সেদিনের ভয়াবহ স্মৃতি মনে পড়লে এখনও দেহ অবশ হয়ে আসে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের এই নেত্রীর
Published : 21 Aug 2019, 11:06 AM
একুশ অগাস্টের ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার বিভৎস স্মৃতির সঙ্গে শরীরের ভেতরে শত শত স্লিন্টার নিয়ে যন্ত্রণায় দিন কাটাচ্ছেন ঢাকা জেলা (উত্তর) আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি মাহবুবা পারভীন।
রাজধানীর বুকে আওয়ামী লীগের প্রকাশ্য জনসভায় নৃশংসতম সেই হামলায় জড়িতদের বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক সাজা কার্যকর হওয়ার আগে মরতে চান না এই দুই সন্তানের জননী।
ওই হামলার বার্ষিকীতে আক্ষেপের সুরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, এতগুলো বছর শরীরে গ্রেনেডের স্প্লিন্টার দেহের মধ্যে নিয়ে আর্থিক ও মানসিক কষ্টে দিন তার দিন কাটলেও সাংসদসহ স্থানীয় নেতারা তার খোঁজ রাখেন না।
মাহবুবা বলেন, “২১ অগাস্ট এলেই, সেদিনের ভয়াবহ স্মৃতি মনে পড়লে এখনও আঁতকে উঠি; ওই দৃশ্য চোখে ভাসে; দেহ অবশ হয়ে যায় তাই। সেই স্মৃতিচারণ আর করতে চাই না।”
২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে সন্ত্রাসবিরোধী জনসভায় বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলার পর আইভি রহমানের পাশে যে তিনজন মহিলা রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে ছিলেন তাদেরই একজন সাভারের মাহবুবা পারভীন।
মৃত ভেবে তাকে মর্গে রাখা হয়েছিল। ঘটনার প্রায় ৬ ঘণ্টা পর স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আশীষ কুমার মজুমদার লাশ সনাক্ত করতে গিয়ে মাহবুবাকে জীবিত দেখতে পান।
ওই হামলায় ২৪ জন নিহত এবং কয়েকশ আহত হন। সমাবেশে উপস্থিত বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও ক্ষতিগ্রস্ত হয় তার শ্রবণশক্তি। মাহবুবার উন্নত চিকিৎসার জন্য শেখ হাসিনা তাকে কলকাতায় পিয়ারলেস হাসপাতালে পাঠান।
হাসপাতাল থেকে তাকে জানানো হয়েছিল, শরীরে রয়েছে ১৮শ স্লিন্টার। এর মধ্যে মাথার দুটি তাকে অনবরত যন্ত্রণা দিয়ে যাচ্ছে। মাঝে মধ্যেই তিনি পাগলের মতো হয়ে যান। এরই মধ্যে তার পা থেকে দুটি স্প্লিন্টার বের করা হয়েছে।
এ ঘটনায় করা মামলায় বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে তদন্ত ভিন্ন খাতে প্রবাহিতের চেষ্টার পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে জঙ্গিনেতা মুফতি আব্দুল হান্নানসহ ২২ জনকে আসামি করে মামলার অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি।
দুই বছর পর ২০০৯ সালে মামলার অধিকতর তদন্তের আদেশ হলে আরও দুই বছর সময় নিয়ে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেন সিআইডি কর্মকর্তা আবদুল কাহার আকন্দ।
সম্পূরক অভিযোগপত্রে খালেদা জিয়ার ছেলে তারেকসহ ৩০ জন আসামির তালিকায় যোগ হন। সব মিলিয়ে আসামির সংখ্যা সাত পুলিশ কর্মকর্তাসহ দাঁড়ায় ৫২ জনে।
এর মধ্যে জামায়াত নেতা আলী আহসান মো. মুজাহিদ, জঙ্গিনেতা মুফতি হান্নান ও বিপুলের অন্য মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ায় আসামি কমে আসে ৪৯ জনে।
এই ৪৯ জনের মধ্যে ১৯ জনের ফাঁসি, ১৯ জনের যাবজ্জীবন, ১১ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডের রায় হয় ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর।
২০১৬ সলের ১৫ নভেম্বর তার স্বামী ফ্লাইট সার্জেন্ট এম এ মাসুদের মৃত্যুর পর দুই ছেলেকে নিয়ে শেখ হাসিনার দেওয়া ফ্লাটে থাকেন মাহবুবা।
প্রধানমন্ত্রী প্রতি মাসে চিকিৎসা খরচের জন্য ১০ হাজার টাকা ও এককালীন ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র দিয়েছেন তাকে। তার বড় ছেলে আসিফ পারভেজ বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করেন, ছোট ছেলে রোওশাদ যোবায়ের আর্কিটেক্ট।