বরিশালে পুলিশের নির্দেশে এক কিশোরের চুল কাটার ভিডিও ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়ার পর সমালোচনা শুরু হয়েছে।
Published : 12 Oct 2020, 11:13 PM
গত শুক্রবার সন্ধ্যায় নগরীর আমতলার মোড় লেক এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ বলছে, ওই কিশোরের চুল ও পোশাক ছিল উগ্র; আচরণ ছিল উশৃঙ্খল। তাই তাকে চুল কাটার জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল।
ঘটনার পর একটি ভিডিও ফেইসবুকে আপলোড করেন বরিশাল মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের এসআই মহিউদ্দিন মাহি; যদিও একদিন পর (রোববার) ভিডিওটি ফেইসবুক থেকে সরিয়ে নেন তিনি। তবে এর আগেই ভিডিওটি ভাইরাল হয়।
৪ মিনিট ৫ সেকেণ্ডের এই ভিডিওতে দেখা যায়, এক কিশোরের কাছে বড় চুল রাখা, চুলে রং করা ও কানে দুল পরা নিয়ে তিরস্কার করেন এসআই মহিউদ্দিন মাহি। তার চুল কাটার নির্দেশ দেন তিনি। ওই সময় সেখানে উপস্থিত সাধারণ মানুষ বিষয়টিকে সমর্থনও করেন।
এ প্রসঙ্গে ডিবি পুলিশের এসআই মহিউদ্দিন মাহি বলেন, সারা দেশে কিশোর গ্যাংয়ের অপরাধ বেড়ে চলেছে। বরিশালে যাতে তারা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে এজন্য পুলিশের একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে।
তিনি বলেন, শুক্রবার সন্ধ্যায় তিনিসহ ডিবির একটি টিম আমতলার মোড় লেকের পাড়ে অবস্থান করছিল। এ সময় ১০/১৫ জনের একটি কিশোর গ্যাং জন্মদিন পালনের নামে লেক এলাকায় উশৃঙ্খল আচরণ করছিল। তাদের কারণে লেকের পারে হাঁটতে ও পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা নারী-পুরুষ বিরক্ত হচ্ছিলেন।
কিশোরদের মধ্যে কয়েকজনের মাথার চুল ও পোশাক উগ্র ধরনের ছিল দাবি করে তিনি বলেন, বিষয়টি পুলিশের দৃষ্টিগোচর হলে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
“এদের মধ্যে একজনের মাথার চুল রং করা ও কানে দুল পরা ছিল। শরীরে উল্কি আঁকাও ছিল। তাকে লেকের পাশের একটি সেলুনে নিয়ে গেলে, সে নিজে থেকেই চুল কাটতে আগ্রহ প্রকাশ করে। সেখানে উপস্থিত সাধারণ মানুষও চুল কাটার পক্ষে ছিলেন।”
এই বিষয়ে ওই কিশোর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তিনি শর্ট ফিল্মে অভিনয় করেন। তাই চুলে রং করেছেন এবং কানে দুল পরতেন। শুক্রবার বিকালে ত্রিশ গোডাউন এলাকায় সুটিং ছিল। সুটিং শেষে এক বন্ধুর জন্মদিন পালন করতে আমতলার মোড় লেকের পাড়ে গিয়েছিলেন।
কোনো কারণ ছাড়াই পুলিশ তার চুল কাটতে বাধ্য করেছে বলে তার দাবি।
এই কিশোর নগরীর বটতলা এলাকার বাসিন্দা এবং অক্সফোর্ড মিশন স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র বলে স্থানীয়রা জানান।
তার বন্ধু শ্রী চৈতন্য মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র খায়রুল হোসেন তার পরিচয় নিশ্চিত করেছেন।
বিষয়টিকে বেআইন কর্মকাণ্ড বলছেন বরিশাল আইনজীবী সমিতির সভাপতি আফজালুল করিম।
তিনি বলেন, পুলিশ কাউকে চুল কাটতে বাধ্য করতে পারে না। আইন পুলিশকে এই ক্ষমতা দেয়নি। পুলিশ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। এই ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধে মামলা হতে পারে।
একই কথা বলছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের বরিশাল মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম।
তিনি বলেন, এই ঘটনায় ওই কিশোরের মৌলিক অধিকার ক্ষুন্ন হয়েছে। পুলিশ ওই কিশোরকে বুঝিয়ে বলতে পারত। কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আশা পুলিশের কাজ। কিন্তু কারও বিচার করার ক্ষমতা আইনগতভাবে পুলিশের নেই।
এ ব্যাপারে বরিশাল মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিবি) মঞ্জুর রহমান বলেন, “পুলিশ কারও চুল কাটেনি। ওই কিশোর উশৃঙ্খল টাইপের ছিল। তাকে দেখতে খারাপ দেখাচ্ছিল। এজন্য হয়ত তাকে সেলুনে নিয়ে গিয়ে চুল কাটতে বলেছে। এই কাজগুলো বাড়িতে বাবা-মায়ের করার কথা।”