গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় হাসপাতালকর্মীকে তালপাতার ঝুপড়িঘরে কোয়ারেন্টিনে রাখার ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
Published : 28 Apr 2020, 05:20 PM
মঙ্গলবার কোটালীপাড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মহসিন উদ্দিনকে প্রধান করে এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
কমিটির বাকি সদস্যরা হলেন- কোটালীপাড়া থানার ওসি (তদন্ত) মো. জাকারিয়া ও কোটালীপাড়া উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা শ্রীময়ী বাকচী। আগামী তিন কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
নারী স্বাস্থ্যকর্মীকে পুকুরের একটি নির্জন স্থানে তালপাতা দিয়ে ঝুপড়িঘর তৈরি করে সেখানে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখার খবর সোমবার গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়।
এর পরপরই বিকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মাহফুজুর রহমান ও পুলিশের সহযোগিতায় ওই নারী স্বাস্থ্যকর্মীকে ঝুপড়িঘর থেকে উদ্ধার করে নিজ বাড়িতে ফিরিয়ে আনা হয়।
পরে ওই নারীকে তাদের ঘরের পাশে একটি ছাপড়া ঘর তুলে সেখানে রাখা হয়। এছাড়া তালপাতার সেই ঝুপড়িঘর ভেঙে দেয় পুলিশ।
ওই নারীর (২১) বাড়ি কোটালীপাড়া উপজেলার লখণ্ডা গ্রামে। ঢাকার ইমপালস হাসপাতালে চিকিৎসকের অ্যাটেনডেন্ট হিসেবে চাকরি করেন তিনি।
ওই নারী বলেন, কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী পাওয়ার পর ওই হাসপাতালের কয়েকটি বিভাগ বন্ধ রাখা হয়েছে। সে কারণে গত মঙ্গলবার বাড়ি ফেরেন তিনি।
পরে তার ফেরার খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে এলাকাবাসী জড়ো হয়।পরে বাড়ির প্রায় ৪০০ মিটার দূরে পুকুরপাড়ে তালপাতা দিয়ে ঝুপড়িঘর তৈরি করে সেখানে তাকে কোয়ারেন্টিনে থাকতে বাধ্য করা হয়।
মেয়েটির মায়ের অভিযোগ, উপজেলার সাদুল্লাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রশান্ত বাড়ৈ চাপ সৃষ্টি করে তার মেয়েকে তালপাতা দিয়ে বানানো একটি ঝুপড়িঘরে রেখেছিলেন।
নাম প্রকাশ করার শর্তে এলাকার একাধিক ব্যক্তি জানান, বিষয়টিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে ওই এলাকার একটি প্রভাবশালী মহল মাঠে নেমেছে। ইতোমধ্যে তারা ওই স্বাস্থ্য কর্মীকে দিয়ে লিখিয়ে নিয়েছে যে, সে নিজের ইচ্ছায় ওই পুকুরের মধ্যে তালপাতার ঝুপড়িঘরে কোয়ারেন্টিনে ছিলেন। এ ব্যাপারে কেউ তাকে বাধ্য করেনি। ওই স্বাস্থ্য কর্মীর বাবা নেই। তার আয়ের ওপরই তার মাকে নির্ভর করতে হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস এম মাহফুজুর রহমান বলেন, “অমানবিক এ ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছি। তদন্তে যারা দোষী প্রমাণিত হবে তাদের বিরুদ্ধে আইনগতভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
এ ছাড়া ওই স্বাস্থ্য কর্মীর গ্রামের জরাজীর্ণ ঘরটি সংস্কার করে দেওয়া হবে বলেও জানান ইউএনও।