পুরোহিত যজ্ঞেশ্বর রায় হত্যায় ৪ জেএমবির ফাঁসির রায়

চার বছর আগে পঞ্চগড়ের পুরোহিত যজ্ঞেশ্বর রায় হত্যার দায়ে চার জেএমবি সদস্যের ফাঁসির রায় দিয়েছে আদালত।

রাজশাহী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 March 2020, 06:06 AM
Updated : 15 March 2020, 08:11 AM

রাজশাহীর দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালের বিচারক অনুপ কুমার রোববার এ রায় ঘোষণা করেন।

ফাঁসির দণ্ড পাওয়া চার আসামি হলেন জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজিব (৩০), আলমগীর হোসেন (৩৫), রমজান আলী (২২) ও রাজিবুল ইসলাম মোল্লা।

তাদের মধ্যে রাজিবুল ইসলাম পলাতক রয়েছেন। অন্য তিন আসামি রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়া অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় এ মামলার আরও তিন আসামিকে খালাশ দিয়েছে আদালত। তারা হলেন মো. হারেজ আলী, খলিলুর রহমান ও মো. রানা।

এছাড়া এ মামলার আরও তিন আসামি বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন।

২০১৬ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি পঞ্চগড়ের সোনাপোতা গ্রামের সন্তগৌরীয় মঠের অধ্যক্ষ যজ্ঞেশ্বর রায় (৫০) হত্যা মামলায় আদালত এই রায় দেয়।

মামলার নথি অনুযায়ী, এ ঘটনায় ১০ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন নিহত যজ্ঞেশ্বরের বড় ভাই রবীন্দ্রনাথ রায়। পরে আসামিদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে আরও দুটি মামলা করে দেবীগঞ্জ থানার পুলিশ।

পুলিশ তদন্ত করে সব মামলায় মোট ১০ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। পরে মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে পাঠানো হয়।

ট্রাইব্যুনালে ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনের দুই মামলায় সাক্ষগ্রহণ শুরু হয়। এর দুই বছর পরে ২০১৮ সালের ১৭ জানুয়ারি হত্যা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এনতাজুল হক বাবু বলেন, হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হয়েছে। আর অস্ত্র ও বিস্ফোরকের এক মামলায় পাঁচ বছর এবং অন্য মামলায় ১০ বছরের সাজা দিয়েছে আদালত।

এছাড়া উভয় মামলায় সবাইকে পাঁচ হাজার টাকা করে জরিমানা করেছে আদালত। জরিমানা না দিলে তাদের আরও এক বছর কারাগারে রাখার আদেশ দিয়েছে আদালত।

যজ্ঞেশ্বর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তার আগের বছর রংপুরে জাপানি নাগরিক হোশি কুনিও হত্যা, বগুড়ায় শিয়া মসজিদে হামলা ও ঢাকার আশুলিয়ায় তল্লাশি চৌকিতে পুলিশ হত্যাকাণ্ডের মিল ছিল। এসব হত্যাকাণ্ড ঘটানোর জন্য মোটরসাইকেলে আসা তিন খুনি অংশ নেন বলে সে সময় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছিলেন। এসব হামলাকারীর সঙ্গে আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো অস্ত্র ছিল।

গৃহত্যাগী যজ্ঞেশ্বরকে ভক্তরা মহারাজ/প্রভু বলে সম্বোধন করতেন। এই হত্যাকাণ্ডের সময় তার ভক্ত গোপাল চন্দ্র রায় গুলিতে আহত হন।

গোপাল সে সময় সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “সকালে আমি মঠের রান্নাঘরে গুরুর জন্য রুটি বানাচ্ছিলাম। এমন সময় গুরুজির চিৎকার শুনতে পাই।

“আমি রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে দেখতে পাই গুরুজির ঘর থেকে দুজন লোক বের হচ্ছে। তাদের পরনে প্যান্ট ও জ্যাকেট। জ্যাকেটের টুপি দিয়ে মাথা ঢাকা। আমাকে দেখামাত্র ওই দুজন কোমর থেকে পিস্তল বের করে বলতে থাকে, ‘তোর গুরুজিকে কতল করা হয়েছে।’ বলেই আমার দিকে গুলি ছুড়তে থাকে।”

গোপাল তখন গুলিবিদ্ধ অবস্থায় দৌড়ে দেয়াল টপকে পালিয়ে বাঁচেন।