বগুড়া হাসপাতালে ৭ মৃত্যুতে ‘নেইজাল ক্যানুলা সঙ্কট’র প্রকাশ

বগুড়া জেলা হাসপাতালে অক্সিজেনের অভাবে ১৩ ঘণ্টায় সাত রোগীর মৃত্যুর পর নেইজাল ক্যানুলা সঙ্কটকে কারণ দেখিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

জিয়া শাহীন বগুড়া প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 July 2021, 06:25 AM
Updated : 3 July 2021, 06:48 AM

তারা বলছে, হাসপাতালটিতে বর্তমানে দুটি হাই ফ্লো নেইজাল ক্যানুলা থাকায় দুজনের বেশি রোগীকে উচ্চ মাত্রার অক্সিজেন দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। অথচ দুই শতাধিক রোগীর অনেকেরই তা প্রয়োজন।

বগুড়ায় ২৫০ শয্যার মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে বৃহস্পতিবার রাত ৮টা থেকে শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ১৩ ঘণ্টায় সাতজন কোভিড-১৯ রোগীর মৃত্যু হয়।

ওই হাসপাতালে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ২২৩ জন রোগী ভর্তি ছিলেন, যাদের অধিকাংশেরই উচ্চ মাত্রার অক্সিজেন সরবরাহ প্রয়োজন ছিল বলে হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা শফিক আমিন কাজল জানিয়েছেন।

মোহাম্মদ আলী হাসপাতালকে ২০২০ সালের মার্চের শেষ দিকে কোভিড রোগীদের চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত করা হয়। তখন সেখানে সিলিন্ডার দিয়ে করোনা রোগীদের অক্সিজেন দেওয়া হত।

কিন্তু তাতে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়লে একই বছরের জুনের শেষ দিকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উচ্চ মাত্রার অক্সিজেন সরবরাহের সুবিধাযুক্ত ৫০ শয্যার করোনা ইউনিট চালু করা হয়।

পরবর্তীকালে শজিমেক হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা বাড়িয়ে ১৩টি আইসিইউসহ ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। কিন্তু সেখানেও রোগীর চাপ বাড়তে থাকায় চলতি বছরের এপ্রিলে মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহ চালু করা হয়।

মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, এই হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহ চালু হলেও সবগুলো শয্যায় উচ্চ মাত্রার অক্সিজেন সরবরাহের জন্য প্রয়োজনীয় হাই ফ্লো নেইজাল ক্যানুলা যুক্ত করা হয়নি। এমনকি আট শয্যা নিয়ে চালু করা আইসিইউ ইউনিটেরও মাত্র দুটিতে হাই ফ্লো নেইজাল ক্যানুলা রয়েছে। ফলে পুরো হাসপাতালের মধ্যে আইসিইউ ইউনিটের ওই দুটি শয্যায় কেবল উচ্চ মাত্রায় অক্সিজেন সররবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে। এর বাইরে ভর্তি দুই শতাধিক রোগীকে হয় ফেইস মাস্ক অথবা রিব্রিদার মাস্ক দিয়ে অক্সিজেন সরবরাহ করতে হচ্ছে।

আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. শফিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, যাদের অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৯০ এর উপরে কেবল তাদের ফেইস মাস্ক দিয়ে অক্সিজেন সরবরাহ করে সারিয়ে তোলা সম্ভব। আর যাদের অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৯০ এর নিচে কিন্তু ৮৭ এর ওপরে তাদের রিব্রিদার মাস্ক দিয়েও সুস্থ করে তোলা যায়। তবে যাদের অক্সিজেনের মাত্রা ৮৭-এর নিচে তাদের জন্য অবশ্যই উচ্চ মাত্রার অর্থাৎ হাই ফ্লো নেইজাল ক্যানুলাযুক্ত মেশিন দিয়ে অক্সিজেন দেওয়া প্রয়োজন। তাছাড়া তাদের বাঁচানো কঠিন হয়ে পড়ে।

২০০ শয্যার ওই হাসপাতালে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ২২৩ জন রোগী ভর্তির তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের এই হাসপাতালে এখন যেসব রোগী আসছেন, তাদের বেশিরভাগেরই অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৬০ থেকে ৭২-এর মধ্যে। তাদের হাই ফ্লো নেইজাল ক্যানুলা দিয়ে উচ্চমাত্রার অক্সিজেন সরবরাহ করা প্রয়োজন।

“কিন্তু আমাদের হাসপাতালে শুধু আইসিইউ ইউনিটের দুটি শয্যায় ওই ব্যবস্থা রয়েছে। যে কারণে বিপুল সংখ্যক রোগীর চিকিৎসা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে।”

অক্সিজেন সঙ্কটের কারণেই বৃহস্পতিবার রাত ৮টা থেকে শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত সাত রোগীর মৃত্যুর কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, “আরও অন্তত ১০ জনের অবস্থা খুবই সঙ্কটাপন্ন।”

এই বিষয়ে বগুড়ার সিভিল সার্জন ডা. গাওসুল আজমকে কয়েকবার ফোন দিলেও তিনি ধরেননি। ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মোস্তাফিজুর রহমান তুহীনকে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।