কিশোরগঞ্জে ২ তরুণী হত্যায় দুইজনের মৃত্যুদণ্ড

একই সঙ্গে দুই তরুণীকে অপহরণ ও হত্যার মামলায় এক পুলিশ কনস্টেবলসহ দুইজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে কিশোরগঞ্জের একটি আদালত। এছাড়া আরও ছয়জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে।

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Feb 2019, 01:47 PM
Updated : 17 Feb 2019, 01:47 PM

কিশোরগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক কিরণ শংকর হালদার রোববার এ মামলার রায় দেন।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুজন হলেন পুলিশ কনস্টেবল নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার মনিরুজ্জামান মনির ওরফে হলুদ ওরফে সুজন ও ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার ব্যবসায়ী শামীম হাওলাদার ওরফে জহির।

তাদেরকে অতিরিক্ত সাজা হিসেবে চৌদ্দ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ডও দেওয়া হয়।

এ দুজনের মধ্যে শামীম হাওলাদারকে এক লাখ টাকা এবং  মনিরুজ্জামান মনিরকে বিশ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড অনাদায়ে উভয়কে আরও ছয়মাস করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

এছাড়া দিলবর হোসেন, জয়নাল আবেদীন, মোস্তফা মীর রানা, বাবুল মিয়া, আবুল হোসেন ও কবীর হোসেন শান্তকে চার বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা করে জরিমানা দেওয়া হয়। জরিমানা অনাদায়ে আরও ছয় মাস করে বিনাশ্রম কারাভোগ করতে হবে।  

শেষের ছয় আসামি সবার বাড়ি নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায়। তারা ঢাকায় কারওয়ান বাজারে একটি আবাসিক হোটেলের কর্মচারী ছিলেন। 

রায় ঘোষণার সময় দিলবর হোসেন, জয়নাল আবেদীন ও মোস্তফা মীর রানা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুইজনসহ বাকি পাঁচ আসামি জামিনে গিয়ে পলাতক হওয়ায় অনুপস্থিত ছিলেন।

মামলার নথি থেকে জানা যায়, ২০০৮ সালের ১৫ জুলাই কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের বাসিন্দা দুই বান্ধবী আফরোজা আক্তার সুমী (১৯) ও আফরোজা আক্তার উর্মি (২১) বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফেরেননি।

খোঁজাখুঁজির পর না পেয়ে সুমীর বাবা আবু বাক্কার ২২ জুলাই কিশোরগঞ্জ মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন এবং ঢাকায় র‌্যাব সদরদপ্তরে লিখিত অভিযোগ জমা দেন।

এরপর ২০০৮ সালের ২১ সেপ্টেম্বর তিনি আবার কিশোরগঞ্জ মডেল থানায় হত্যাসহ অপহরণের মামলা করেন।

পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, মোবাইল ফোনের কল রেকর্ডের সূত্র ধরে প্রথমে ঝালকাঠি থেকে শামীম হাওলাদার ওরফে জহিরকে ও পরে ময়মনসিংহ থেকে পুলিশের কনস্টেবল মনিরুজ্জামান মনিরকে আটক করে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে ২০০৯ সালের ১২ ডিসেম্বর উভয় আসামি হত্যার কথা স্বীকার করে ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দেন এবং ঘটনায় জড়িত বাকিদের কথাও পুলিশকে জানান।

তদন্ত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মোবাইল ফোনে আলাপের সূত্র ধরে কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের বাসিন্দা ও দুই বান্ধবী আফরোজা আক্তার সুমী ও আফরোজা আক্তার উর্মির সঙ্গে মনিরুজ্জামান মনির ও শামীম হাওলাদার ওরফে জহিরের ঘনিষ্ঠতা হয়।

এ ঘনিষ্ঠতার সূত্রে মনির ও শামীম ২০০৮ সালের ১৫ জুলাই কিশোরগঞ্জ এসে সুমী ও উর্মিকে কৌশলে ঢাকা নিয়ে যান। পরে ঢাকায় কারওয়ান বাজারের হোটেল ওয়েস্টার্ন গার্ডেনের কক্ষে শ্বাস রোধে হত্যা করেন। পরে দুই লাশ দুটি সব্জির ঝুড়িতে ভরে একটি ঝিলের পানিতে এবং অপর ঝুড়ি তেজগাঁও রেল গেটের পাশের ডাস্টবিনে ফেলে দেন।

দুদিন পর পুলিশ এফডিসির কাছের ঝিল থেকে উর্মি এবং তেজগাঁও ট্রাক স্ট্যান্ড সংলগ্ন রেল গেটের কাছ থেকে থেকে সুমির লাশ উদ্ধার করে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কিশোরগঞ্জের ওসি (ডিবি) আমজাদ হোসেন ২০১০ সালের ২৯ এপ্রিল আটজনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন নারী ও শিশু দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর পিপি এম এ আফজল জানান, হত্যা ও অপহরণের পৃথক অপরাধের কারণে মূল দুই আসামিকে ফাঁসির পাশাপাশি চৌদ্দ চৌদ্দ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

আসামিপক্ষে অ্যাডভোকেট সাইফুল হক সাজন ও অ্যাডভোকেট সিরাজ উদ্দিন মামলা পরিচালনা করেছেন।