সোমবার দুপুরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২১ বছর বয়সী এই ছাত্রী মারা যান।
এই ঘটনায় সোমবার রাতে মেয়েটির বাবা জলঢাকা থানায় অপহরণ ও হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
মামলার আসামিরা হলেন নীলফামারী সদর উপজেলার কচুকাটা ইউনিয়নের কচুকাটা ব্রমতল গ্রামের আব্দুল্লাহ মিয়ার ছেলে ফজলুল করিম ফয়সাল (২৩) ও কচুকাটা গ্রামের মৃত জাহিদুল ইসলাম মাস্টারের ছেলে বাহাজাত জুলফিকার রিজভী (১৯)। ফয়সাল সোহরাওয়ার্দী কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান তৃতীয় বর্ষ এবং রিজভী নীলফামারী সরকারি কলেজ থেকে এবার এইচএসসি পাশ করেছেন।
তবে নিহত কলেজছাত্রীর সঙ্গে ফজলুল করিম ফয়সালের বন্ধুত্ব সম্পর্ক ছিল বলে স্থানীয় কয়েকজন জানিয়েছেন।
নিহত ছাত্রী (২১) তালুক মানুষমারা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি রংপুর কারমাইকেল কলেজের স্নাতক (সম্মান) দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।
আসামি ফজলুল করিম ফয়সাল ও নিহত ছাত্রীর পরিচিতজনদের ভাষ্য, ফয়সাল ও ওই ছাত্রীর মধ্যে বন্ধুত্ব ছিল। সোমবার সকালে ফয়সালের সঙ্গে মোটরসাইকেলে ঘুরতে বের হন মেয়েটি।
সকাল ৯টার দিকে জলঢাকা উপজেলার রাজারহাট বাজারে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় তারা দুজন আহত হন বলে জানান তারা।
প্রথমে তাদের জলঢাকা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়; পরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুপুরে ওই ছাত্রী মারা যান।
তার বাবা অভিযোগ করেন, দুপুর ১২টার দিকে তিনি মেয়ের মৃত্যুর খবর পান। ফয়সালের সঙ্গে তার মেয়ের কোনো সম্পর্ক ছিল না।
“আমার মেয়ে প্রাইভেট পড়তে গেলে তারা আমার মেয়েকে অপহরণ করে মোটরসাইকেলে নিয়ে যাচ্ছিল। এতে আমার মেয়ে বাধা সৃষ্টি করলে তাকে রাস্তায় ফেলে হত্যা করেছে। আমি সোমবার রাত ১২টার দিকে জলঢাকা থানায় মামলা দায়ের করেছি “
এ বিষয়ে মামলার আরেক আসামি বাহাজাত জুলফিকার রিজভী বলেন, সকাল ৯টা ৩১ মিনিটে ফয়সাল ফোনে তাকে দুর্ঘটনার খবর জানান। চিকিৎসার সহযোগিতার জন্য কিছু টাকাসহ তাকে যেতে বলেন ফয়সাল। তার ফোন পেয়ে তিনি রাজার হাটের ঘটনাস্থলে পৌঁছেন। সেখনে গিয়ে তাকে না পেয়ে জলঢাকা হাসপাতালে যান।
তিনি বলেন, চিকিৎসকের পরামর্শে ফয়সালসহ ওই ছাত্রীকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে নেন তিনি। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এই ছাত্রী মারা যান।
এই বিষয়ে ফজলুল করিম ফয়সালের বড়ো বোন আরিফা আক্তার বলেন, তার ছোটভাই ফজলুল করিম ফয়সাল, এই ছাত্রী এবং তিনি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একসঙ্গে একই শ্রেণিতে পড়তেন। সে হিসেবে ওই ছাত্রীর সঙ্গে তাদের বন্ধুত্ব। তার মৃত্যুতে তারাও ব্যথিত।
তিনি আরও বলেন, “ফয়সালের জন্মদিন ছিল গতকাল; হয়তো সে কারণে তারা ঘুরতে যেতে পারে, যেটা আমাদের জানা নেই।”
অপহরণের ঘটনা সত্য নয় বলে তার ধারণা।
মেয়েটির বাবার করা মামলার সাক্ষী তার বান্ধবী নুরী আক্তার (২১) বলেন, টেংগনমারী বাজারে ইংরেজি প্রাইভেট পড়ার জন্য বাড়ি থেকে এই ছাত্রীসহ চার বান্ধবী বাড়ি থেকে বের হন। কচুকাটা বাজার থেকে টেংগনমারী যাওয়ার পর তার মোবাইলে একটি কল আসলে তিনি ভ্যান থেকে নেমে যান এবং বলে ‘প্রাইভেট শেষ হলে আমাকে ফোন দিস’।
“এরপর আমরা প্রাইভেট শেষে তাকে ফোন দিলে সে ফোন রিসিভ করেনি। আমরা অপর তিন বান্ধবী বাড়ি চলে এসেছি।”
জলঢাকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা মেসবাহুর রহমান প্রধান বলেন, সোমবার সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে দুইজন হাসপাতালের জুরুরি বিভাগে আসেন। মেয়েটির অবস্থা আশংকাজনক হলে অ্যাম্বুলেন্সে তাদের রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
জলঢাকা থানার ওসি মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এই ঘটনায় মেয়ের বাবা বাদী হয়ে থানায় একটি অপহরণ ও হত্যা মামলা করেছেন। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।