তবে কাজী অফিস থেকে বিয়ের কোনো কাগজপত্র দেয়নি এবং কথিত ওই ধর্ষণকারী মেয়েটির পরিবারকে এলাকাছাড়া করার হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন মেয়েটির বাবা।
এ ব্যাপারে মেয়েটির বাবা গত রোববার (১৫ সেপ্টম্বর) পুলিশের রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি, লালমনিরহাট জেলা পুলিশ সুপার ও জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ দেওয়ার পর মাইনুল ইসলাম নামের ওই এসআইকে কর্মস্থল থেকে বদলি করা হয়েছে।
এছাড়া ধর্ষণের অভিযোগে শাহীন আলম (২৪) নামের এক যুবককে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। শাহীন সদর উপজেলার পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের উমাপতি হরনারায়ণ গ্রামের আফজাল হোসেনের ছেলে।
এসআই মাইনুল ইসলাম তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
পুলিশ সুপারের নির্দেশে বুধবার রাতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এসএম শফিকুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিনি ঘটনা তদন্ত করে পুলিশ সুপারের কাছে প্রতিবেদন দেবেন।
মেয়েটির বাবার লিখিত অভিযোগ হলো, তাদের এক প্রতিবেশীর বাড়িতে স্থানীয় কয়েকজন শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়াতেন শাহিন আলম। তখন তিনিও তার ৭ম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়েকে সেখানে প্রাইভেট পড়াতে দেন।
অভিযোগে বলা হয়, কিছুদিন পর শাহীন ওই শিক্ষার্থীকে প্রেমের প্রস্তাব দেন। কিন্তু মেয়েটি রাজি না হলে শাহীন তার মোবাইলে আগে গোপনে তোলা কয়েকটি ছবি দেখিয়ে হুমকি দেন যে যদি তার প্রস্তাবে রাজি না হয় তবে এসব ছবি এডিটিং করে খারাপ ছবি বানিয়ে ইন্টারনেটে ছেড়ে দেবেন।
এই ভয় দেখিয়ে প্রেম ও শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনে বাধ্য করেন ওই মেয়েকে। পরে মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা হলে গত ২৫ জুলাই তাকে কৌশলে লালমনিরহাট শহরের মেরিস্টোপ ক্লিনিকে নিয়ে গর্ভপাত ঘটান শাহীন। বিষয়টি জানাজানি হলে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের পরামর্শক্রমে মেয়েটির বাবা গত ১১ অগাস্ট সদর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন বলে অভিযোগে বলা হয়।
অভিযোগে আরও বলা হয়, সদর থানায় অভিযোগ দেওয়ার পর তা আমলে না নিয়ে ওই রাতেই থানার এসআই মাইনুল ইসলাম মেয়েটির বাড়ি গিয়ে মেয়েটিকে বলেন, ৫০ হাজার টাকা দিলে ছেলেপক্ষ বিয়েতে রাজি হবে।
এ ব্যাপারে মেয়েটির বাবা বলেন, নিরুপায় হয়ে এসআই মাইনুল ইসলামের প্রস্তাবে রাজি হয়ে সুদের উপর ৫০ হাজার টাকা যোগাড় করে ছেলেকে যৌতুক দিয়েছেন।
“২৩ অগাস্ট উপজেলার মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের কাজী শহিদুল ইসলামের বাড়িতে অফিসে বিবাহ রেজিস্ট্রি করা হয়। কিন্তু কনের বয়স কম হওয়ায় কাজী বিযের কাবিননামা সরবরাহ করেননি।”
মেয়েটির বাবা বলেন, এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে শাহীন আলম মেয়েটিকে বাবার বাড়িতে রেখে পালিয়ে যান এবং বিয়ে তালাক হয়ে গেছে বলে এলাকায় ছড়িয়ে দেন।
থানায় দেওয়া অভিযোগটি যদি মামলা হিসেবে নেওয়া হতো তাহলে তাদের এমন অবস্থায় পড়তে হতো না বলে মেয়েটির বাবা মনে করেন।
তবে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে কাজী শহিদুল ইসলাম বিয়ে রেজিস্ট্রি করার কথা অস্বীকার করেছেন।
মেয়েটির মা বলেন, “বাহে, গরিব বলি হামার কি মান-সম্মান নাই? হামাকগুলাক এলাকা ছাড়া করার হুমকি দেয়।”
মেয়েটি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এসআই মইনুল ইসলাম আমাকে বলেছিল তুমি জরিমানা চাও, নাকি বিয়ে চাও। তখন আমি বলেছিলাম আমি ওর শাস্তি চাই। কিন্তু এসআই মইনুল বিয়ের পরামর্শ দিয়েছিল বাবাকে।”
পঞ্চগ্রাম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ৬ নম্বর ওয়ার্ড যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক বলেন, “এটাকে বিয়ে বলা যায় না। বাল্য বিবাহ হয়েছে। বিয়ের কোনো কাগজপত্র নেই। দায়িত্বহীনতার কাজ হয়েছে।”
পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন বলেন, “আমি মেয়ের বাবাকে থানায় অভিযোগ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছি। যেহেত এটা ধর্ষণ ও অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়ের বিষয় তাই এটা আইনগতভাবেই সমাধান হওয়া উচিত বলেই আমি এ পরামর্শ দিয়েছি।”
লালমনিরহাট সদর থানার ওসি মাহফুজ আলম বলেন, “গতকাল লিখিত অভিযোগ পেয়েছি এবং পুলিশ সুপার বিষয়টি দেখার জন্য আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন। সেই মোতাবেক আজ ভোরে শাহীনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”
রাত পৌনে ১টার দিকে মেয়েটির বাবা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। গ্রেপ্তার শাহীনকে বিকালে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। মামলার অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানান ওসি।
লালমনিরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এসএম শফিকুল ইসলাম বলেন, পুলিশ সুপার তাকে ঘটনাটি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। তার নির্দেশে বুধবার রাতে তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। পরে তিনি পুলিশ সুপারের কাছে প্রতিবেদন দেবেন।
গত ২৯ অগাস্ট পাবনা সদর উপজেলার দাপুনিয়া ইউনিয়নের এক নারীকে তার প্রতিবেশী রাসেল আহমেদ এক সহযোগীসহ পালা করে ধর্ষণ করার দুদিন পর তাকে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অফিসে নিয়ে তিন দিন আটকে রেখে আরও চার-পাঁচজন পালা করে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ ওঠে।
পরে তিন সন্তানের জননী ওই নারী থানায় গেলে তার মামলা নথিভুক্ত না করে পুলিশ ওই রাতেই রাসেলের সঙ্গে তার বিয়ের ব্যবস্থা করে বলে ওই নারীর অভিযোগ।
এ ঘটনায় পাবনা সদর থানার ওসি ওবাইদুল হককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।