নারায়ণগঞ্জে মসজিদে এসি বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনায় তিতাস গ্যাসের কোনো কর্মকর্তার দায়িত্বে গাফিলতি থাকলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু।
Published : 05 Sep 2020, 09:57 PM
শনিবার বিকালে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পশ্চিমতল্লা এলাকার বাইতুস সালাত জামে মসজিদ পরিদর্শন করে একথা বলেন তিনি। পাশাপাশি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার মধ্যে ওই মসজিদে এতগুলো এসি নিয়ম মেনে চালানো হচ্ছিল কি না সে প্রশ্ন তুলে সবাইকে সতর্ক করেছেন প্রতিমন্ত্রী।
অবৈধভাবে স্থাপনা নির্মাণ করে এবং অবৈধভাবে লাইন নিয়ে দুর্ঘটনা থামানো যাবে না বলে সতর্ক করে নসরুল হামিদ বলেন, “আমরা দেখেছি পুরো এলাকাটি ঘনবসিতপূর্ণ। আশপাশে সব বস্তি। নারায়ণগঞ্জ শহর ড্যাপের অধীন, রাজউকের অধীন। দেখেই বোঝা যাচ্ছে এখানে যতগুলো ভবন হয়েছে সেগুলো সবই অবৈধ। এগুলো একটাও রাজউকের অনুমোদন সাপেক্ষে ভবন করা হয় নাই।
“এত বড় ভবনে এই ধরনের বিদ্যুতের লোড তারা কীভাবে নিল? এই ধরনের মসজিদে এতগুলো এসি ব্যবহার করা খুবই বিপজ্জনক।”
এই ধরনের দুর্ঘটনা রোধে প্রতিটি মসজিদ, মন্দির ও অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে এখনই পরীক্ষা করা দরকার বলে মন্তব্য করেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী।
“কারণ তারা এতগুলো এসি লাগাচ্ছেন স্ব স্ব বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে পরীক্ষা করাচ্ছেন না। স্থানীয় ইলেকট্রিশিয়ান নিম্নমানের তার দেন। এর আগেও কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। শর্ট সার্কিট থেকে পুড়ে গেছে।”
ওই মসজিদের নিচ দিয়ে যাওয়া তিতাস গ্যাসের লাইনে লিকেজ থেকে গ্যাস বেরিয়ে তা জমে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করছে ফায়ার সার্ভিস। এ বিষয়ে মসজিদ কমিটির নেতারা বলছেন, কয়েক মাস আগে বিষয়টি তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষকে জানালে তারা মেরামতের জন্য ৫০ হাজার টাকা চাওয়ায় তা আর ঠিক করা হয়নি।
সাংবাদিকরা এ বিষয়ে প্রতিমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, “এখানে দুটি জিনিস- গ্যাস সংযোগ আসল কীভাবে এবং গ্যাস পাইপলাইনের উপরে মসজিদ নির্মাণ হলো কীভাবে? তাহলে এটা অবৈধ? যারা অবৈধভাবে নির্মাণ করেছেন তাদেরও শাস্তি হওয়া দরকার। যারা অবৈধভাবে কানেকশন নিয়েছে তাদেরও শাস্তি হওয়া দরকার এবং আমার বিভাগ যদি যে কোনো অফিসারের গাফিলতির কারণেও হয় তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে বরখাস্ত করে তাদের বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ঘটনা কীভাবে ঘটল সে বিষয়ে স্পষ্ট হওয়ার জন্য তদন্ত শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষার কথা বলে তিনি বলেন, “তবে দেখার বিষয় এত ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় কীভাবে এতগুলো এসি চলছিল। আশপাশের অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ নেওয়া হয়েছে। অনেক অবৈধ লাইন রয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি, অবৈধ সংযোগগুলো বিচ্ছিন্ন করার জন্য। এলাকার মানুষ সকলকে আমাদের সহযোগিতা করতে হবে।
“এইভাবে অবৈধভাবে লাইন নিয়ে অবৈধভাবে নির্মাণ করে দুর্ঘটনা থামানো যাবে না। অবশ্যই আপনাদের নিয়মনীতি ও শৃঙ্খলা মধ্যে থেকে যা কিছু করুন। না হলে কিন্তু এই ধরনের ঘটনা ঘটতেই থাকবে। পরবর্তীতে ঘটনা ঘটলেই কিন্তু সকলের টনক নড়ে।
“আপনাদেরকে আল্লাহর ওয়াস্তে বলছি, যখনি আপনারা ধাহ্য পদার্থ নিয়ে কাজ করবেন স্ব স্ব বিভাগের অনুমোদন নিয়ে কাজ করবেন। আমি এখনও কিছু মনে করছি না। তদন্ত প্রতিবেদন সরাসরিভাবে না আসা পর্যন্ত আমার মুখ থেকে কিছু বলতে পারছি না। খুব খারাপ পরিস্থিতিতে এলাকাটি তৈরি হয়েছে।”
নারায়ণগঞ্জের অবৈধ গ্যাস-বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে স্থানীয়দের সহযোগিতা চেয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “ভবিষ্যতে যাতে এই ধরনের ঘটনা না ঘটে দুই পক্ষ থেকে সেই প্রস্তুতি থাকতে হবে। একরতফা না, মানুষকে সচেতন থাকতে হবে।”
এদিকে দুপুরে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাজ্জাদ হোসাইন মসজিদটি পরিদর্শন করেন।
পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “পরিদর্শন করে যা মনে হয়েছে, এখানে আগুনটা ছিল খুব অল্প সময়ের জন্য। চারদিকে তাকালে আপনারা দেখবেন পোড়া কোনো দাগ নেই। খুব অল্প পোড়া দাগ আছে। এবং ধোয়ারও কোনো চিহ্ন নেই।
“আমার কাছে যেটা মনে হচ্ছে, গ্যাস। গ্যাস থেকে সজোরে ধাক্কা লেগেছে, খুব সহসাই এটা নিভে গেছে। আগুনটা খুব বেশি সময় জ্বলে নাই। সেজন্য মসজিদের কোথাও পোড়া দাগ দেখতে পাবেন না। আগুনের তীব্রতা এত বেশি ছিল যে, মুহূর্তের মধ্যে মুসল্লিদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পুড়ে গেছে।”
তিনি বলেন, “আপাত দৃষ্টিতে যেটা মনে হয়েছে, গ্যাস থেকে বিস্ফোরণ হয়েছে। ঘটনার দিন ফ্লোরে পানি ছিল ফ্লোরের ১৫ থেকে ২০ জায়গা দিয়ে বুদ বুদ উঠছিল। আমাদের যে গ্যাস মিটার আছে, সেটি দিয়ে পরীক্ষা করে দেখেছি ১৭ শতাংশের বেশি মিথেন গ্যাস ছিল।
গ্যাস থেকে আগুনের সূত্রপাত কীভাবে হতে পারে সে বিষয়ে জানতে চাইলে ফায়ার ব্রিগেডের প্রধান বলেন, “এই মসজিদে দুটি বিদ্যুতের লাইন আছে। সেখানে বিদ্যুতের মেইন বোর্ডের কাছে বড় ধরনের একটি ত্রুটি দেখা গেছে। সেখানে পোড়ার দাগও আছে।
“আমরা প্রত্যক্ষদর্শীদের সাথে কথা বলে জানতে পেরেছি, মসজিদে নামাজের শেষ সময়ে এক ফেজ বিদ্যুৎ চলে যায়। তখন দ্বিতীয় ফেজে বিদ্যুৎ নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। যখন দ্বিতীয় ফেজে বিদ্যুৎ নিশ্চিন্তের চেষ্টা করা হয়েছে তখন ওই চেঞ্জারে স্পার্ক থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে।”