রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বৃহস্পতিবার শুরু হতে পারে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম।
Published : 22 Aug 2019, 12:06 AM
তিনি বলেন, সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। এরই অংশ হিসাবে বুধবার প্রত্যাবাসনের তালিকায় নাম থাকা ২১৪টি পরিবারের গৃহকর্তাদের মতামত নেওয়া সম্পন্ন হয়েছে।
“সবকিছু ঠিক থাকলে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টার মধ্যে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হতে পারে।”
আবুল কালাম বলেন, “আমরা গত দুইদিনে মোট ২৩৫টি পরিবারের প্রধানদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা অনেকে আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। তাই সকালের জন্য ৫টি বাস, ৩টি ট্রাক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আমরা এই পর্যন্ত যেসব রোহিঙ্গাদের সাথে কথা বলেছি, তারা প্রত্যেকে স্বেচ্ছায় নিজ উদ্যোগে আমাদের সাথে কথা বলতে এসেছে।
“এতে কাউকে জোর করে আনা হয়নি। এসব পরিবারে পরিবারের সংখ্যা, তাদের শর্তসমূহসহ বিভিন্ন তথ্য নিয়ে ডাটাবেজ প্রস্তুত করা হচ্ছে এবং রাতের মধ্যেই তালিকাটি প্রস্তুত করা হবে। এসব তালিকা থেকে সকালে যারা স্বেচ্ছায় গাড়িতে উঠবে তাদেরকেই প্রত্যাবাসন করা হবে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পুরো বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করার জন্য বাংলাদেশস্থ মিয়ানমারের দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা ও চীনা দূতাবাসের দুইজন কর্মকর্তা বর্তমানে কক্সবাজারে অবস্থান করছেন। তারা পুরো প্রক্রিয়াটি পর্যবেক্ষণ করবেন।
“সারাদিন তারা আমাদের সাথে থাকবেন বলে জানিয়েছেন।”
আবুল কালাম বলেন, “মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের আদিবাসী হিসেবে স্বীকার করে নিয়েছে। আমরা এই তথ্যটি রোহিঙ্গাদের জানিয়েছি। এছাড়াও মিয়ানমার সরকার দেওয়া ছাড়পত্র অনুযায়ী এক হাজার ৩৭টি পরিবারের মোট ৩ হাজার ৫৪০ জনকে ফেরত নেওয়ার প্রথম তালিকাটি দেওয়া হয়েছে। আমরা সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিচ্ছি। পর্যায়ক্রমে অন্যান্যদের এই প্রক্রিয়ায় আনা হবে। কারণ এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।”
প্রত্যাবাসনের প্রস্তুতি হিসেবে টেকনাফের কেরণতলী থেকে উখিয়া হয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি ঘুমধুম এলাকা পর্যন্ত নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এজন্য পুলিশ, র্যাবসহ অন্যান্য আইনশৃংখলা বাহিনীদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে তিনি জানান।
আজ কতজন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেসব রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন করা হবে, তাদের পুরো ডাটাবেজ তৈরির কাজ চলছে। রাতে এটি সম্পন্ন হবে। এটি সম্পন্ন হলে সকালে বিষয়টি পরিষ্কার করে জানা যাবে।
২০১৭ সালের অগাস্টে রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও তাদের সহযোগীদের হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন সহিংসতা ও নিপীড়ণের শিকার হয়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। এদের সঙ্গে রয়েছে ১৯৮২ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত নানা অজুহাতে নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচার জন্যে বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেওয়া অন্তত সাড়ে ৩ লাখ রোহিঙ্গা। সব মিলে বাংলাদেশে থাকা রোহিঙ্গার সংখ্যা ১১ লাখের বেশি।
এর ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালের জানুয়ারি রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে বাংলাদেশ-মিয়ানমার প্রত্যাবাসন চুক্তি সম্পন্ন হয়। একই বছরের ৬ জুন নেপিদোতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমার ও জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর মধ্যেও সমঝোতা চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী গত বছরের ১৫ নভেম্বর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। তবে আবারও হামলার মুখে পড়ার আশঙ্কায় রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফিরতে অস্বীকৃতি জানানোয় ব্যর্থ হয় ওই উদ্যোগ।
সর্বশেষ চলতি বছরের জুলাই মাসে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে নতুন করে উদ্যোগের অংশ হিসেবে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করে মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিব মিন্ট থোয়ের নেতৃত্বাধীন একটি প্রতিনিধি দল। ১৫ সদস্যের দলটি দুই দিন ধরে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলোচনা ও বৈঠক করে। এসব বৈঠকে রোহিঙ্গাদের তরফে ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে মিয়ানমারের নাগরিকত্ব ও চলাফেরায় স্বাধীনতার দাবি পুনর্ব্যক্ত করা হয়।