কলকাতায় ক্যান্সারের চিকিৎসা নিতে গিয়ে মারা যাওয়া একমাত্র ছেলের মরদেহ আনার সময় কফিনের পাশেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন বাবা।
Published : 18 Apr 2017, 06:27 PM
সোমবার সন্ধ্যায় বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্টের বিপরীতে ভারতের পেট্রাপোল চেকপোস্টে এ ঘটনা ঘটে।
মঙ্গলবার বিকালে চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন পুলিশের এসআই ফজলুর রহমান জানান, সকালে ছেলের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাবার মরদেহ আনার জন্য আইনি প্রক্রিয়া চলছে।
মৃত রফিক মন্ডল গাজীপুর নগরীর ৩ নম্বর ওয়ার্ডের গোবিন্দবাড়ির গ্রামের বাসিন্দা। তার ছেলে আসাদ মন্ডল (১৪) স্থানীয় একটি স্কুলের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র ছিল।
বেনাপোল চেকপোস্টে দুজনের মরদেহ নিতে আসা প্রয়াত রফিক মন্ডলের চাচা খন্দকার আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, রফিক তার একমাত্র ছেলেকে বাঁচাতে দেশে আপ্রাণ চেষ্টা করছিলেন। জমিজমা বিক্রি করে চিকিৎসকদের পরামর্শমতো চার মাস ধরে ছেলের পেছনে অর্থ খরচ করেছেন। চিকিৎসকরাও ছেলে সুস্থ হয়ে উঠবে বলে আশ্বস্ত করেছিলেন। কিন্তু দিন দিন ছেলের অবস্থা খারাপের দিকে যাওয়ায় স্বজনদের পরামর্শে গত ১৪ এপ্রিল তাকে ভারত নিয়ে যান।
খন্দকার আলী জানান, কলকাতার একটি বেসরকারি নার্সিং হোমে ভর্তির পর ডাক্তাররা তাকে বাঁচানোর কোনো সুযোগ নেই বলে জানান। এরপর সোমবার (১৭ এপ্রিল) তাকে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন বাবা রফিক ও মা আরমা বেগম।
“ওইদিন পথেই মারা যায় আসাদ।”
আলী আরও জানান, এরপর রফিক ও আরমা আবার কলকাতা ফিরে গিয়ে সরকারি নিয়ম অনুসারে পাসপোর্টের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে ছেলের মরদেহ নিয়ে সন্ধ্যায় পেট্রাপোল চেকপোস্টে পৌঁছান।
“বাংলাদেশে ঢোকার আগ মুহূর্তে পেট্রাপোল চেকপোস্টে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ছেলের কফিনের পাশেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন রফিক।”
ছেলে ও স্বামীকে হারিয়ে ভেঙে পড়েছেন আরমা বেগম। বিলাপ করতে করতে তিনি বলেন, “ছেলের শোকেই ওর বাবা চলে গেল। ছেলেকে ভীষণ ভালোবাসত সে।”
স্বজনদের আহাজারিতে বেনাপোলে সাধারণ মানুষের চোখও ভিজে ওঠে।