কালবৈশাখী ঝড়ে রাজশাহীতে চারজন নিহত হয়েছেন; পদ্মায় নৌকা ডুবে চার জনসহ নিখোঁজ রয়েছেন ছয়জন।
Published : 01 May 2017, 12:00 PM
রোববার সন্ধ্যা ৭টা থেকে পৌনে এক ঘণ্টা ধরে রাজশাহীর ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া এই ঝড়ে জেলার বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
নিহতরা হলেন নগরীর বোয়ালিয়ার সপুরা এলাকার আজিজুল ইসলামের ছেলে ফরিদুল ইসলাম (৪৮), মতিহারের বেলঘরিয়ার হারুন অর রশিদের ছেলে মুনছুর রহমান (৪০), চারঘাট উপজেলার বেলঘরিয়া শ্যামপুর গ্রামের আনসার আলীর স্ত্রী আছিয়া বেগম (৪৫) ও গোদাগাড়ীর কাকনহাট পৌরসভার কলাবাগানের আলম আলী মুন্সি (৫০)।
নৌকাডুবিতে নিখোঁজরা হলেন নগরীর দরগাপাড়া এলাকার সারোয়ার হোসেন রফিক (৪৫), রবিন (২৮), খানপুরের আসাদুল (৪৫) ও আসাদুলের শ্যালক রাসেল। অপর দুজন হলেন স্থানীয় মাদ্রসাছাত্র আবুল আহাদ (৯) ও তামিম (৯)।
এএসআই শফিক জানান, চারঘাট উপজেলার বেলঘরিয়া শ্যামপুর গ্রামের আনসার আলীর স্ত্রী আছিয়া বেগম ঝড়ের সময় গাছের ডাল পড়ে আহত হন। হাসপাতালে আনার পর তার মৃত্যু হয়।
“নগরীর মতিহারের বেলঘরিয়া এলাকার হারুন অর রশিদের ছেলে মুনছুর রহমান ঝড়ের সময় দৌড়ে বাড়ি ফেরার সময় রাস্তার উপর পড়ে আহত হন। হাসপাতালে আনার পর জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।”
এছাড়া নগরীর বোয়ালিয়ার সপুরা এলাকার আজিজুল ইসলামের ছেলে ফরিদুল ইসলাম বজ্রপাতে মারা গেছেন বলে জানান এএসআই শফিক।
“ঝড়ের সময় বজ্রপাতে অসুস্থ হয়ে পড়েন ফরিদুল ইসলাম। হাসপাতালে ভর্তির পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১টার ১০ মিনিটে তার মৃত্যু হয়।”
গোদাগাড়ী থানার ওসি হিফজুল আলম মুন্সী জানান, ঝড়ের সময় গাছের ডাল ভেঙে পড়ে আহত হন কাকনহাট পৌরসভার কলাবাগান এলাকার আলম আলী মুন্সি। পরে স্থানীয় স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
বোয়ালিয়া থানার ওসি শাহাদত হোসেন খান বলেন, পদ্মার মাঝের চর থেকে ছোট একটি নৌকায় করে নগরীর বড়কুঠি ঘাটে ফেরার পথে ঝড়ের কবলে পড়েন ছয়জন। তাদের মধ্যে দুজন সাঁতরে কূলে উঠলেও চারজন নিখোঁজ থাকেন।
তিনি আরও বলেন, রোববার বিকালে শাহ মখদুম ইসলামিয়া মাদ্রাসার দুই ছাত্র আবুল আহাদ ও তামিম নিখোঁজ হলে তাদের খুঁজতে গিয়ে নৌকাডুবিতে পড়েন ওই ছয়জন। এখন ওই দুই ছাত্রসহ মোট ছয়জন নিহখোঁজ আছেন।
স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানান, ঝড়ে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় গাছপালা ভেঙে পড়েছে। তার ছিঁড়ে বিদ্যুৎহীন রয়েছে কয়েকটি এলাকা। ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ বিতরণ হয়েছে বলেও জেলা প্রশাসন জানিয়েছে।
জেলা প্রশাসক কাজী আশরাফ উদ্দিন বলেন, “জেলার নয় উপজেলায় সবগুলোতেই কম বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোতে ত্রাণ দেওয়া শুরু হয়েছে।”
পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুদ রয়েছে। পর্যাক্রমে ক্ষতিগ্রস্ত সবাইকে ত্রাণ দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম জানান, রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত জেলায় ৪৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছেন তারা।
বাগমরা উপজেলার গোয়ালকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আবেদ আলী বলেন, “ঝড়ে পুরো এলাকা লন্ডভন্ড হয়েছে। উড়ে গেছে শতশত বাড়ির চাল; ভেঙে পড়েছে হাজার হাজার গাছ।”
পিডিবির সহকারী প্রকৌশলী শাহীন হোসেন জানান,রাজশাহীর কাটাখালিতে ৩৩ কিলোওয়াট সংযোগ লাইনের ওপর বিলবোর্ড ভেঙে পড়েছে। এতে গ্রিডের সংযোগ লাইনের তার ছিঁড়ে যায়।
এছাড়া নগরের বিনোদপুর, তালাইমারী ভদ্রাসহ অন্তত ১০/১২টি এলাকা তার ছিঁড়ে বিদ্যুৎহীন রয়েছে। সেগুলোতে মেরামতের কাজ চলছে বলে জানান তিনি।