে। অথচ হিলি বাংলাদেশ অংশে অন্য জেলার সঙ্গে প্রশস্ত সড়ক নেই।
বেসরকারি হিলি স্থলবন্দর পানামা হিলি লিংক লিমিটেডের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহবাব হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, হিলি বন্দরসহ অন্য জেলার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই নাজুক। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর স্থলবন্দরের যোগাযোগ ব্যবস্থাস্হ ভালো করলে আমদানি-রপ্তানির জন্য সুফল বয়ে আনবে।
“২০১২ সাল আনুষ্ঠানিকভাবে ২৫ বছরের লিজ নেওয়ার পর আমরা যোগাযোগ ব্যবস্থা বেহাল দেখছি। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হলে হিলি বন্দর উন্নত হবে।”
হিলি বন্দর নাগরিক কমিটির যুগ্ন সম্পাদক মো. জাহিদুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গুরুত্বপূর্ণ হিলি বন্দর তথা বন্দরের সব সড়কেরই অবস্থা করুণ; চলাচলের অযোগ্য। হিলির সঙ্গে অন্যান্য জেলার যোগাযোগও একই রকম।
“আমাদের আন্দোলনের ফলে হিলি জিরো পয়েন্ট থেকে মহিলা কলেজ পর্যন্ত দুই কিলোমিটার সড়ক ফোর লেন করার প্রাথমিক কাজ চলছে। এতটুকু সড়ক ফোর লেন করলেই যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হয়ে যাবে না।”
তিনি বলেন, হিলি বন্দরকে আধুনিকায়ন করাসহ হিলির সাথে পাশের জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থায় ফোরলেন সংযোগ এবং উত্তরাঞ্চলের ফোরলেন মহাসড়কের সাথে কানেক্টিভিটি দ্রুত বাড়াতে হবে। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই স্থলবন্দরের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না থাকার কারণে এই পথে আমদানি-রপ্তানিতে আগ্রহ হারাচ্ছে অনেক ব্যাবসায়ী।
হিলি স্থল বন্দরের উন্নয়ন, যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করার বিষয়ে দিনাজপুর-৬ আসনের সংসদ সদস্য শিবলী সাদিককে ফোন করে পাওয়া যায়নি। পরে মোবাইল ফোনে ক্ষুদে বার্তা দিয়েও জবাব মেলেনি।
দিনাজপুর সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী এম আজিজ বলেন, হিলি জিরো পয়েন্ট থেকে ঘোড়াঘাট এবং জিরো পয়েন্ট থেকে বিরামপুর পর্যন্ত ফোর লেন সড়কের প্রকল্প একনেকে জমা দেওয়া হয়েছে। এখনও প্রকল্প পাশ হয়নি।