কুষ্টিয়া শহরে প্রকাশ্যে নিজের স্ত্রী, সৎ ছেলেসহ তিনজনকে গুলি করে হত্যার অভিযোগ উঠেছে এক পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে।
Published : 13 Jun 2021, 04:31 PM
রোবাবর বেলা ১১টার দিকে শহরের ম আ রহিম সড়কের (পিটিআই রোড) কাস্টমস মোড়ে একটি ভবনের নিচ তলার মার্কেটের মধ্যে গুলির ওই ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- কুমারখালী উপজেলার সাওতা গ্রামের মেজবার খানের ছেলে বিকাশ কর্মী শাকিল খান (২৮), নাথুরিয়া বাশগ্রামর আমির আলীর মেয়ে আসমা খাতুন (৩৪) এবং আসমার ছেলে রবিন (৭)।
ঘটনাস্থল থেকে এলাকাবাসী সৌমেন কুমার নামে পুলিশের ওই এএসআইকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে। সৌমেন খুলনার ফুলতলা থানায় কর্মরত ছিলেন। পরে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
এই ঘটনায় নিহত আসমা খাতুনের মা হাসিনা বেগম বাদী হয়ে সৌমেন রায়ের বিরুদ্ধে কুষ্টিয়া মডেল থানায় মামলা করেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা পৌনে ১১টার দিকে কাস্টম মোড়ের ডা. আজাদুর রহমানের চার তলা ভবনের নিচ তলার মার্কেটে মধ্যে গুলির শব্দ শুনে আশপাশের লোকজন জড়ো হয়ে মার্কেটের মেঝেতে নারী ও পুরুষ এবং মার্কেটের সামনে এক শিশুর লাশ পড়ে থাকতে দেখে।
রাস্তার বিপরীত পাশের এক চা দোকানি বলেন, “হঠাৎ গুলির শব্দ শুনে তাকিয়ে দেছি মার্কেটের ভিতর থেকে একটা শিশু ছুটে বের হয়ে আসল, ওর পিছনে পিস্তল ধরা লোকটি ছুটে এসে শিশুটিকে ধরে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করল। তখনই শিশুটি মাটিতে পড়ে যায়।
“প্রকাশ্যে শিশুটিকে যেভাবে গুলি করল তাতে মনে হলো কতই না রাগ বাচ্চাটার উপর।”
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক তাপস কুমার সরকার জানান, বেলা ১১টার দিকে গুলিবিদ্ধ একজন মহিলা, একজন শিশু ও একজন পুরুষকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তিন জনকেই মৃত পান।
“জিজ্ঞাসাবাদে সৌমেন নিহত আসমাকে তার স্ত্রী বলে দাবি করেছেন।”
“প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হচ্ছে সৌমেনের স্ত্র্রী আসমার সাথে বিকাশকর্মী শাকিলের কোনো সম্পর্ক বা আর্থিক লেনদেনের ঝামেলা থাকতে পারে। অথবা ডিভোর্সি আসমা সৌমেন ও শাকিলের মধ্যে ত্রিমুখী কোনো সম্পর্কের দ্বন্দ্বে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।”
সবগুলি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে তদন্ত চলছে বলে জানান তিনি।
এদিকে, বিকালে খুলনা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি এ কে এম নাহিদুল ইসলাম ঘটনাস্থল কুষ্টিয়া শহরের কাস্টম মোড়ের ওই মার্কেট পরিদর্শন করেছেন।
এ সময় কুষ্টিয়া পুলিশ সুপার খায়রুল ইসলামসহ অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
পরিদর্শন শেষে ডিআইজি নাহিদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, “বিষয়টি আটক সৌমেনের একান্ত ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কারণে ঘটেছে। এ ঘটনার সাথে পুলিশের ভাবমূর্তির কোনো সম্পর্ক নেই। ঘটনা যা ঘটেছে পুলিশ তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।”
আসমার মা কুমারখালী উপজেলার নাথুরিয়া গ্রামের আমির আলীর স্ত্রী হাসিনা খাতুন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সকালে সৌমেন শহরের বাবুর আলী গেটের নিকটস্থ আমাদের ভাড়া বাসা থেকে আসমাকে সাথে করে খুলনায় নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হয়। দুপুরের পরে লোকমুখে শুনতে পাই আসমা কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে। এখানে এসে দেখি আমার মেয়ে মৃত অবস্থায় পড়ে আছে।”
সৌমেন দুই দিন আগে খুলনা থেকে এসে তাদের বাসায় ওঠেন জানিয়ে হাসিনা খাতুন বলেন, “গতকাল আসমাকে খুলনায় নিয়ে যাওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুজনের মধ্যে ঝগড়াঝাটিও হয়েছিল। তখন তো বুঝি নাই এমন ঘটনা ঘটতে পারে। আমি বিচার চাই।”