গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলায় ১৮টি বেসরকারি হাসপাতাল ও রোগ নিরাময় কেন্দ্র রয়েছে, যেগুলোর কোনো সনদ নেই।
Published : 30 Aug 2020, 09:01 PM
এসব হাসপাতালের মালিকরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে সনদের আবেদন করে অনুমতি পাওয়ার আগেই চিকিৎসা ও রোগ নিরাময় কার্যত্রম শুরু করেছেন।
এসব প্রতিষ্ঠানে সার্বক্ষণিক কোনো চিকিৎসক নেই; নার্সিং পাশ করা নার্স বা টেকনিশিয়ান নেই। মালিক ও তাদের স্বজনরাই চিকিৎসক, নার্স, টেকনিশিয়ান, আয়া, ওয়ার্ডবয় ও হাসপাতাল ব্যবস্থাপনার কাজ করছেন।
গোপালগঞ্জ সিভিল সার্জন অফিস থেকে জানা গেছে, জেলার মুকসুদপুর উপজেলায় ২১টি বেসরকারি হাসপাতাল ও রোগ নিরাময় কেন্দ্র [ডায়গনেস্টিক সেন্টার] রয়েছে। এর মধ্যে ১৮টিরই সরকারের অনুমোদন [সনদ] নেই। বাকি চারটির সনদ আছে; কিন্তু নবায়ন করা হয়নি।
সনদবিহীন ইসলামিয়া হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক মুকসুদপুর কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাঈম গাজী।
তার স্ত্রী সানিয়া সুলতানা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে টেকনিশিয়ান পাশ করার দাবি করেছেন। সানিয়া এই হাসপাতাল পরিচালনা করেন।
সানিয়া সুলতানা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে আড়াই মাস আগে লাইসেন্সের [সনদ] জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে আবেদন করেই আমরা ক্লিনিক শুরু করেছি। এখনও ওটিতে এসিসহ আধুনিক যন্ত্রপাতি আনা হয়নি। তারপরও এখানে সিজারিয়ানসহ সব ধরনের অপারেশন করা হচ্ছে।”
তাদের এই হাসপাতালে ‘কাগজে কলমে’ একজন আরএমওসহ তিনজন চিকিৎসক ও ছয়জন পাশ করা নার্সকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
“ক্লিনিকে সব সময় চিকিৎসক ও নার্স থাকার কথা; কিন্তু তারা সরকারি চাকরি করেন। তাই অফিস শেষে অন কলে ক্লিনিকে এসে তারা অপারেশন করেন।”
সব ক্লিনিকে এভাবে ডাক্তার আসে দাবি করে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত এই ক্লিনিকে ৬০টি অপারেশন হয়েছে। প্রতিদিনই অপারেশন চলছে। চিকিৎসক ও নার্স সব সময় থাকে না।
ওই হাসপাতালের নার্স সুষমা বলেন, “আমি ইন্টারমিডিয়েট পাশ। গত আট বছর বিভিন্ন ক্লিনিকে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে। এখানে সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগাচ্ছি।”
ওই প্রতিষ্ঠানের নার্স নীলা পারভীন বলেন, “আমি ২০১৭ সালে এসএসসি পাশ করেছি। আমারে কোনো নার্সিং সার্টিফিকেট নেই।”
আরেক নার্স ফারজানা বলেন, “আমার একাডেমিক কোনো সার্টিফিকেট বা পড়াশোনা নেই। এখানে নার্সের দায়িত্ব পালন করছি। হাসপাতাল মালিকের স্ত্রী সানিয়া আপা আমাদের নার্সের কাজ শেখান।”
হাসপাতালে ভর্তি রোগী ডলি আক্তার ও রত্না বেগম বলেন, সিজারিয়ান আপরেশনের আগে তারা প্রত্যেকে ২০ হাজার টাকায় চুক্তি করেছেন। অপারেশনের পর ডাক্তারের দেখা নেই। কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না।
ডলি আক্তার বলেন, “ক্লিনিক মালিকের স্ত্রী ও স্বজনরা চিকিৎসক, নার্স, আয়া ও ওয়ার্ড বয়ের কাজ করেন। এখানে এসে চিকিৎসার নামে প্রতারণার ফাঁদে পড়েছি।”
এক রোগীর স্বজন মুকসুদপুরের মহারাজপুর গ্রামের মিরাজ শেখ বলেন, “এই হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবার নামে প্রতারণা করা হচ্ছে। এখানে রোগীর জীবন নিয়ে রমরমা বাণিজ্য চলছে। অবৈধভাবে তারা এ বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। এটি বন্ধ করতে হবে।”
গোপালগঞ্জে সিভিল সার্জন নিয়াজ মোহাম্মদ বলেন, “অনলাইনে ক্লিনিকের লাইসেন্সের আবেদন করার পর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তদন্তের জন্য আমাদের কাছে কাগজপত্র পাঠাবে। আমরা তদন্ত করে সন্তোষজনক প্রতিবেদন দিলেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তর লাইসেন্স দেবে।”
লাইসেন্স পাওয়ার পর ক্লিনিক শুরু করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমরা লাইসেন্সবিহীন ও লইসেন্স নবায়ন নেই এমন ক্লিনিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।”