গত বছরের ২৫ ডিসেম্বর খালটি খননের কাজ শুরু হয়। ‘প্রায় দেড় কিলোমিটার’ খননের পর গত ২৯ জানুয়ারি রাতে কাজটি বন্ধ হয়ে যায়।
চরভদ্রাসন উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সদর ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ খান এ খাল খনন বন্ধ করেন বলে অভিযোগ উঠলেও তিনি তা অস্বীকার করেছেন।
এদিকে, বর্ষা আসার আগে খনন কাজ শেষ করতে না পারলে যেটুকু কাজ হয়েছে তাও নষ্ট হবে বলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি জানিয়েছেন।
এ ঘটনায় এলাকার মানুষের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
গত বছরের ২৫ ডিসেম্বর পাঁচটি এক্সকেভেটর দিয়ে খাল খননের কাজ শুরু হয়।
এক্সকেভেটর চালক নাসির মোল্যা, আনোয়ার হোসাইন ও সাইটের সাব-কন্ট্রাক্টর জিন্নাত ফকির বলেন, ২৯ জানুয়ারি রাতে চরভদ্রাসন উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবুল কালাম আজাদ খান দলবল নিয়ে এসে তাদেরকে কাজ বন্ধ রাখার জন্য শাসিয়ে যান। এ সময় আজাদ খান তাদের হুমকি ধামকি দেন এবং নানাভাবে ভয়ভীতি দেখান।
জিন্নাত ফকির বলেন, “কাজ বন্ধ থাকলেও পাঁচটি এক্সকেভেটর মেশিন বাবদ প্রতিদিন তাদের প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকা গচ্চা যাচ্ছে। যতদিন এই কাজ শুরু না হবে ততোদিন ক্ষতির পরিমাণ বাড়তেই থাকবে।”
মেসার্স নূর এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. ইকবাল হোসেন বলেন, “আগামী দুই মাসের মধ্যে কাজটি সম্পন্ন করতে না পারলে বর্ষা মৌসুমে কাজ করা সম্ভব হবে না। তখন পদ্মার পানি বেড়ে যাবে এবং খালে পানি থাকার কারণে খনন কাজ করা যাবে না।”
এতে যেটুকু কাজ তিনি সম্পন্ন করেছেন তাও নষ্ট হয়ে যাবে।
এ ব্যাপারে আবুল কালাম আজাদ বলেন, তিনি খাল খননের কাজ বন্ধ করার নির্দেশ দেননি।
ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদ বলেন, সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয় থেকে খালের জমি চিহ্নিত করে লাল পতাকা টাঙিয়ে দেওয়ার পর খনন প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়। যখন ওই লাল পতাকা টাঙানো হয়েছিল তখনই তারা আপত্তি জানাতে পারত।
“কিন্তু এখন কাজের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ শেষ হওয়ার পর এভাবে কাজ বন্ধ করে দেওয়ার মানে প্রকল্পটির ভবিষ্যতই অনিশ্চিত করে দেওয়া।”
এ ব্যাপারে সরেজমিনে এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বললে তারা স্থানীয় কৃষি ও নৌ যোগাযোগসহ নানা কারণে খালটি খনন করা জরুরি বলে মনে জানান।
সাবেক ওয়ার্ড সদস্য মো. মোসলেমউদ্দিন খান বলেন, “এ খাল ভরাট হয়ে গিয়েছিল। এখন পুনঃখনন করা হলে এলাকাবাসীর ব্যাপক উপকার হবে।”
স্থানীয় মৌলভীর চরের বাসিন্দা মো. হারুন মুন্সি (৬৫) বলেন, “ছোটবেলায় এ খালে লঞ্চ চলত। আমরা এ পথেই যাতায়াত করতাম। খালটি খনন করা হলে এলাকাবাসী কৃষিকাজসহ নানা দিক দিয়েই উপকৃত হবেন। খাল খননের এ কাজ যেন বন্ধ হয়ে না যায় সেজন্য আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি।”
এ বিষয়ে ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ আসলাম মোল্লা বলেন, সরকারি কাজে কেউ বাধা দিতে পারে না। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ তুলতে পারে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।