শনিবার ওই চারজনের বাড়ি গিয়ে খাদ্য সহায়তার পাশাপাশি করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষার জন্য মাস্কও দিয়ে এসেছেন তিনি।
চারজনের মধ্যে ষাটোর্ধ্ব একজন বলেছেন, মুখে মাস্ক না থাকায় তাকে যেভাবে বাজারের মধ্যে কান ধরানো হয়েছে, তা লজ্জার, অপমানের।
বয়স্ক ব্যক্তিদের কান ধরিয়ে ‘বেআইনি ও অকর্মকর্তাসুলভ আচরণ’ করায় মনিরামপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইয়েমা হাসানকে ইতোমধ্যে কর্মস্থল থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
মহামারী নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রামণ ঠেকাতে অফিস-আদালত বন্ধ রেখে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া সবাইকে ঘরে থাকার আহ্বান জানাচ্ছে সরকার। আর এটা বাস্তবায়ন করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে মাঠ প্রশাসন কাজ করছে।
শুক্রবার যশোরের মনিরামপুর উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন সাইয়েমা হাসান। বিকালে চিনাটোলা বাজারে মাস্ক না পরায় দুই তরকারি বিক্রেতা, একজন ভ্যানচালক এবং অবসরপ্রাপ্ত একজন স্কুল কর্মচারীকে কান ধরিয়ে দাঁড় করিয়ে নিজের মোবাইল ফোনে সেই ছবি ধারণ করেন এই কর্মকর্তা।
ওই চারজনের মধ্যে শ্যামপুর গ্রামের সেই ভ্যানচালকের সঙ্গে শনিবার সকালে চিনাটোলা বাজারে কথা হয় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।
ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রশাসনের লোকজন’ যখন বাজারে এল, তখন তিনি রাস্তার পাশে ভ্যান নিয়ে দাঁড়িয়ে।
“আমার কাছে এসে জানতে চাইলো মুখোশ (ফেইস মাস্ক) কই। আমি বললাম, কিনি নাই। তখন ওই ম্যাডাম কান ধরে দাঁড়াতে বললেন।
“আমি বুড়া মানুষ, বাজারের এতগুলা মানুষের সামনে এভাবে কান ধরে উঠবস করালো… লজ্জা পাইছি, অপমান হইছি।”
ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে মাস্ক না পরার কারণে কোন আইনে একজন বয়স্ক ব্যক্তিকে কানে ধরানোর মত শাস্তি দেওয়া হল, কেনই বা সেই কান ধরার ছবি ক্যামেরাবন্দি করা হল, তা জানতে সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইয়েমা হাসানকে ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব শেখ ইউসুফ হারুন সকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ওই কর্মকর্তা সিনিয়র সিটিজেনের সঙ্গে অমানবিক, বেআইনি ও অকর্মকর্তাসুলভ আচরণ করেছেন। আমরা তাকে প্রত্যাহার করতে ডিসিকে নির্দেশ দিয়েছি।”
পরে সচিবের নির্দেশে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আহসান উল্লাহ শরিফী বেলা সাড়ে ১১টার দিকে চিনেটোলা বাজারে গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেন। সেখান থেকে তিনি অবমাননার শিকার চারজনের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চান।
আহসান উল্লাহ শরিফী জানান, চারজনের মধ্যে তিনজনই ভূমিহীন। একজন একটি স্কুলে দপ্তরির চাকরি শেষে এখন অবসরে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের জরুরি খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেওয়া ওই খাদ্য সহায়তার মধ্যে রয়েছে চাল, ডাল, আলু, তেল, সাবান এবং ফেইস মাস্ক।