ধর্মগুরু হত্যার ‘হোতা’সহ ৩ জঙ্গি গ্রেপ্তার

পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে হিন্দু ধর্মগুরুকে গলা কেটে হত্যার ঘটনায় নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবির সন্দেহভাজন তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ; এদের একজনকে বলা হচ্ছে ওই হত্যাকাণ্ডের ‘হোতা’।

পঞ্চগড় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Feb 2016, 07:37 AM
Updated : 26 Feb 2016, 06:02 PM

পুলিশের রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি হুমায়ুন কবির শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনজনকে গ্রেপ্তারের তথ্য জানান। উদ্ধার করা অস্ত্র প্রদর্শন করা হলেও গ্রেপ্তারদের নাম প্রকাশ করেননি তিনি।

তবে দেবীগঞ্জের দুটি পরিবার দাবি করেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে দুজনকে ধরে নেওয়া হয়েছে।

ওই তিনজনের মধ্যে এই দুজন রয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এরা হলেন- সুন্দরদীঘি ইউনিয়নের কালীরডাঙ্গা গ্রামের হারেজ আলী (৩২) এবং দণ্ডপাল ইউনিয়নের কালীগঞ্জ মসজিদপাড়া গ্রামের রমজান আলী (২২)।

ডিআইজি বলেন, ঘটনার দিন গ্রেপ্তার ও রিমান্ডে থাকা আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যে বৃহস্পতিবার রাতে পঞ্চগড় ও নীলফামারী জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হয়।

“ঘটনায় সরাসরি জড়িত পাঁচ জনের মধ্যে তিন জনই এ বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার হলো। এরা জেএমবির স্থানীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ের নেতা। তাদের মধ্যে হত্যাকাণ্ডের হোতাও রয়েছে। বাকি দুই জনকে গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।”

সাম্প্রতিক সময়ে উত্তরাঞ্চলে যেসব ঘটনা ঘটেছে তার সবকটির সঙ্গে জেএমবির সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।

“গ্রেপ্তারদের মধ্যে পুরোহিতকে জবাইকারী মূল অপরাধী, অপারেশনের আগে ও পরে যার বাসায় অস্ত্র রাখা হয়েছিল তাকে এবং হত্যাকাণ্ডের আগে ও পরে ঘটনাস্থলসহ আশপাশে নজরদারী করা ব্যক্তি গ্রেপ্তারের তালিকায় আছে।”

গ্রেপ্তার তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ওই হামলার ঘটনায় ব্যবহৃত দুটি পিস্তল, তিনটি ম্যাগাজিন, তিনটি হাতবোমা, তিনটি ছুরি, পাঁচটি গুলি এবং যে বাইসাইকেলে নজরদারি করা হয়েছে সেটিও উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

গ্রেপ্তার তিনজন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে পুরো ঘটনার বিবরণ দিয়েছে বলেও দাবি করেন ডিআইজি হুমায়ুন কবির।

তিনি বলেন, “আইএস জঙ্গি নয়, জেএমবি সদস্যরা এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।”

ডিআইজি বলেন, মূলত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট ও দেশকে অস্থিতিশীল করতে পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। তবে আইনশৃঙ্খরা বাহিনীর তৎপরতা ও জনগণের সহাতায় মাত্র পাঁচ দিনের মাথায় ‘ঘটনার রহস্য উদঘাটনে’ পুলিশ ‘সফল’ হয়েছে।

এ সময় পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার গিয়াসউদ্দিন আহমেদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দীন মোহাম্মদ ও সহকারী পুলিশ সুপার মো. কফিলউদ্দীন উপস্থিত ছিলেন।

গত ২১ ফেব্রুয়রি দেবীগঞ্জের সোনাপোতা গ্রামের সন্তগৌরীয় মঠের অধ্যক্ষ যজ্ঞেশ্বর রায়কে গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। তাদের গুলি ও বোমার বিস্ফোরণে আহত হন আরও দুইজন।

ওই ঘটনায় নিহতের বড় ভাই রবীন্দ্রনাথ থানায় হত্যা মামলা করেন। অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে পুলিশ আরেকটি মামলা করে। দুটি মামলাতেই অজ্ঞাত পরিচয় তিনজনকে আসামি করা হয়।

মামলার পর খলিলুর রহমান ও বাবুল হোসেন নামে দুই জেএমবি সদস্য এবং জাহাঙ্গীর হোসেন নামে এক শিবির নেতা ও নাজমুস সাকিব নামে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকে আটক করে পুলিশ।

অবশ্য পরে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে নাজমুস সাকিবের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি।

সংবাদ সম্মেলনে ডিআইজি হুমায়ুন কবির বলেন, যজ্ঞেশ্বর রায়কে হত্যার জন্য তিন হামলাকারী ২১ ফেব্রুয়ারি সকালে মোটরসাইকেলে করে মঠ এলাকায় যায়। তাদের মধ্যে একজন এশিয়ান হাইওয়েতে অবস্থান নেয় এবং অন্যজন সন্তগৌরীয় মঠের সীমানায় ঢোকে।

“তারা মন্দিরের উত্তরে টিন শেড ঘরের বাইরে যজ্ঞেশ্বর রায়কে গলা কেটে হত্যা করে এবং পিস্তল দিয়ে একটি গুলি করে। মন্দিরের পূজারি গোপাল চন্দ্র রায় এগিয়ে এলে তাকেও গুলি করা হয়।”

যজ্ঞেশ্বর রায়

এরপর হামলাকারীরা সড়কে ফিরে গিয়ে মোটরসাইকেলে উঠে ককটেল ফাটিয়ে ওই এলাকা ত্যাগ করে। তারা মঠের সামনে একটি হাতবোমা ও একটি চাপাতি ফেলে যায় বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।       

আহত গোপাল ঘটনার বিবরণ দিয়ে হাসপাতালে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “আমাকে দেখামাত্র ওই দুজন কোমর থেকে পিস্তল বের করে বলতে থাকে, ‘ওই ঘরে যাবি তো তোকেও কতল করব।  তোর গুরুজীকে কতল করা হয়েছে’। ‘তোরা বড় আনন্দে আছিস, রান্না ঘরে কীর্তন গাইছিলি’-বলেই আমার বুক বরাবর গুলি ছুড়তে থাকে ওরা।” 

হামলাকারী যে তিনজন ছিল এবং তারা যে মোটরসাইকেলে করে এসেছিল- তা অন্য প্রত্যক্ষদর্শীদের কথাতেও এসেছে।

গতবছর সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর বিভিন্ন হত্যা ও হামলার ঘটনার মতো পঞ্চগড়ের পুরোহিত হত্যার দায়ও মধ্যপ্রাচ্যের জঙ্গি দল আইএস স্বীকার করেছে বলে সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ দাবি করে। অন্যদিকে পুলিশ শুরু থেকেই বলে আসছে, ‘দেশীয় ধর্মান্ধ গোষ্ঠীই’ এ ঘটনা ঘটিয়েছে।