সরেজমিনে দেখা গেছে, জোয়ারের পানিতে বাড়িঘর, গবাদি পশু, পুকুর ও ঘেরের মাছ ভেসে গেছে; ধসে পড়েছে পাকা, আধাপাকা বাড়িঘর এবং কাঁচা সড়ক। অনেক এলাকায় বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্য সঙ্কট দেখা দিয়েছে। বাড়িঘর পানিতে ডুবে যাওয়ায় চুলা জ্বলছে না অনেক পরিবারে।
বন বিভাগের নিঝুম দ্বীপ বিট কর্মকর্তা এসএম সাইফুর রহমান জানান, ২০০১ সালে সরকার নিঝুম দ্বীপের ৪০ হাজার ৩’শ ৯০ একর বনভূমিতে জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করে। দ্বীপের বনে রয়েছে প্রায় পাঁচ হাজার হরিণ।
সাইফুর বলেন, প্রায় এক সপ্তাহ ধরে জোয়ারে বনের ভেতরে প্রায় পাঁচ ফুট পানি জমে আছে। হরিণের দল বন থেকে লোকালয়ে উঁচু জায়গায় উঠে আসার সময় অনেক হরিণ জোয়ারের তোড়ে ভেসে গেছে। এছাড়া ৫০ হেক্টার বনের গাছ নষ্ট হয়ে গেছে।
নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেহরাজ উদ্দিন বলেন, “বঙ্গোপসাগর ও মেঘনা নদীর বুকে জেগে ওঠা ৮১ বর্গ কিলোমিটারের এ দ্বীপের চারপাশে কোন বেড়িবাঁধ নেই। যার কারণে দ্বীপের ৫৭ হাজার বাসিন্দা জোয়ার-ভাটার সঙ্গে যুদ্ধ করে টিকে রয়েছেন।
গত এক সপ্তাহ ধরে চলা অস্বাভাবিক জোয়ারে প্রায় পাঁচ হাজার গরু, ছাগল, মহিষ ও ভেড়া এবং পুকুর এবং ঘেরের অন্তত তিন কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে বলে মেহরাজের ভাষ্য।
তিনি বলেন, গত ২০ বছর ধরে নিঝুম দ্বীপে পাকা, আধাপাকা এবং কাঁচা যেসব সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে, তীব্র জোয়ারের তোড়ে সেগুলো নষ্ট হচ্ছে। ফলে দ্বীপের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থাও ভেঙে পড়েছে। সব মিলিয়ে দ্বীপের অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ চরম দুর্ভোগে দিন কাটাচ্ছেন।
ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সরকারিভাবে চার মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা খুবই কম। এ পরিস্থিতিতে বিভিন্ন ওয়ার্ডের সদস্য, চৌকিদার, দফাদার এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সহায়তায় স্থানীয় প্রশাসন নিজেদের সাধ্য অনুযায়ী বাড়ি বাড়ি শুকনো খাবার ও নগদ টাকা পৌঁছে দিচ্ছে বলে জানান ইউপি চেয়ারম্যান।
হাতিয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রেজাউল করিম বলেন, টানা বৃষ্টি ও অস্বাভাবিক জোয়ারে বেড়িবাঁধ ভেঙে তার উপজেলার ১০ ইউনিয়নের অন্তত ৩০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে নিঝুম দ্বীপে কোনো বেড়িবাঁধ না থাকায় চারদিক থেকে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
বেড়িবাঁধ নির্মাণের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাছির উদ্দিন বলেন, নিঝুম দ্বীপের চার পাশে বেড়িবাঁধ করার জন্য বড় অঙ্কের বরাদ্দ দরকার। এ বিষয়ে এখনই সকারের নীতিগত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আর্কষণ করলে জেলা প্রশাসক খোরশেদ আলম খাঁন বলেন, “নিঝুম দ্বীপ অতীতে কখনো জোয়ারে এতটা পানি প্রবেশ করেনি বলে বেড়িবাঁধের প্রয়োজন হয়নি। তবে, এবারের অস্বাভাবিক জোয়ারে যেহেতু দ্বীপের বেশির ভাগ এলাকাই প্লাবিত হয়েছে। তাই বেড়িবাঁধ নির্মাণের বিষয়ে নতুন করে ভাবতে হবে ।”