‘বেপরোয়া বাসচালক নিয়ন্ত্রণ হারানোয়’ এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পুলিশের ভাষ্য।
শ্রীনগর থানার ওসি হেদায়েতুল ইসলাম ভুঁইয়া বলেন, শুক্রবার বেলা ২টার দিকে শ্রীনগর উপজেলার ষোলঘর এলাকায় ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে হতাহতের এ ঘটনা ঘটে।
নিহতদের সাতজনই এক পরিবারের। দুইজন তাদের প্রতিবেশী আর অন্যজন হলেন মাইক্রোবাসের চালক। হতাহত সবাই আত্মীয়-স্বজন। তাদের বাড়ি লৌহজং উপজেলার কনকশার গ্রামে।
ওসি হেদায়েতুল বলেন, কনকশার থেকে মাইক্রোবাসে করে বরযাত্রীর একটি দল ঢাকার কেরাণীগঞ্জ উপজেলার কামরাঙ্গীর চরে যাচ্ছিল।
নিহতদের মধ্যে তিনজন শিশু, দুইজন নারী আর পাঁচজন হলেন পুরুষ।
তাদের মধ্যে আছেন বরের বাবা আব্দুর রশীদ ব্যাপারি (৬০), বোন লিজা (২২), লিজার মেয়ে তাবাসসুম (৪), ভাবি রুনা আক্তার (২২), রুনার ছেলে তাহসিন (৩), মামাত বোন রানু (১২), বরের খালাত ভাই জাহাঙ্গীর আলম (৪৫), প্রতিবেশী কেরামত আলী (৭০), মফিজুল (৬০) ও মাইক্রোবাসের চালক বিল্লাল মিয়া (২৮)।
দুর্ঘটনার পর পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসকর্মীরা গিয়ে হতাহতদের উদ্ধার করে।
হাঁসাড়া হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মো. আব্দুল বাসেদ বলেন, “স্বাধীন পরিবহনের বেপরোয়া গতির বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ঢাকাগামী মাইক্রোবাসের ওপরে গিয়ে পড়লে এ দুর্ঘটনা ঘটে।”
দুর্ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থলে যান স্থানীয় ষোলঘর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আজিজুল ইসলাম।
বেলা পৌনে ২টার দিকে দুর্ঘটনার খবর পেয়েই আজিজুল ঘটনাস্থলে যান জানিয়ে বলেন, “আমি এসে শিশুসহ দুইজনের লাশ রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখি। ফায়ার সার্ভিসকর্মীরা মাইক্রোবাস কেটে আরও চারজনের লাশ উদ্ধার করে। আর অন্যদের হাসপাতালে পাঠায়। শ্রীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার হলে সেখানে মারা যান আরও দুইজন।”
আর রুনা আক্তার নামে অন্য একজন মারা যান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে।
ঢাকা মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া জানান, জাহাঙ্গীর আলম (৪৫) ও রুনা আক্তার (২৫) নামে দুইজনকে তাদের হাসপাতালে আনার কিছুক্ষণের মধ্যেই রুনা আক্তার মারা যান। আর হাসপাতালের আইসিইউ খালি না থাকায় জাহাঙ্গীরকে বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়।
পরে জাহাঙ্গীরেরও মৃত্যু হয়।
এছাড়া মো. জয়নাল (৪৫) নামে একজনকে মিটফোর্ড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সেখানকার জরুরি বিভাগের ব্রাদার শরাফত হোসেন।
দুর্ঘটনার পর বাস ও মাইক্রোবাসটি উদ্ধার করে পুলিশ হেফাজতে নিয়েছে।
দুর্ঘটনার পর ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে প্রায় আধাঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ ছিল বলে তিনি জানান।
ওসি বলেন, দুর্ঘটনার পর বাসের চালক ও তার সহকারী পালিয়ে গেছেন। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
এ ঘটনায় শ্রীনগরের হাঁসাড়া হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম জানিয়েছেন।
নিহতেদের লাশ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নিহত প্রত্যেকের জানাজা বাবদ ১০ হাজার টাকা আর আহতদের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
বিয়েবাড়ি হল শোকের বাড়ি
দুর্ঘটনার পর কনকশার গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, যার বিয়ে সেই রুবেল হোসেন নির্বাক হয়ে গেছেন। নির্বাক হয়ে গেছেন তার ভাই সোহেলও। এই দুর্ঘটনা সোহেলের স্ত্রী রুনা ও ছেলে তাহসিনকে কেড়ে নিয়েছে।
রুবেল স্থানীয় বাজারে একটি মুদি দোকান চালান বলে তার স্বজনরা জানান।
বরযাত্রীরা যাচ্ছিলেন দুটি মাইক্রোবাসে। পেছনে ছিলেন বর রুবেল, প্রতিবেশী নজরুল ইসলামসহ অন্যরা।
নজরুল সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা দুটি মাইক্রো নিয়ে বিয়ের কাবিন করতে যাচ্ছিলাম। পেছনের মাইক্রোয় ছিলাম বলে রুবেলসহ আমরা কয়জন প্রাণে বেঁচে গেছি।”
তদন্ত কমিটি
দুর্ঘটনা কারণ খুঁজতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আসমা শাহিনকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. মনিরুজ্জামান তালুকদার জানিয়েছেন।
কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন শ্রীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রহিমা আক্তার, এএসপি (হাইওয়ে) জিসানুল হক, বিআরটিএর সহকারী পরিচালক মঈদুল ইসলাম ও ষোলঘর ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুল ইসলাম।