ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া বনে পল্লী বিদ্যুতের কভারবিহীন তারে বিদ্যুস্পৃষ্ট হয়ে তিন সপ্তাহে অন্তত দশটি বানর ঝলসে গেছে বলে বনবিভাগ জানিয়েছে।
Published : 07 Jan 2020, 07:25 PM
এই বনের প্রাণীগুলোর নিরাপত্তা এখনও হুমকির মধ্যে থাকলেও তা সমাধানে সংশ্লিষ্টরা কার্যত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বলে অভিযোগ বনবিভাগসহ পরিবেশ সচেতন অন্যদের।
বিদ্যুৎ বিভাগের ‘খামখেয়ালিপনার’ কারণেই এই দুর্ঘটনাগুলো ঘটেছে বলে বনকর্মকর্তাদের ভাষ্য।
ফুলবাড়ীয়ার সন্তোষপুর বিট কর্মকর্তা আশরাফুজ্জামান খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ফুলবাড়িয়া উপজেলার প্রায় ১৪ একর জায়গাজুড়ে প্রাকৃতিক বনাঞ্চল রয়েছে। এখানে প্রকৃতিতে সাড়ে ৩শর মতো বানর অবাধ বিচরণ করে।
তিনি জানান, কিছুদিন আগে বনের ভেতর দিয়ে পল্লী বিদ্যুতের কভারবিহীন উচ্চ ভোল্টেজের লাইন টানা হয় এবং গত ১৫ ডিসেম্বর তার উদ্বোধন হয়।
বিট কর্মকর্তা আশরাফুজ্জামান বলেন, “বিদ্যুতের তার টানানোর আগেই বিদ্যুৎ অফিসের লোকজনদের সতর্ক করা হয়েছিল। আমরা তাদের দাবি জানিয়েছিলাম ভূগর্ভস্থ অথবা কভারের তার টানানোর জন্য। কিন্তু তারা আমাদের কথা শোনেনি।”
দ্রুত স্থায়ীভাবে এর সমাধান না করা হলে বনের মধ্যে থাকা অন্য প্রাণীগুলোও আহত হতে পারে বলে তিনি আশংকা করছেন।
গত ১৫ ডিসেম্বর সন্তোষপুর বনাঞ্চলের আশপাশে ও বিট অফিসে পল্লী বিদ্যুতের নতুন সংযোগ উদ্বোধন করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য মোসলেম উদ্দিন। ওই সময় তিনি পল্লী বিদ্যুৎ কর্মকর্তাদের বন এলাকার ভেতরে খোলা তারের পরিবর্তে দ্রুত কভার দেওয়া বিদ্যুৎ লাইন টানার পরামর্শ দেন।
ময়মনসিংহ জেলা জনউদ্যোগের আহবায়ক অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম চুন্নু বলেন, “আয়োজন করে বন্যপ্রাণী আহত বা নিহত করা দণ্ডনীয় অপরাধ। সন্তোষপুরে বানর আহতের বিষয়ে বনকর্মকর্তারা ইচ্ছা করলে বিদ্যুৎ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবেন।”
আহত বানরগুলোকে দ্রুত চিকিৎসার আওতায় এনে তাদের সুরক্ষার দাবি জানান চুন্নু।
দর্শনার্থী আবুল হোসেন ও স্থানীয় মানিক মিয়া বলেন, ফুলবাড়িয়ায় মধুপুর বনাঞ্চলঘেঁষা সন্তোষপুর বনাঞ্চলে এক সময় হরিণ, ভাল্লুক, মেছোবাঘ, বাঘডাস, হনুমান, বানর, শিয়াল, সজারো ও খরগোশসহ নানা প্রজাতির বন্যপ্রাণীর অবাধ বিচরণ ছিল। বনদস্যুরা গাছ কেটে বন উজাড় করাসহ বনের ভেতর দিয়ে কভারবিহীন তারের কারণে হারিয়ে যাচ্ছে বন্যপ্রাণীগুলো।
স্থানীয় দোকানী হযরত আলী বলেন, খাবার সংকটের পাশাপাশি বিদ্যুৎস্পৃষ্টে আহত হওয়ায় নিরাপত্তাহীনতায় পড়েছে বানরগুলো।
“বানরকে কেন্দ্র করেই আমাদের ব্যবসা বাণিজ্য। দর্শনার্থীরা দোকান থেকে কলা, মুড়ি, বাদাম, চানাচুর, বিস্কুটসহ বিভিন্ন ধরনের খাবার কিনে দেয় বানরকে। এগুলো না থাকলে আমাদের ব্যবসাও ঘুটিয়ে ফেলতে হবে।”