শাশুড়ির শতকটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে আওয়ামী লীগের এক নেতাকে সস্ত্রীক কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
Published : 25 Oct 2020, 03:27 PM
রোববার বগুড়ার মুখ্য বিচারিক হাকিম রবিউল আওয়ালের আদালতে তাদের জামিনের আবেদন গ্রহণ না করে কারাগারে পাঠায় বলে বাদীপক্ষের আইনজীবী রেজাউল করিম মন্টু জানিয়েছেন।
তারা হলেন, বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ার হোসেন রানা এবং তার স্ত্রী আকিলা শরীফা সুলতানা।
গত ৫ অক্টোবর তারাসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন আনোয়ার হোসেন রানার শাশুড়ি এবং বগুড়া সদরের কাটনারপাড়া এলাকার ব্যবসায়ী প্রয়াত শেখ সরিফ উদ্দিনের স্ত্রী দেলোয়ারা বেগম। সরিফ বিড়ি ফ্যাক্টরিসহ তাদের বিভিন্ন ব্যবসা রয়েছে।
আইনজীবী রেজাউল করিম মন্টু বলেন, গত ৫ বছর ধরে দেখাশোনার অজুহাতে তার কাছেই ছিলেন মেয়ে-জামাই। সেবা-শুশ্রূষার অজুহাতে কখনো শাশুড়িকে ভুলিয়ে-ভালিয়ে আবার কখনো জিম্মি করেন রানা।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, বাদীর স্বামীর মৃত্যুর পর ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে স্বামীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সরিফ বিড়ি ফ্যাক্টরি পরিচালনা করছিলেন তিনি।
এ প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হিসেবে ছিলেন তার পাঁচ মেয়ে আকিলা সরিফা সুলতানা, মাহবুবা সরিফা সুলতানা, নাদিরা সরিফা সুলতানা, কানিজ ফাতিমা ও তৌহিদা সরিফা সুলতানা।
অংশিদারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে তারা শহরের শাকপালা এবং চারমাথা এলাকায় সরিফ সিএনজি লিমিটেড নামের দুটি ফিলিং স্টেশন এবং নবাববাড়ি রোডে দেলওয়ারা-শেখ সরিফ উদ্দিন সুপার মার্কেট পরিচালনা করে আসছিলেন।
শারীরিক অসুস্থতা ও বার্ধক্যজনিত কারণে জামাই আনোয়ার হোসেন রানা এবং মেয়ে আকিলা সরিফা সুলতানাকে ব্যবসা দেখাশোনার মৌখিক অনুমতি দেন।
“এক পর্যায়ে তাকে অস্ত্রের মুখে জম্মি করে ফাঁকা স্ট্যাম্প, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংকের চেক এবং এফডিআরসহ বিভিন্ন নথিপত্রে তার সই নেন জামাই। এরপর তার নিজের নামীয় ব্যাংক একাউন্ট থেকে নগদ টাকাসহ এফডিআর ভাঙিয়ে প্রায় ৫০ কোটি টাকারও বেশি তুলে নেন।”
২০১৫ সালের ১ জুন থেকে এ বছরের ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই অর্থ তুলে আত্মসাৎ করেছেন মেয়ে জামাই। এর বাইরে একই সময়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও তার নামীয় ব্যাংক হিসাব থেকে আরো ৫০ লাখ টাকা তুলে আত্মসাৎ করেন বলে অভিযোগ আনা হয়েছে।
তাদের এ কাজে সহায়তা করেছেন সরিফ বিড়ি ফ্যাক্টরির ব্যবস্থাপক কাম ক্যাশিয়ার নজরুল ইসলাম (৩৮), ফিলিং স্টেশনের ব্যবস্থাপক হাফিজার রহমান (৫০) এবং সুপারমার্কেটের ব্যবস্থাপক তৌহিদুল ইসলাম (৫০) মামলায় বলা হয়েছে।
দেলওয়ারা বেগম জানান, জামাই আনোয়ার হোসেন রানা পিস্তল উঁচিয়ে তাকে হত্যার হুমকি দিচ্ছিলেন। এরই মাঝে গত ২১ সেপ্টেম্বর বাসার আলমারি-সিন্দুক থেকে নগদ অর্থ, ব্যাংকের চেক, এফডিআর এবং ব্যবসায়ীক সব নথিপত্র নিয়ে চলে যান।
এরআগে গত ২৪শে সেপ্টেম্বরে আনোয়ার হোসেন রানার বিরুদ্ধে জেলা পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন সরিফ উদ্দিনের চার মেয়ে মাহবুবা সরিফা সুলতানা, নাদিরা সরিফা সুলতানা, কানিজ ফাতিমা ও তৌহিদা সরিফা সুলতানা।
তারা অভিযোগ করেছিলেন, অসুস্থ বিধবা মা দেলওয়ারা বেগমকে জিম্মি করে, ভুল বুঝিয়ে এবং রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন আনোয়ার হোসেন রানা।