কসবা সীমান্তের ৩১ রোহিঙ্গাকে ‘নিয়ে গেছে’ বিএসএফ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা সীমান্তের শূন্য রেখায় তিন ধরে আটকে থাকা ৩১ রোহিঙ্গাকে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের সদস্যরা নিয়ে গেছে বলে জানিয়েছে বিজিবি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি ওবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Jan 2019, 08:19 AM
Updated : 22 Jan 2019, 04:30 PM

২৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফট্যানেন্ট কর্নেল মুহাম্মদ গোলাম কবির মঙ্গলবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সকাল ৭টার দিকে গোপীনাথপুর ইউনিয়নের কাজিয়াতলী সীমান্তের শূন্যরেখা থেকে বিএসএফ সদস্যরা ওই রোহিঙ্গাদের নিয়ে যায়।

তবে এ বিষয়ে বিএসএফের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। ওই রোহিঙ্গাদের কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে সে বিষয়েও কিছু জানা যায়নি।

ভারত সরকার সে দেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের বিতাড়ণের উদ্যোগ নেওয়ার পর মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা এই জনগোষ্ঠীর সদস্যরা বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করে।     

তাদেরই একটি দলকে গত ১৮ জানুয়ারি সন্ধ্যায় কসবার কাজিয়াতলী সীমান্তের ২০২৯ নম্বর পিলারের কাছে কাঁটাতারের বেড়ার একটি পকেট গেইট দিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করে বিএসএফ।

ওই সময় বিজিবি বাধা দিলে রোহিঙ্গাদের দলটি শূন্যরেখায় অবস্থান নিতে বাধ্য হয়। সেই থেকে শীতের মধ্যে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছিল ১৭ শিশুসহ ৩১ রোহিঙ্গার ওই দলটি।

ভারতীয় সীমান্তরক্ষীরা আটকা পড়া এই রোহিঙ্গাদের জন্য মাঝেমধ্যে খাবারের ব্যবস্থা করলেও শীতের কারণে শিশুগুলো অসুস্থ হয়ে পড়ছে বলে রোববার সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন কসবা উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এসএম মান্নান জাহাঙ্গীর।

এদিকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র দাবি করেছেন, রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের সীমান্তে অবস্থান নেওয়ার বিষয়ে তার দেশের সরকারের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

তিনি নয়া দিল্লিতে সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসায় বলেন, ত্রিপুরা সীমান্তের শূন্য রেখায় মিয়ানমার থেকে আসা ৩১ জনের অবস্থান নেওয়ার বিষয়টি নয়া দিল্লির জানা আছে। তবে এখানে ভারত সরকার কোনো পক্ষ নয়।  

“এই ধরনের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।”

 ওই ৩১ জনের পরিচয় যাচাইয়ের সময়টাতে তাদের খাদ্য, আশ্রয় দেওয়ার জন্য সীমান্ত রক্ষা বাহিনীকে বলা হয়েছে বলে জানান ভারতের ওই কর্মকর্তা।

রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রোহিঙ্গাদের ওই দলটির অধিকাংশই ভারতের জম্মু ও কাশ্মিরে আশ্রয় নিয়ে ছিলেন। ভারতে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের দেওয়া শরণার্থী পরিচয়পত্রও তাদের কারও কারও কাছে ছিল। 

এ নিয়ে শনি ও রোববার দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে কয়েক দফা পতাকা বৈঠক হলেও তাতে কোনো সমাধান আসেনি। তবে মঙ্গলবার কোনো ঘোষণা ছাড়াই বিএসএফ ওই রোহিঙ্গাদের শূন্য রেখা থেকে সরিয়ে নিয়ে যায়। 

বিএসএফ যেন রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ঢোকাতে না পারে সেজন্যে সীমান্তে সতর্কতা বাড়ানো হয়েছে বলে বিজিবি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।  

২০১৭ সালের ২৫ অগাস্ট মিয়ানমারের রাখাইনে নতুন করে সেনা অভিযান শুরুর পর এ পর্যন্ত সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের কক্সবাজারের কুতুপালংসহ বিভিন্ন ক্যাম্পে রাখা হয়েছে।

এর বাইরে গত কয়েক দশকে বাংলাদেশে আসা আরও প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গার ভার বহন করে চলেছে বাংলাদেশ।

ভারত সরকার রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নিলে সেখান থেকেও রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসতে শুরু করে। গত দেড় মাসে ভারত থেকে আসা এরকম ১৩ শতাধিক রোহিঙ্গাকে কক্সবাজারে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে।